দেশের নারীর জন্য কেমন ছিল ২০১৮?
১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:১০
তিথি চক্রবর্তী।।
২০১৮ শেষ হলো। সদ্য শেষ হওয়া এই বছরজুড়ে এদেশের নারীর অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি বটে, কিন্তু নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা ঘটেছে সমানতালে। নারীর কাজে নানাভাবে বাধা দেওয়ার প্রবণতাও ছিল। প্রকৃত অর্থে অর্জিত হয়নি সমানাধিকারও। আর এসবের ভেতর দিয়েই এদেশের মেয়েরা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। নারীর সংগ্রাম ও থেমে না যাওয়ার ইচ্ছাই গত বছরে নারীর জন্য তুলে এনেছে নতুন নতুন অর্জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, ‘২০১৮ তো বটেই বিগত কয়েকটি বছর ধরেই নারীদের অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষা, খেলাধুলা ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা সংখ্যায় অনেক এগিয়ে গেছেন। এবছর উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, খেলাধুলায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া। তাছাড়া বাংলাদেশি নারীরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৈমানিক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান করেন। আবার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও নারী পিছিয়ে নেই। এসব দেখলে মনে হয় আমরা বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করছি।’
২০১৮ সালে কেমন ছিল নারীর অর্জন? কেমনই বা ছিল নারীর প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধক রূপটি?
দেখে নেওয়া যাক এক নজর।
নারীর অর্জন
নারী ক্রিকেটারদের সাফল্য
অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারী ক্রিকেটাররা অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছেন ২০১৮ সালে। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ জিতেছে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল গত বছর।
টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ
ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য আগে টু ফিঙ্গার টেস্ট ব্যবহৃত হতো। বিগত বছর টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে পিভি টেস্ট নামে বায়ো ম্যানুয়াল টেস্ট করাও নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর স্বাস্থ্যগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা সবার আগে নিশ্চিত করার ব্যাপারটিও ২০১৮ সালেই কার্যকর হয়েছে।
১৮ দফা নির্দেশনা
ধর্ষণের মামলা দায়ের করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
প্রথম নারী মেজর জেনারেল
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী মেজর জেনারেল হয়েছেন সুসানে গীতি। ২০১৮ সালে এটিও নারীর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি।
মিটু আন্দোলন
মিটু আন্দোলনের সূচনা হলিউডে হলেও আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলা নারীর জন্য সহজ না। এই কঠিন ব্যাপারটি অনেকটা সহজ করে দিয়েছে মিটু আন্দোলন। আমাদের দেশের নারীরাও এখন তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের কথা বলতে পারছেন। এই যে বহুদিনের নারীর মনের বদ্ধ জানালা খুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, এই এটিই গেল বছর নারীর অনেক বড় সাফল্য।
নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ
এবার জাতীয় নির্বাচনে দেশের ৬৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৬৭ জন নারী প্রার্থী, যা অতীতের সব জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে ২০ জন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ১৪ জন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৫ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েন ৬ জন। এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের ৩ জন, জাকের পার্টির ৩ জন, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ২ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ২ জন নারী প্রার্থী ভোটের মাঠে লড়াই করেন। আর জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, গণফ্রন্ট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন করে নারী প্রার্থী নির্বাচন করেন।
যদিও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি ছিল নারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে, তবে সে দাবি এবারও পূরণ হয়নি। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের সময় ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত দেয়। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে খুব ধীরগতিতে।
২০১৮ সালে নারীর অর্জনগুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চেয়েছিলাম শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, ‘নারীর অগ্রগতি তো হচ্ছে। তবে সেই অগ্রগতি সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে না। এটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হচ্ছে। মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে, তারা বেরিয়ে আসছে, তাদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। আর অন্যদিকে ছেলেরা বাইরে চলে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ছেলেদের বহির্মুখিতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এজন্য গ্রামেও দেখা যাচ্ছে মেয়েদের স্কুল, কলেজে উপস্থিতি বাড়ছে। অথচ ওইসব গ্রামের ছেলেরাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গেছে এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। মেয়েরা এসবের মধ্যে নেই। তাদের জন্য লেখাপড়া শেখাই প্রধান। সেজন্যই তারা বেরিয়ে আসছে এবং নানাক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করছে।’
ব্যর্থতাগুলো
নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি
সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু নারী নির্যাতন একটুও কমেনি। বছরজুড়েই ঘটেছে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনা।
বিগত বছরে নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে আয়েশা খানম বলেন, ‘নারীরা অনেক দিক থেকে এগিয়ে গেলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেড়েছে যৌন হয়রানি। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয়মাসে ৫৯২ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া এ বছরেই ১ মাসে ৫৮ নারী ধর্ষণের শিকার হন। চলন্ত বাস, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথাও নারী সহিংসতা বন্ধ নেই। এই ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া খুবই উদ্বেগজনক। নারীরা এখনও যৌন হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নয়টি সংবাদপত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নারী নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে। ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬৬২ টি। এগুলোর মধ্যে ৪৫৬ টি ঘটনার বিপরীতে মামলা হয়েছে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, বিগত বছরে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪৭ টি। আর যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ১৮০।
‘আমরাই পারি’ নামের পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এক পরিসংখ্যানে দেখায় যে, ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ১ হাজার ৮৮৭ টি নারী নির্যাতনের ঘটনা উঠে আসে। এক্ষেত্রে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। ৯ মাসে ৪৯৩ টি ধর্ষণ, ৪৩০ টি হত্যা ও ১৭৯ টি আত্মহত্যার ঘটনা উঠে আসে। এই গবেষণায় আরও দেখা যায়, বেশিরভাগ অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। শুধু রাজধানীতে নারী নির্যাতন ঘটনার বিচারে আসামিদের সাজা হচ্ছে ৩ শতাংশ, অব্যাহতি পাচ্ছে ৪১ শতাংশ, খালাশ হচ্ছে ৫৫ শতাংশ আর নিষ্পত্তি হচ্ছে ১ শতাংশ।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অধীনে মামলা হয়েছে ৩০ টি। এই মামলাগুলো হয়েছে খুন, ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনের কারণে।
বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের দুর্দশা
২০১৮ তে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক সৌদি আরব থেকে ফিরে জানিয়েছেন তাদের ওপর ঘটা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা। এই ঘটনাগুলোর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জোরালোভাবে আলোচনায় আসে নারী-পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন ও ভাতাবৈষম্য। শুধু গেল বছরই নয়, আগেও এই বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার হয়নি। বিগত বছরে ক্রিকেটে মেয়েদের এত বড় সাফল্য সত্ত্বেও পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে না।
নারী ক্রিকেটারদের সাথে এই বৈষম্যমূলক আচরণের পেছনে একটি ব্যবস্থাকে দায়ী করেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যে মেয়েরা নানা দিক থেকে সাফল্য অর্জন করছেন তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন তো দেওয়া হয়ই না, উল্টো তারা যেন বেরিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে রাখা হয়। এই ব্যবস্থার নাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি পিতৃতান্ত্রিক। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উন্নতি যা হবে, তা পিতৃতান্ত্রিক ধারাতেই হবে। অর্থাৎ পুরুষেরই থাকবে আধিপত্য। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী আছে, আমাদের এখানেও আছে।’
শিক্ষক দ্বারা স্কুলছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনা
এই প্রতিবেদনের কাজে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে সংরক্ষিত ২০১৮ এর অক্টোবর পর্যন্ত নয়টি পত্রিকার ধর্ষণের ঘটনা দেখে মনে হলো, শিক্ষক দ্বারা স্কুলছাত্রী ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের ঘটনা এখন অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, যৌন বিকৃতিও অনেক বেড়ে গেছে। যেমন নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলের শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করেছেন (সমকাল, ৪ মে ২০১৮)। এই ধরনের ঘটনাগুলোর কারণে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষকের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে অভিভাবকদের।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে নারী নিপীড়ন
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে নারী নিপীড়নের বড় বড় ঘটনাও ২০১৮ সালে ঘটেছে। উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। এরপর নানা মহল থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। অপহরণের ৩২ দিন পর তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুই মারমা বোন যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বড় বোনকে ধর্ষণ ও ছোট বোনকে যৌন নিপীড়ন করা হয়। ভুক্তোভোগীর স্বজনরা এসব ঘটনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়ী করেন। তবে বছর শেষ হতে চললেও এখনও এসব ঘটনার অপরাধীর বিচার হয়নি।
গত জুনে খাগড়াছড়িতে এক ত্রিপুরা শিশুকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। এমন আরও অনেক আদিবাসী নারী ও শিশু সহিংসতার ঘটনা ছিল বছরজুড়েই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারী নিপীড়নের অভিযোগ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু ছাত্রী ও শিক্ষিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নারী লাঞ্ছনার ঘটনা এটাই প্রথম না। বিভিন্ন সময় এমন ঘটনা আমরা শুনি। তবে সামাজিক আন্দোলনেও নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
নারী নির্যাতনের কারণ: বিশেষজ্ঞ অভিমত
দেশে নানাক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে, নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবু নারীর প্রতি অবমাননা কমছে না কেন, জানতে চেয়েছি অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নারী নির্যাতনের কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, দুর্বলের ওপর সবল অত্যাচার করে, দুর্বল তখন অত্যাচারিত হয়। দ্বিতীয়ত, পুঁজিবাদ ভোগবাদকে উৎসাহিত করে। এই ক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষ নির্যাতন করে। এজন্য তাদের কোনও শাস্তিও হয় না। আবার যে মেয়েরা নির্যাতিত হয়, তারা এটা প্রকাশও করতে পারে না। প্রকাশ করলে তাদের আরও বিপদ হয়। কাজেই গোটা ব্যবস্থাটাই পিতৃতান্ত্রিক ও নারীবিদ্বেষী। এই ব্যবস্থাটাই পৃথিবীময় নারীরা সংকটের মুখে। সমাজব্যবস্থা ব্যক্তিমালিকানায় থাকবে, না সেখান থেকে সামাজিক মালিকানায় যাবে, এটাই ভাবার বিষয়। নারী নির্যাতন এখন সর্বত্র হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এতদিন ধরে শ্বেতাঙ্গদের অধীনে ছিল। এখন শ্বেতাঙ্গরা চলে গেছে, স্থানীয়রা শাসন করছে। কিন্তু তারাও নির্যাতন করছে। এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর মানুষ ডোনাল্ট ট্রাম্প। তিনি এই ধরনের নির্যাতনের একজন প্রতিভূ। তিনি নির্লজ্জভাবে এই কাজগুলো করেন। সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনও ক্ষেত্রেই তার গ্রহণযোগ্যতা থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এখনও তার পক্ষে আমেরিকার জনসমর্থন আছে। তার মানে হলো, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিনিধি ট্রাম্প। এই শক্তি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত।’
সমাধান কোন পথে?
প্রতি মুহূর্তে নারীর জন্য বাইরের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। নারী কোথায় যাবে, কোন পোশাক পরবে, তা সমাজ নির্ধারণ করে। ধর্ষণের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর পোশাক, চলাফেরাকেই দায়ী করা হয়। আর অপরাধী পার পেয়ে যায়। ঘরে-বাইরে কত নারী নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন সেই হিসাব পরিসংখ্যানে থাকে না। নিজের ঘরেই কত নারী প্রতিদিন অপমানিত হচ্ছেন, তার সব চিত্রও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।
কিন্তু এর সমাধান কোথায়? এই প্রসঙ্গে ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েদের অগ্রগতি ও দুর্গতি দুটিই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনেই হচ্ছে। এই ব্যবস্থাটি না বদলালে দুর্গতি কমবে না। অগ্রগতির পরও দুর্গতি বাড়তে থাকবে। এই ব্যবস্থাটি পৃথিবীব্যাপী এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমাদেরও কর্তব্য হবে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তাই মেয়েদের লাঞ্ছনার ঘটনাগুলো আমরা তুলে ধরবো, অপরাধীর বিচার চাইবো। কিন্তু আমরা এটাও জানবো, এটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। এই ব্যবস্থাটি না ভাঙতে পারলে এগুলো দূর হবে না।’
আয়েশা খানম বলেন, ‘নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থাকলে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হবে না এবং নারীর সাফল্যের পথ বাধাগ্রস্ত হবে। তবে আশার ব্যাপার হলো, সম্প্রতি নারীরা যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে মুখ খুলছে। এক্ষেত্রে মিটু আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এই আন্দোলনের কারণে এদেশের মেয়েরা ধীরে ধীরে কথা বলার সাহস পাচ্ছে।’
ফিচার ফটো কার্টেসি: ফারহানা আখতার
সারাবাংলা/টিসি/এসএস/আরএফ
দেশের নারীর ২০১৮ নারী নির্যাতন নারীর ২০১৮ নারীর জন্য বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল সালতামামি