সারাবাংলার কাছে প্রত্যাশা অনেক, চট্টগ্রাম অফিস আড্ডায় সাংবাদিকরা
১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৩১
||স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট||
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অনলাইন নিউজপোর্টাল সারাবাংলা.নেটকে এগিয়ে নিতে পেশাদারিত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাধ্যমের জেষ্ঠ্য কর্মীরা। তারা বলেছেন, যাত্রার শুরু থেকে সারাবাংলা নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি করতে পেরেছে। এখন সংবাদমাধ্যমটিকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সিনিয়র সংবাদকর্মীরা রোববার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর এস এস খালেদ রোডে কর্ণফুলী টাওয়ারের দশম তলায় সারাবাংলা কার্যালয়ে এক ঘরোয়া আড্ডায় মিলিত হন।
সারাবাংলার নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এই আড্ডা কর্মসূচি ও কেক কাটার মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু হয় সারাবাংলার চট্টগ্রাম কার্যালয়ের।
আড্ডার শুরুতে সারাবাংলাকে নিয়ে স্বপ্নের কথা সবার সামনে তুলে ধরলেন মাহমুদ মেনন খান। তিনি বলেন, দেশ অনলাইন গণমাধ্যম যেভাবে চলছে, তাতে একটি মূলধারার অনলাইন নিউজপোর্টাল পরিচালনা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে অনেক উটকো বিষয় ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যম এসব বিষয় কিভাবে ডিল করবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মাহমুদ মেনন বলেন, আমাদের দেশে এখনও সচেতন পাঠক সমাজ তৈরি হয়নি। এর দায় গণমাধ্যমেরও আছে। রাষ্ট্রেরও আছে।’
সংবাদের প্রচার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সারাবাংলা.নেট চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেকেন্ড সিটি হিসেবেই চট্টগ্রামকে আমরা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী সকল পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চাই।
আপনারা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ সাংবাদিক সারাবাংলা’র অগ্রযাত্রায় আপনাদের পাশে পেয়েছি, আপনাদের মতামতের মূল্য আমাদের কাছে অনেক বেশি, চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন মাহমুদ মেনন।
একুশে টেলিভিশনের আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন সিস্টেম হয়ে আছে যে, কোন বিষয় জনপ্রিয়তা পেলে সেটাকে পচিয়ে ছাড়বে মানুষ। অতিব্যবহারের মাধ্যমে সেই পচন তৈরি হয়। যেমন অনলাইন মিডিয়া। এটার এমন অপব্যবহার হচ্ছে যে, অসত্য খবরের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ, সত্য সংবাদ কোনটা সেটা নিয়ে এখন বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হয়। টেলিভিশন মিডিয়াগুলোও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এক হিরো আলমকে নিয়ে যেভাবে মাতামাতি হচ্ছে, খুব দুঃখজনক, বলেন তিনি। এক্ষেত্রে সত্য ও নির্ভুল তথ্য প্রচার করে পাঠকের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার কোন বিকল্প নেই,’ বলেন রফিকুল বাহার। তিনি বলেন, সারাবাংলা পাঠকের মধ্যে এই প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলতে পেরেছে। এখন তাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ব্যক্তিবিশেষ কিংবা মহলের উদ্দেশ্য সাধন না করে গণমাধ্যমের মূল চরিত্র নিয়ে এগিয়ে গেলে সারাবাংলা দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনলাইন পত্রিকায় পরিণত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
‘অনেক পত্রিকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থাকে। সেটা থাকতেই পারে। পাকিস্তান আমলেও ছিল। স্বাধীন দেশেও ছিল। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গী যদি রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তিবিশেষের আদর্শে পরিণত হয়, তখন সেই গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়। সারাবাংলা খুবই পরিচ্ছন্ন এবং দৃষ্টিনন্দন। সংবাদ পরিবেশনেও সতর্কতা অবলম্বন করে। সাবধান থাকতে হবে যাতে সহজ প্রচারের জন্য সহজ কোন কৌশল সারাবাংলা অবলম্বন না করে।’ বলেন রিয়াজ হায়দার।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মাঈনুদ্দিন দুলাল বলেন, সারাবাংলা আমি নিয়মিত পড়ি। অনেক নিউজই সারাবাংলাতে দ্রুত পাওয়া যায়। এটা ভালো দিক। চট্টগ্রামের সংবাদকে সারাবাংলা গুরুত্ব দেয়। এটাও ভালো দিক। এছাড়া ভিন্নধর্মী বিভিন্ন কনটেন্ট পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে আমি সারাবাংলা এগিয়ে যাবে, এটাই দেখতে পাচ্ছি।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি হাসান ফেরদৌস বলেন, চট্টগ্রাম অনেক বড় শহর। বাংলাদেশের দ্বিতীয় নগরী, বন্দরনগরী। চট্টগ্রামে অনেক ক্ষেত্র আছে, যেগুলো থেকে প্রতিদিন ভালো ভালো খবর দেওয়া সম্ভব। সারাবাংলা যদি সেই খবরগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থাৎ চট্টগ্রামকে ব্র্যান্ডিং করার কাজটা ভালোভাবে করে, আমার মনে হয় সারাবাংলার অগ্রযাত্রাটা শুভ হবে।
গাজী টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান অনিন্দ্য টিটো বলেন, সারাবাংলা.নেট গাজী গ্রুপের নতুন উদ্যোগ। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রুপের একটি মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করে আসছি। আশা করি সারাবাংলা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই কাজ করে যেতে পারবে।
সারাবাংলায় প্রবাসের খবরকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রচারের পরামর্শ দেন জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রবাসের পাঠকের চাহিদার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ তারাও অনেক সিরিয়াস পাঠক।
অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালা হওয়া জরুরি বলে মনে করেন চ্যানেল-২৪ এর আঞ্চলিক প্রধান কামাল পারভেজ। তিনি বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমটা যদি নীতিমালার মধ্যে আসে, তাহলে সারাবাংলার মতো পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করতে চাওয়া ইন্টারনেট পত্রিকাগুলোর এগিয়ে যাওয়া আরও সহজতর হবে।
আড্ডায় আরও সঙ্গ দেন সময় টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান কমল দে, ডেইলি স্টারের ব্যুরো প্রধান তুষার হায়াৎ, কালের কন্ঠের রিপোর্টিং ইনচার্জ শিমুল নজরুল, দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান সরোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বিডিনিউজের ব্যুরো প্রধান মিন্টু চৌধুরী ও ডেইলি সানের ব্যুরো প্রধান নুরউদ্দিন আলমগীর।
সারাবাংলা/আরডি/এমএম