মেয়ে, চাকরি আগে নাকি বিয়ে আগে?
১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:০৮
তিথি চক্রবর্তী।।
আরিফা ইয়াসমীন নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছেন। অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। ইচ্ছা আছে শিক্ষকতা পেশায় যাওয়ার। দুই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা দেওয়ার পর চাকরি না হওয়ায় আরেকটি মাস্টার্স করার জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আরিফা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। আরিফা জানান, তার পরিবার একজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলেটির সাথে ফোনে কয়েকদিন কথা হয় আরিফার। সে জানায় বিদেশে পড়ার ইচ্ছার কথা। কিন্তু ছেলেটি বলে, এখানে বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির জন্য পড়াশুনা চালিয়ে যেতে।
আরিফা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো। এই স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রথম বর্ষ থেকে। এজন্য সবসময় রেজাল্ট ভাল রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষবেলায় এমন জটিলতা সৃষ্টি হবে তা কখনও ভাবতেও পারিনি।’
পড়াশুনা শেষে বিয়ে নাকি চাকরি? নাকি পড়াশুনা শেষ করার আগেই বিয়ে?
এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বগুলো প্রায় প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনেই আসে। একদিকে পরিবার কিংবা সমাজের চাপ, অন্যদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। আবার অনেক মেয়ে পড়াশুনা শেষ করার আগেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কখনও নিজের ইচ্ছায়, কখনও পরিবারের চাপে। এই ধরনের জীবন জটিলতা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই, ছেলেদের এসব নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। কারণ ছেলে রোজগার করলে তবেই বিয়ের উপযুক্ত মনে করা হয়। তাহলে মেয়েদের বেলায় এর উল্টোটা হয় কেন? এর পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মনঃস্তত্ত্ব ও সামাজিক বাধ্যবাধকতাগুলো কি দায়ী নয়?
মেয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক চাপ কেমন?
স্রোতের অনুকূলে সাঁতার কাটতে পারা যতটা সহজ, প্রতিকূলে ঠিক ততটাই কঠিন। তেমনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতিনীতি কিংবা সংস্কারগুলোর পক্ষের ভাবনাগুলো সহজ ও স্বাভাবিক হলেও এর বিপরীতমুখী চিন্তাগুলো থাকে ততটাই কঠিন। ফলে সমাজের চোখে যা বাস্তব সত্য ও জীবনমুখী, একজন নারীর জীবনে সেটাই হয় কষ্টের ও অবদমনের।
বিয়ের সার্বজনীন কোন সংজ্ঞা নেই। একেকজনের জীবনে বিয়ে ব্যাপারটি তাই একেক রকম। তবে সমাজে যেহেতু নারী পুরুষকে ভিন্নভাবে দেখা হয়, ফলে বিয়ের ক্ষেত্রেও এই পার্থক্য থাকে। এ কারণে মেয়ের বিয়ের বয়স যখন পার হচ্ছে বলে তোলপাড় শুরু হয়, তখন ছেলের বিয়ের কথা হয়ত কারও মনেও আসে না!
ছেলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পর বিয়ে করবে। এর কারণ স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর। তাছাড়া সংসারের আর্থিক দায়িত্ব পালন করে ছেলে। তাই একই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ততা দুইভাবে নির্ধারিত হয়।
যে মেয়েরা চাকরি করে বিয়ে করার কথা ভাবেন তাদের অনেক ধরনের সামাজিক চাপে পড়তে হয়। সমাজ প্রশ্ন তোলে-
মেয়েটির সম্পর্ক ছিল কিনা?
সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে হয়তো বিয়ে করছে না। কিংবা
নিশ্চয়ই এমন কোন ব্যাপার আছে যার কারণে পরিবার মেয়েটির বিয়ে দিতে পারছে না।
এমন নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন অনেক মেয়ে ও তার পরিবার। তাছাড়া মেয়ের ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজ তার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলায়। মেয়ে কোন বিষয়ে পড়বে, কী ধরনের চাকরি করবে, কখন বিয়ে করবে, কেমন ছেলেকে বিয়ে করবে এ সমস্ত বিষয়ে শুধু পরিবার না, আশেপাশের লোকজনও ভাবে। অর্থাৎ মেয়ের ব্যাপারগুলি নিয়ে কথা বলার, সমালোচনা করার অলিখিত অধিকার সবারই থাকে। যা একটি ছেলের ক্ষেত্রে হয় না। ছেলেকে অনেক স্বাধীনতা দিয়ে বড় করা হয়। এজন্য অধিকাংশ পরিবারে বিয়ের সময় মেয়ের পছন্দ আছে কিনা জানার চেষ্টা না করলেও ছেলের ক্ষেত্রে করে। অর্থাৎ বিয়ের আগে ছেলের কাছ থেকে জেনে নেয় তার ব্যক্তিগত কোন পছন্দ আছে কিনা।
প্রাচীন একটি ধারণা অনুযায়ী, ছেলেকে অবশ্যই মেয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য হতে হবে। এমন ভাবনার কারণ, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ হলো পরিবারের কর্তা, সমাজের প্রতিনিধি। তাই যোগ্যতা কিংবা টাকা উপার্জনের ক্ষমতা পুরুষেরই বেশি থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. ফরিদউদ্দিন আহামেদ বলেন, ‘মেয়ের চেয়ে ছেলেকে বেশি যোগ্য হতে হবে এমনটা না ভেবে বরং যাকে বিয়ে করবে সে মানুষ হিসেবে কেমন, তার ব্যক্তিত্ব আছে কিনা এই বিষয়গুলো দেখতে হবে।’
অনেক ছেলে মনে করে, তার চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়েকে বিয়ে করলে নিজস্ব পছন্দ, অপছন্দের দাম থাকবে না। কারণ পরিণত বয়সী মেয়েদের নিজস্ব একটা চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। পুরুষ এটাকে মেনে নিতে পারে না। পুরুষতন্ত্র চায় না মেয়েদের মতামত দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হোক। তাই অধিকাংশ ছেলেই কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে চায়। যাতে নিজের চিন্তাচেতনা স্ত্রীর ওপর ভালোভাবে চাপানো যায়।
তবে একটি বিষয় এখানে প্রাসঙ্গিক। এদেশে সংখ্যালঘু পরিবারগুলো মেয়েদের বিয়ে তাড়াতাড়ি দিতে চায়। যেমন, আদিবাসী, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী মানুষ মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ তাদের মধ্যে বেশি। তাই মেয়ের বিয়ে তাড়াতাড়ি দিতে পারলে কিছুটা স্বস্তি পায় তারা।
‘কুড়িতেই বুড়ি’ এমন একটি কথা সকলেই জানেন। তবে আজকাল এমন ধারণা থেকে বের হয়েছেন অনেকে। এখন মেয়েকে কুড়িতে বিয়ে না দিয়ে অনার্স, মাস্টার্সে পড়তে পড়তে কিংবা মাস্টার্স শেষ করে চাকরি পাওয়ার আগে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন অনেকেই। কারণ চাকরি করলে মেয়ের বয়স বেশি হয়ে যাবে। চেহারার সৌন্দর্য কমে যাবে। ‘ভাল ছেলে’ পাওয়া যাবে না। ‘ভাল ছেলেরা’ কম বয়সী মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে চায়।
উপরে উল্লেখিত আরিফা ইয়াসমীনের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারটিকে তার পরিবার কীভাবে দেখছে জানতে চেয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম। আরিফার মা সালমা খাতুন বলেন, ‘বিদেশে পড়াশুনা করে ফিরে আসার পর বয়স বেশি হয়ে যাবে। তখন আর ভাল ছেলে পাওয়া যাবে না।’
আসলে ‘ভাল ছেলে’ বলতে কী বোঝে সমাজ? জানতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আফসানা ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘যে ছেলেরা ভাল চাকরি ও উপার্জন করে তারাই ভাল ছেলে। যেহেতু অর্থনীতি সমাজের ভিত্তি, তাই অর্থ দিয়েই ভাল-খারাপ নির্ধারিত হয়। মানুষের নৈতিকতা কিংবা মনুষ্যত্ব এক্ষেত্রে মূখ্য নয়।’
