হ্যালো, সান্তা এখন কোথায়?
২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৮
।। ফয়সাল আকরাম ইথার ।।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। ক্রিসমাস বা বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ হলো কল্পকাহিনীর সান্তা ক্লজ। সান্তা বলতেই আমাদের কল্পনায় আসে লাল রঙের পোশাক ও চোঙা আকৃতির লম্বা টুপি পরা সাদা চুল-দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে সান্তা ক্লজকে শিশুদের কাছে আরও জনপ্রিয় করার পেছনে রয়েছে, ‘নোরাড ট্র্যাক্স সান্তা’ নামে একটি আয়োজন। তবে কিভাবে শুরু এই নোরাড ট্র্যাক্স সান্তার?
আজ থেকে ৬৩ বছর আগের কথা। দিনটি ছিল ১৯৫৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর। নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডের (নোরাড) কলরাডো স্প্রিংস অফিসের লাল টেলিফোন হঠাৎ বেজে উঠলো। দায়িত্বরত কর্নেল হ্যারি শ্যুপ ভ্রু কোঁচকালেন— এত রাতে ইমারজেন্সি ছাড়া তো সাধারণত ফোন আসে না!
ফোন ধরলেন শ্যুপ। ওপাশে বাচ্চা এক ছেলের কণ্ঠ। খুব ভদ্র গলায় সে অনুরোধ করে জানতে চায়, সান্তা ক্লজকে ফোনটা দেওয়া যাবে কি? অথবা সান্তা এখন কোথায় আছে যদি কর্নেল তাকে অনুগ্রহ করে বলেন, তাহলে সে বুঝতে পারবে তার বাসায় সান্তা কখন আসবে!
হঠাৎ এমন ফোন পেয়ে কর্নেল খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। কিছু একটা বলে ফোন রাখতেই কিছুক্ষণ পর আরেক বাচ্চার ফোন, এবার একটি মেয়ে। তার জিজ্ঞাসাও একই— সান্তা কোথায় আছে, কখন তার বাসায় আসবে?
এভাবে বেশ কয়েকটি ফোন আসার পর শ্যুপ খানিকটা উদ্যোগী হলেন। কথা বললেন বাচ্চাগুলোর মা-বাবাদের সঙ্গে। জানা গেল আসল কাহিনী।
সিয়ার্সের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সংবাদপত্রে সান্তা ক্লজকে নিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছিল ওই দিন। সেখানে লেখা ছিল, ‘হাই, আমি সান্তা বলছি। আমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন করো … এই নম্বরে।’ অনবধানতাবশত ওই বিজ্ঞাপনে সান্তা ক্লজের ফোন নম্বরটির জায়গায় ভুলে ছাপা হয়েছিল নোরাড-এর একটি নম্বর।
বলাবাহুল্য, এভাবেই শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী নোরাড ট্র্যাক্স সান্তা প্রোগ্রামটি। এরপর থেকে প্রতিবছর ক্রিসমাসে নোরাড ভলান্টিয়াররা রিসিভড করেন বাচ্চাদের ফোন, কথা বলেন সান্তা হিসেবে। জানা যায়, গতবছর নোরাড ভলান্টিয়াররা দুই শতাধিক এলাকা থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি করে সারাদিন প্রায় ৭০ হাজার ফোন কলে সাড়া দেন। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার ইমেইলের জবাব লিখতে হয়েছে সান্তা ক্লজের পক্ষ থেকে।
এই যে সান্তার হয়ে বিপুল পরিমাণ ফোন কল আর ইমেইলের জবাব দেওয়া, এটা তো নোরাডের নিজস্ব জনবল দিয়ে সম্ভব নয়। তাই ভলান্টিয়ারদের যুক্ত করা হয় এই প্রোগ্রামে। নোরাড কর্মকর্তারার বাইরে সাধারণ মানুষ তো বটেই, সেলিব্রেটিরাও অংশ নেয় সান্তাকে ফোন করার এই উৎসবে। ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামাও ছিলেন ফোনের অন্যপাশে সান্তা কোথায়, সে উত্তর দেওয়ার জন্য।
বাচ্চারা সান্তা ক্লজকে ফোন করে একটা স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নটা হলো— ভালো থাকলে, ভালো কাজ করলে তার পুরষ্কার পাওয়া যাবে। এই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
কর্নেল হ্যারি শ্যুপ যদি ৬৩ বছর আগের ওই রাতে বাচ্চাদের ধমক দিয়ে বলতেন, এসব রেখে পড়তে বসো! তাহলে হয়তো গল্পটা ভিন্ন হতো। কিন্তু হ্যারি বাচ্চাদের ধমক-ধামক দেননি। বরং তিনি তার সব স্টাফদের বসিয়ে দেন সবগুলো ফোন কল রিসিভড করতে, গুরুত্বের সঙ্গে সেগুলোর জবাব দিতে। সেই রাতে নোরাডের সেই কর্নেলের তাৎক্ষণিক উদ্যোগই পরিণত হয় ক্রিসমাসের ঐতিহ্যে।
২৫ ডিসেম্বর, যিশুর জন্মোৎসব বা বড়দিন। গোটা দুনিয়ার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিশুরাই অন্য সব উৎসবের মতো এই উৎসবেরও অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে। কর্নেল শ্যুপ যেমন ক্রিসমাসের ওই রাতে শিশুদের জন্য অসাধারণ একটি উদ্যোগ করে দিয়েছেন, ঠিক তেমনি শিশুদেরও যেন আমরা উৎসাহিত করতে পারি ভালো কাজে।
সারাবাংলা/এনএইচ