ঘুড়ির বাহারে বর্ণিল আকাশ
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০০
।। হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট ।।
সমুদ্রের নীল জল, তাতে ঢেউয়ের গর্জন। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলায় আছড়ে পড়ে একের পর এক ঢেউ। আর সমুদ্রের বিশালতার চেয়েও যেন বিশাল ওপরের নীলাকাশ। শীতের এক বিকেলে সেই নীলাকাশে ছোপ ছোপ রঙ ছড়িয়ে পড়ে। বাহারি রঙের সমাবেশে ছেয়ে যায় আকাশ। কেবল রঙ নয়, হাতি-বাঘ, নৌকা, অক্টোপাসও যেন উড়ছে আকাশের গায়ে! হঠাৎ এমন আকাশের কথা শুনে ভিমড়ি খাওয়ার কিছু নেই। কারণ আকাশের গায়ে গায়ে উড়ছে যে এমন বাহারি রঙ আর আকৃতির ঘুড়ি!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই দিনব্যাপী ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধনের পর এমন চিত্রই দেখা গেল। শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুগন্ধা বিচে উৎসবের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ঝু।
বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঘুড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতকে নির্মল রাখার শপথও নেন ঘুড়িপ্রেমীরা।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছে। তাদের নির্মল আনন্দের ছোঁয়ায় আনতে হবে। প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ঘুড়ি তার একটি অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। এসময় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকে বিপন্নতা থেকে রক্ষা করতে পরিবেশপ্রেমীদের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ঝু বলেন, এমন আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে। আজ এখানে এসে বুঝতে পারছি, এই ঐতিহ্য কত শক্তিশালী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেণুসহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
মূল আয়োজন শুরু হওয়ার আগেই সুগন্ধা বিচে নিয়ে আসা হয় ২৫ ফুট দীর্ঘ বিরাট টেরাকোটা টেপা পুতুল। সৈকত সাজানো হয় ছোট-বড় পতাকা আর বেলুনে। আয়োজনের উদ্বোধন হতেই সৈকতে আসা পর্যটকের দল জলকেলি ভুলে মেতে ওঠেন ঘুড়ি উৎসবে। নানা রঙের ঘুড়ি উড়িয়ে সব বয়সী ঘুড়িপ্রেমীরা নীল আকাশ করে তোলেন ঘুড়ির রঙে বর্ণিল।
এবারের আয়োজনে বেসাতি, ড্রাগন, ডেল্টা, বহুবিধ বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, গুবরেপোকা, আগুনপাখি, পেঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি, পালতোলা নৌকা, সাইকেল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুকুর, ব্যাঙ, হাতি, ফুটবলসব বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি ওড়ানো হয়।
কথা হয় ঘুড়িপ্রেমী শামান্তা রিমুর সঙ্গে। ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে তিনি বলছিলেন, প্রথমবার কক্সবাজার এলাম, তাও আবার ঘুড়ি উৎসবে। আমি এমনিতে ঘুড়ি ওড়াতে ভালোবাসি। তবে এত কালারফুল ঘুড়ি আমি আগে একসঙ্গে কখনও দেখিনি।
ঘুড়ি নিয়ে হাঁটছিলেন সারা খন্দকার। ঢাকা থেকে তিনি এসেছেন এই উৎসবে যোগ দিতে। তবে ঘুড়ি ওড়ানোটাই তার এবারই প্রথম। জানতে চাইলে বলেন, ছোটবেলা থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর ইচ্ছা আমার। তবে বিভিন্ন কারণে সে সুযোগ হয়নি কখনও। আজ সেই সুযোগ পেয়েছি। সে জন্য আমি খুব খুশি। তবে ঘুড়ি ওড়ানোটা সহজ কাজ না। ঠিকঠাকমতো ওড়াতেই পারছি না।
সারা’র ঘুড়ি আকাশে উড়তে উড়তেই কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা নাঈম আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকাতে ঘুড়ি ওড়ানোর পরিবেশ নেই বললেই চলে। তাই সুযোগই হয় না। এজন্যই শুধু ঘুড়ি ওড়াতে কক্সবাজার চলে এসেছি।
কেবল ঘুড়ি ওড়ানোতেই থেমে ছিল না ঘুড়ি উৎসবের প্রথম দিনের আয়োজন। বাঘ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে সন্ধ্যায় সৈকতে ছিল ‘বাঘ ছানার নৃত্য’। এর সঙ্গে ছিল ফানুস ওড়ানোর আয়োজনও।
আয়োজকরা জানান, উৎসবের দ্বিতীয় দিনে নৃত্যরত বিশাল হাওয়াই মানুষ, ভয়ঙ্কর ড্রাগন, আকর্ষণীয় চরকি, ঘুড়ি, ফানুস, বাঘ ছানার নৃত্য, এয়ারশিপের মতো বৈচিত্র্যময় ঘুড়ি ও আয়োজন থাকবে ঘুড়ি উৎসবে। আর শনিবার রাতে বাংলা বৈরী দানবদাহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জমকালো ঘুড়ি উৎসব।
সারাবাংলা/এইচআর/টিআর