অনেক পরিবারে ছেলে বড় ও মেয়ে ছোট থাকলে বিয়ের ক্ষেত্রে বাবা মা মেয়ের কথাই আগে ভাবে। ভাই চাকরি করলেও ছোট বোনের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করতে পারে না। মেয়ের বিয়ে মানেই পরিবারের জন্য বড় একটি চাপ। তাছাড়া ছেলের বিয়েতে অনেক সম্পদ পাওয়া যায়। আর মেয়ের বিয়েতে ছেলেপক্ষকে দিতে হয়। এজন্য ছেলের আগে মেয়েকে বিয়ে দেয় অনেকেই।
এই প্রসঙ্গে ড. ফরিদউদ্দিন আহামেদ বলেন, ‘অধিকাংশ পরিবারে ছেলেরা বিয়ের পর মা বাবার সাথে থাকতে পারে না। পরিবার এখন ছোট থেকে আরও ছোট হচ্ছে। এই ভয় থেকে অনেক সময় বাবা মা ছেলের বিয়েটা পরে দেয়। আর মেয়েরা যতই বিয়ের পর স্বামীর ঘরে যাক তারপরও বাবা মায়ের প্রতি তাদের দরদ থাকে।’
শিক্ষক আফসানা ইসলাম বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক ধারণা অনুযায়ী, মেয়েদের একটি আশ্রয় দরকার হয়। যেমন ছোটবেলা বাবার, বিয়ের পর স্বামীর এবং বয়স হয়ে গেলে ছেলের অধীনে নারীকে থাকতে হবে এমন একটি চিন্তা সমাজে বিদ্যমান। তাছাড়া অনেক মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বা পরিবারের কারণে পড়াশুনা শেষ করার আগেই বিয়ে করে ফেলে। এর কারণ হল সন্তানধারণে কোন জটিলতা যেন না হয় এই জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ব্যাপারটি চলে আসে। আরেকটি কারণ হলো এই সমাজে মেয়েরা ভীষণ অনিরাপদ। এর ফলে বাবা মা একজনের ওপর মেয়েটার দায়িত্ব দিতে চায়।’
সন্তান ধারণের দিকটি
পড়াশুনা শেষ করে ভাল চাকরির পর বিয়ে করা সম্ভব না বলে যারা মনে করেন তাদের যুক্তি হলো, বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়। মেয়েরা যেহেতু গর্ভে সন্তান ধারণ করে তাই ৩০ এর মধ্যেই সন্তান নেওয়া ভাল। এজন্য অনেকের মতে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়া দরকার।
এ প্রসঙ্গে কুমুদিনী হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস বেগম বলেন, ‘জীবন নিয়ে একভাবে চিন্তা করলে হবে না। সবকিছুই করতে হবে। ক্যারিয়ার ও সন্তান ধারণ এই দুটি বিষয় আলাদা নয়।’
তিনি বলেন, ‘সন্তান ধারণের জন্য ২০ থেকে ২৯ বছর সময়টা বেশি উপযুক্ত। তাতে মা ও সন্তানের অনেক ধরনের ঝুঁকি কমে যায়। তবে চাকরি করতে করতেও বাচ্চা নেওয়া সম্ভব। আসলে বিয়ে কখন করবে, কখন সন্তান নেবে এগুলো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এগুলো ব্যক্তিগত না হয়ে সামাজিক হয়। সমাজ মেয়েদের বয়স বুঝিয়ে দেয়। যা মোটেও উচিত না। তাছাড়া প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা যদি ঘরের বৌকে সহযোগিতা করে তাহলে মেয়েরা তাদের উপযুক্ত সময়ে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মেয়েদের যেহেতু দায়িত্ব বেশি, ফলে এই সহানুভূতিটা স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের থাকা উচিত।’
শিক্ষার্থীদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের ১০ জন নারী শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। আগে চাকরি নাকি বিয়ে- এই বিষয়ে তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে।
‘কখন বিয়ে করবেন বলে ভাবছেন’ এমন প্রশ্নে তাদের মধ্যে অন্তত ৯ জন চাকরি করে বিয়ে করার পক্ষে মত দিয়েছেন। মেয়ে হিসেবে চাকরি করেই বিয়ে করাকে সম্মানজনক মনে করেন তারা। চাকরির পর বিয়ে করার সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ জানতে চাইলে কিছু বিষয়কে তুলে ধরেন এই শিক্ষার্থীরা-
- বিয়ের পর চাকরির জন্য পড়াশুনা করা বা প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত কঠিন।
- মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া জরুরী। কারণ স্বাবলম্বী মেয়ে নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে পারে।
- বিয়ের আগে চাকরি শুরু করলে নিজের পছন্দে পেশা নির্ধারণ করা যায়।
- বাবা মাকে সহযোগিতা করার জন্য বিয়ের আগে চাকরি শুরু করাই ভাল। বিয়ের পর অনেক ছেলে এটা মানতে পারে না।
- অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য বিয়ের আগে চাকরি করা উচিত।
সেতু রহমান (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বিয়ে সম্পর্কিত তার ভাবনাগুলো সংক্ষেপে বললেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে ভাবতাম চাকরি করেই বিয়ে করবো। তখন বাবা মা বিয়ে নিয়ে কিছুই বলতো না। কিন্তু আমার বড় বোন নিজের পছন্দে বিয়ে করলে বাবা মা মেনে নেয়নি। এ কারণে তারা মনে করেছিল আমিও এভাবে বিয়ে করবো। তাই তৃতীয় বর্ষে ওঠার পরেই আমার বিয়ে দেয়। পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি, পাশ করছি কোনরকম। কিন্তু সংসার সামলিয়ে পড়াশুনা করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নারী শিক্ষর্থীদের সাথে কথা বলা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্তত ৬ জন পড়ছেন স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে। এদের মধ্যে ৫ শিক্ষার্থী জানান, তাদের পরিবার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন-
- বেশি বয়সে বিয়ে করলে ভাল ছেলে পাওয়া যাবে না।
- সমাজের কাছে বাবা মাকে অনেকসময় অপমানিত হতে হয়।
- চাকরি করার পর মেয়ের চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে পাওয়া যায় না।
- মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে বাবা মা ভয়ে থাকেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সামাজিক সমস্যাগুলোই নারীর পথে প্রধান বাধা হিসেবে আসে। যার কারণে বেশিরভাগ সময় বিয়ে ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে নারী একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
মনঃস্তাত্বিক বিষয়টি কি প্রধান?
আবার অনেক মেয়েরা পড়াশুনা করেন ভাল বিয়ের জন্য। নিজের পায়ে দাঁড়ানো কিংবা আত্মমর্যাদা বাড়ানো জন্য না। তারা ভাবে, বিয়ে করলে স্বামীই তাকে চালাবে। স্বামীর টাকায় ভাল করে চলতে পারবে। কিংবা ক্যারিয়ারের জন্য বেশি চাপ তাকে নিতে হবে না। সহজে যা পাওয়া যায় তাই মেনে নেওয়া। ক্যারিয়ারের ভাবনার চাপ স্বামীর ওপর দিতেই পছন্দ করেন তারা।
অনেক ছেলে মনে করে, অর্থনৈতিক দিকটা শক্ত থাকলে মেয়েরা স্বাধীনচেতা হয়। নিজের মতো কাজ করে। স্বামীর কথা শোনে না। তখন স্ত্রী হয়ে যায় অবাধ্য। এ কারণে প্রতিষ্ঠিত মেয়েকে অনেক ছেলে বিয়ে করতে চায় না।
এই ধরনের নানা পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা আমাদের সমাজেই আছে। ফলে চিন্তাগত সীমাবদ্ধতার কারণেই সমাজে নারী পুরুষকে আলাদাভাবে বিচার করা হয়। তবে ধীরে ধীরে হলেও কিছুটা পরিবর্তন আসছে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষক ড. ফরিদউদ্দিন আহামেদ বলেন, ‘সামাজিক ধ্যান-ধারণাগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমন এখন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগে পরিবার মেয়ের কাছে জানতে চায় তার কোন পছন্দ আছে কিনা। আগে এটা করা হতো না। প্রেমের বিয়ে মানতে আগে যতটা সমস্যা হতো এখন ততটা হয়না। এখন অধিকাংশ ছেলেমেয়েই নিজেদের পছন্দে বিয়ে করার স্বাধীনতা পেয়েছে।’
শিক্ষক আফসানা ইসলাম বলেন, ‘কখনও কখনও চিত্রটি একটু ভিন্ন হয়। যেমন অনেক মেয়ে স্বামীর সহযোগিতা পায়। ফলে লেখাপড়া করে বিয়ে করলেও চাকরি বা অন্যান্য কোন সমস্যা তৈরি হয়না। মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া তার স্বামী ও ভাইয়ের অনেক সহযোগিতা পেয়েছিলেন। ফলে কিছু কাজ তার পক্ষে সহজভাবে করা সম্ভব হয়েছে। মেয়েদের দায়িত্ব যেহেতু বেশি, তাই সেগুলো গুরুত্ব দিলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে মেয়েরা চাকরি ও বিয়ে নিয়ে দিধাদ্বন্দ্বে পড়বে না’।
মডেল – আত্রলিতা ও আদৃতা
ফিচারফটো আলোকচিত্র – আশীষ সেনগুপ্ত
ভেতরের ছবি – নিষুপ্ত সাগর
সারাবাংলা/ টিসি/ এসএস