কেন চুরি করছেন জাপানের বয়স্ক নারীরা?
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৩
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
অদ্ভূত এক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে এশিয়ার উন্নত দেশ জাপান। দেশটিতে বাড়ছে বয়স্ক কারাবন্দির সংখ্যা। তারা সবাই খুব ছোট-খাট অপরাধ করে জেলখানায় বন্দি হচ্ছেন। জাপানে চুরির অপরাধে কয়েদখানায় বন্দি বয়স্ক পুরুষদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এবার বিবিসি জানিয়েছে বয়স্ক জাপানি নারী কয়েদিদের কথা। কেন চুরি করছেন তারা..
নাম গোপন রাখার শর্তে, জঙ্কো আগেনো, তগোচি কারাগারে বন্দি এক নারী জানান, তার বয়স ৬৮ বছর। এটি তার পঞ্চম মেয়াদের জেল। এবার তিনি জেল খাটছেন, দোকান থেকে আঙুর ফল চুরির অপরাধে।
সে নারী বলেন, ‘৫৩ বছর বয়সে আমি প্রথম কারাবরণ করি। কারণ আমি একটি ব্যাগ চুরি করেছিলাম। সবসময় চুরি করা আমার অভ্যেস নয়। যখন একাকিত্বে ভুগি, জীবন কোণঠাসা মনে হয তখনই চুরি করি। প্রথমবার চুরি করেছিলাম কারণ আমার বাসার পরিস্থিতি ভাল ছিল না, ছেলে স্কুলে যাচ্ছিল না। আমি সবকিছু নিয়ে বিরক্ত ছিলাম। এভাবে বেশ কয়েকবার ঘটে। এবার আমাকে দুবছর জেল দেওয়া হয়েছে।’
সংসার জীবনে অশান্তি নিয়ে তিনি জানান, আমি আরও নানা বিষয়ে দুশ্চিন্তা করছিলাম। আমার ছেলে তার সন্তানকে নিয়ে আমাদের সঙ্গেই থাকে। কারণ তার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে। সে অলস। তাই তার কোনো চাকরিও নেই। তার সঙ্গে তর্ক করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই ও চুরি করে জেলে যাই।
জেলখানায় স্বামী ছাড়া পরিবারের কেউ তাকে দেখতে আসেনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী সান্ত্বনা দিয়ে বলে, যা হবার তা হয়ে গেছে। আমার পর্যাপ্ত যত্ন না নেওয়ায় ও বুঝতে না পারায় সে ক্ষমা চেয়েছে। বাসায় ব্যথা পেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি তার যত্ন নিতে চাই।
আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার আগ্রহ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আর হতাশার কারণে চুরি করতে চাই না। আমি নিজেকে সাহসী হিসেবে দেখতে চাই। মিষ্টি খাবারের প্রতি আমার সংযত থাকা উচিত। আমি বৃদ্ধ। আমার এখানে থাকা কঠিন। আমি জেলখানায় আর ফিরে আসতে চাই না।
এই বৃদ্ধা আরও বলেন, আমি জানি যুবক-তরুণরা জাপানে কঠিন সময় পার করছে। তবে তারা তাদের বাবা মায়ের যত্ন নিবে বলে আমার বিশ্বাস। নতুবা বাবা-মায়েরা একা হয়ে যাবে।
জেলখানায় বন্দি অন্য এক নারী জানান, আমি প্রথম জেলখানায় বন্দি হই ২০ বছর আগে। এরপর চাকরিতে কিছুটা সময় কাটিয়েছি। পাঁচ বছর আগে আবারও আমার জায়গা হয় এখানে। পরিবর্তনটা হলো, বয়স্ক কয়েদিদের সংখ্যা বেড়েছে এবং অনেককে আমি চিনতে পারি। অনেকেই যে বুড়ো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এখানে এমন অনেকেই আছেন যাদের খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে। তবে তারা ভাবেন, একবার চুরি করলে তারা এই খাবারটি তারা এমনিতেই খেতে পারবেন।
চুরি করা ঠিক নয় এটা তারা জানেন এবং যুক্তি দেখিয়ে বলেন, বুড়ো হয়ে গেছি। জীবনে অর্থ বা দুশ্চিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকার মতো এ বয়সে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
কারাগারে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, আমি এমন অনেককেই দেখি যারা বার বার জেলখানায় আসছেন। পরিবার তাদের পরিত্যাগ করেছে। তারা একা ও বিচ্ছিন্ন। জেলখানায় তাদের জন্য খাবার, বস্ত্র, আশ্রয় থাকে। হয়তো পরিচিতি ও বিশেষ বন্ধুত্বও হয়। বাইরের সমাজের চেয়ে তারা এখানে বেশ নিশ্চিন্তে থাকছেন।
তিনি বলেন, জেলে আশ্রয় পেতে তারা একেবারেই যে সহজ কাজটি করেন হলো কোন দোকান থেকে চুরি করা। আর এ কারণেই এ ধরনের অপরাধ খুব বেড়েছে। এখানে ফিরে এসে তারা জানায় আমি জেলের বাইরে খুব একা ছিলাম।
আবার জেল থেকে বেরিয়ে তারা প্রথম প্রথম বলেন, আমি আর কখনো ফিরে আসবো না। তবে যেহেতু তাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড থেকে যায়। থাকে না নির্ভর করার মতো পরিচিত কেউ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু। তাই তারা পরিচিত ও তুলনামূলক সহজ জায়গায় আবার ফিরে আসেন। আমার আশঙ্কা এধরনের ঘটনা আরো বাড়বে।
একাকিত্বের কারণেই জাপানে অনেক নারীই নিজেদের জেলখানায় বন্দি করে ফেলছেন। ব্যস্ত কর্মজীবন ছেলেমেয়েদের সুযোগ দেয় না তাদের বাবা-মায়ের যত্ন নেবার!
সারাবাংলা/এনএইচ