Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হিবা-শাহারিয়ার মাউন্ট ইয়ানাম জয়ের গল্প


১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৮

।। হাবিবুর রহমান ।।

পর্বত মানেই স্বপ্ন। আর সে স্বপ্ন মানেই তার চূড়ায় গিয়ে যেন গোটা পৃথিবীকে দেখা। কিন্তু চাইলেই কি তা করা যায়! তবে পর্বতের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক, তার টানেই মানুষকে ফিরে ফিরে যেতে হয় পর্বতের কাছে। কেউ কেউ জয় করেন পর্বতকে। আর নানা প্রতিকূলতার মাঝেও পর্বতজয়ীদের তালিকায় পিছিয়ে নেই নারীরাও। হিবা শেহরিন আর শাহারিয়া সম্পার কাছে সেই গল্পই শোনা গেল, কেমন করে তারা জয় করেছেন মাউন্ট ইয়ানাম।

বিজ্ঞাপন

১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। এই দিনটিতেই পর্বতজয়ের অভিজ্ঞতা জানা গেল দুই নারীর হিবা শেহরিন আর শাহারিয়া সম্পার কাছে। তবে এই উদ্যোগে ছিলেন ২০ জন তরুণ অভিযাত্রী। তাদের নিয়ে এ বছর বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিজম সোসাইটি (ব্যাটস) ভারতের ৬ হাজার ১১১ মিটার উচ্চতার মাউন্ট ইয়ানাম পর্বত বিজয়ের মিশন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

কিন্তু এই অভিযান কি সহজ ছিল? বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিসম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী রাজীব বলেন, কোনো পর্বত জয় করাই সহজ নয়। তবে এই তরুণ অভিযাত্রীদের নিয়ে এভারেস্টও জয় করা সম্ভব। আর ইয়ানাম জয় দিয়ে তার যাত্রাই শুরু হলো।

পর্বত আরোহণ মানেই ভয়, চ্যালেঞ্জ, সাহস আর উদ্যমের গল্প। সেই গল্প বলতে গিয়ে হিবা আর শাহরিয়া বলছেন, নারীরা সব ধরনের কাজেই বাধার মুখে পড়েন। পাহাড় আরোহণ তো আরও বেশি চ্যালেঞ্জের কাজ। তবে পরিবারের সাহায্য পেয়েছেন বলেই সেই বাধা পেরিয়েই পাহাড় জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন।

হিবা শেহরিন বলেন, সিলেট থেকে কালা পাহাড় আর হামহাম ঝরনা দিয়ে তার ট্র্যাকিংয়ের শুরু ২০১৬ সালে। বান্দরবানেও ট্র্যাকিং করেছেন তিনি। এরপরই ইয়ানাম পর্বত জয় করলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ইয়ানাম পর্বত জয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রায় কোনো শীতের কাপড় ছাড়াই আমাদের রাখা হয়েছিল। এছাড়া পাহাড়ে ওঠানামার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এই অভিযানে ২০ জন অভিযাত্রীর প্রত্যেকেই বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছে। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে।

ট্র্যাকিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওপরে ওঠার সময় হঠাৎ বুঝতে পারি, কোনোভাবেই শ্বাস নিতে পারছি না। মনে হচ্ছিল পিছনে ঘুরতেই পড়ে যাব। কিন্তু অন্য সদস্যদের সাহায্যে এবং চাইনিজ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে সামিট শেষ করি।

হিবা বলেন, এত উঁচু পর্বতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। কিন্তু পাহাড়ের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু ২০১৪ থেকেই। ইয়ানাম পর্বত জয়ের এই অর্জন আমাকে শিখিয়েছে। আমি আরও অনেক উঁচু পর্বতও জয় করার মানসিক ক্ষমতা রাখি।

পর্বত আরোহণের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল পাহাড়ের প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। তবে সব চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছি, যখন ভেবেছি সবার সঙ্গে সফলভাবে চূড়ায় পৌঁছাতে পারব তো? তবে পাহাড়কে ভালোবাসতে পারার ক্ষমতাটাই আসলে পাহাড়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি তৈরি করে। আর এই মানসিক শক্তিই নিজেকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।

ইয়ানামজয়ী আরেক অভিযাত্রী শাহারিয়া সম্পা বলেন, পাহাড় আর বরফ আমাকে সব সময়েই একটু বেশি টানে। আর এই সংমিশ্রণের যে সৌন্দর্য, তা প্রকাশ করা বেশ কঠিন। ভারতপুর থেকে যখন আমরা ক্যাম্প ১-এর পথে অভিযান শুরু করি, তখন ছিল সকাল। আমরা সবাই জানতাম যে এই পথে আমাদের ঝিরি অর্থাৎ একটি বরফের খাল পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু তখনই বিপদ! দেখলাম পানির স্রোত আমাদের চিন্তার থেকে অনেক বেশি। কারণ, সেদিন সূর্যের তাপে বরফ বেশি গলেছে। তাই স্রোতের এই ভয়াল অবস্থা।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমরা পাথরের ওপরই আমাদের ক্যাম্প করি। কিন্তু দিনটি ছিল চ্যালেঞ্জের। কারণ একে খোলা জায়গা, তার ওপর অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল অসম্ভব কম। কিন্তু এমন অনেক বিপদকে নিয়েই আমাদের এই জয়ের অভিযান শেষ হয়।

সারাবাংলা/টিআর

ইয়ানাম পর্বত পর্বতজয়ী দুই নারী শাহারিয়া সম্পা হিবা শেহরিন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর