Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেপালের হিন্দু নারীদের দুর্ভোগের কারণ ‘ছৌপাড়ি প্রথা’


১০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:০৯

।। রোকেয়া সরণি ডেস্ক ।।

নেপালের হিন্দু নারীদের পিরিয়ডের সময় ও সন্তান জন্মের পর ১০ দিন পর্যন্ত একটা আলাদা ঘরে রাখা হয়। এই ঘরকে ‘ছৌপাড়ি’ বলা হয়। এসময়ে নারীদের এই ঘরের বাইরে যাওয়া বা পরিবারের অন্য সদস্যদের স্পর্শ করা নিষেধ। এই ঘরের নাম অনুসারে প্রথাটিকে ‘ছৌপাড়ি প্রথা’ বলা হয়।

নেপালের হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু যুগ ধরে চলে আসা প্রাচীন প্রথা এটি। ছৌপাড়ি রীতি অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় মেয়েরা রান্নাঘরে যেতে পারেননা। শুধু তাই নয়, এসময় দেবতার মূর্তি, গবাদি পশু ও এলাকার পুকুর বা নদীর পানি স্পর্শ করতে দেওয়া হয়না তাদের। এমনকি কোন পুরুষকে স্পর্শ করাও মানা এসময়ে।

নেপালের প্রত্যেক হিন্দু পরিবারে মেয়েদের জন্য একটি আলাদা ঘর বা ছৌপাড়ি রাখা হয়। যেসব পরিবার আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারে না, সেখানে অনেক নারীকে গোলাঘর কিংবা গোয়ালঘরেও থাকতে বাধ্য করা হয়।

নেপালি নারী ধানা বিস্তা (৩২) কাঠমান্ডুতে থাকেন। ছেলেবেলা কেটেছে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে। সেখানে ছৌপাড়ি প্রথা কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। সংবাদ মাধ্যমের কাছে ধানা বলেন, ১২ বছর বয়সে প্রথমবারের মত পিরিয়ড হলে তাকে একটি ছোট কুঁড়েঘরে আটকে রাখা হয়। কাঁদা ও খড়ের তৈরি কুঁড়েঘরটি এতোই ছোট ছিল যে, কোনরকম একজন মানুষ সেখানে ঢুকতে পারতো। ঘরের দরজা বন্ধ করা যেত না, মেঝেতে ছিল খড়, তাই শীতকালে ঠান্ডায় প্রচন্ড কষ্ট পেতেন তিনি। এ’কদিন ঘুমাতে ভীষণ অসুবিধা হতো তার। ধানা বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করতো, ছৌ্পাড়ি প্রথা না মানলে দেবতা অভিশাপ দেবেন।

২০০৫ সালে নেপালের সর্বোচ্চ আদালত ছৌপাড়ি প্রথা নিষিদ্ধ করেছেন। তারপরও এই প্রথা বন্ধ হয়নি। ২০১৭ সালে ছৌপাড়ি প্রথা মানতে গিয়ে সাপের কামড়ে ও ধোঁয়ায় দম আটকে ১০ মাসে ৩ মেয়ে মারা যান। তখন নেপাল সরকার এই প্রথা বন্ধ করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।

বিজ্ঞাপন

তিন নারীর মৃত্যুতে ছৌপাড়ি প্রথার ভয়াবহতা আলোচনায় আসে। দেখা যায়, এই প্রথা মানতে গিয়ে বিভিন্ন বয়েসী নারীরা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। তাছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মা ও সন্তানকে ১০ দিন পর্যন্ত ছৌ্পাড়ি প্রথা মানতে হচ্ছে, যার কারণে মা ও শিশু মৃত্যুর হারও সেখানে অনেক বেড়ে গেছে।

২০১৭ সালে নেপালের সংসদে ছৌপাড়ি প্রথাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে একটি আইন পাশ করা হয়। এই আইনে বলা হয়, ‘পিরিয়ডের সময় ও সন্তান জন্মের পর কোন নারীকে ছৌপাড়ি প্রথা মানতে হবে না। তাছাড়া এই দুটি সময়ে নারীকে অস্পৃশ্য মনে করা যাবে না এবং তাদের সাথে কোন অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।

ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ম্যারি ক্যামেরন সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ছৌপাড়ি প্রথা টিকে আছে যা খুবই বৈষম্যমূলক। এসময়ে এভাবে আলাদা রাখার কারণে নারীরা হীনমন্ম্যতায় ভোগেন। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার ফলে তাদের নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হয়, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে ছৌপাড়ি প্রথার প্রচলন বেশি। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মনে করেন, এই প্রথা অমান্য করলে দেবতা ক্ষুন্ন হবেন এবং পরিবারে অমঙ্গল হবে।

সারাবাংলা/টিসি/আরএফ

ছৌপাড়ি প্রথা নারী অধিকার নারীর মৃত্যু নেপালের নারী

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর