Saturday 30 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মনখারাপ করা আকাশ, বৃষ্টি ভেজা দিন


২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:২৫

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

ঢাকা: প্রকৃতির এই দ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি- শীত, বসন্ত না কি বর্ষা কে থাকবে আসলে? তাই রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

পূর্বাভাস বলছে, আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এদিকে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। তার প্রভাবেই প্রকৃতির এই দ্বন্দ্ব।

আবহাওয়া বিদদের মতে, রোববার সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

প্রকৃতির দ্বন্দ্বে কৃষক ও চাষিরা যেন বিপাকে না পড়েন, তাই বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। তারা বলছেন, মাঠে যাদের বোরো ধান রয়েছে- মনে রাখতে হবে, ধানের চারার বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে পানি সরিয়ে দিতে হবে।

এর মধ্যে কেউ যদি গুটি ইউরিয়া দিয়ে থাকেন, তাহলে আর ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করার দরকার নেই। পুরো ফাল্গুনে ধানের কাঁইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।

পোকা দমনের জন্য আলোর ফাঁদ পেতে রাখা যেতে পারে। পোকা ধরার জাল ব্যবহার করা যেতে পারে। ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে, এই সময় ধানক্ষেতে উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। সবুজ পাতাফড়িং টুংরো রোগের বাহক পোকা।

বিজ্ঞাপন

যদি উফরা রোগের প্রকোপ দেখা দেয় তাহলে যে কোনো কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এই সময় ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার হেক্টরপ্রতি ৪শ’ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ প্রয়োগ করতে হবে। পাতাপোড়া রোগ হলে বিঘা হারে অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। জমির পানি ছেঁচে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে।

এই মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম পাকতে শুরু করবে। গম শীষের শক্ত দানা দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট কট শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে গম কাটার সময় হয়েছে। গম কাটতে হবে সকালে অথবা পড়ন্ত বিকেলে। মাঠ থেকে গম তুলে যদি বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে গম যেন অন্য জাতের সাথে মিশে না যায়। শুকিয়ে মাড়াই ঝাড়াই করে ফেলতে হবে এবং ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

ভুট্টার জমিতে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ গাছের মোচা খড়ের রঙ নিলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। বৃষ্টি শুরুর আগে শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করতে হবে। খরিফ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে হবে।

ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে আড়াআড়িভাবে ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ১৭ থেকে ২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হবে। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি।

পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার রাখলে ভালো। ভালো ফলনের জন্য শতাংশ প্রতি ৩শ’ গ্রাম ইউরিয়া, ৬শ’ গ্রাম টিএসপি, ১শ’ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেওয়ার সময় ৪শ’ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম দস্তাসার দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর শতাংশপ্রতি ৩শ’ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করেত হবে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো শতাংশপ্রতি ৩শ’ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

এই মাসে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দেওয়ার এটাই সময়। সবজি চাষে পর্যাপ্ত জৈবসার ব্যবহার করতে হবে।

গাছে গাছে আমের মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। সতর্ক থাকতে হবে এই সময় অ্যানথ্রাকনোজ রোগের প্রকোপ বাড়ে। মুকুল আসার পরে ও ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে।

মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা দিতে পারে। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে ও ফুল ফোটার আগেই একবার এবং একমাস আরও একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস/ ফেনম/ ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কাঁঠালের ফল পচা বা মুচি ঝরা সমস্যা এখন দেখা দিতে পারে। এই রোগ থেকে বাঁচাতে হলে কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তা দিয়ে জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার ডায়থেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ফলিকুর নামে ছত্রাকনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ফুল আসার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

যারা বাডিং পদ্ধতিতে বরই গাছের কলম করতে চান, তারা প্রথমে গাছ ছেঁটে নেবেন। পরে উন্নত বরই গাছের মুকুল ছেঁটে দেশি জাতের গাছে সংযোজন করবেন।

যাদের ফার্ম আছে, তারা সতর্ক থাকবেন এই সময় রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই হাস-মুরগির খাবারের সাথে ভিটামিন দিতে হবে। গবাদিপশুকে প্রয়োজনীয় ভ্যাক্সিন দিতে হবে এবং কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি ও সংস্কার করার উপযুক্ত সময় এখন। পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে নিচ থেকে পচা কাদা তুলে শতাংশপ্রতি ১০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে পারেন। শীতের পরে এই সময় মাছ দ্রুত বড় হয়। তাই পুকুরে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে হবে। মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। মাছ যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে কাছের উপজেলা কৃষি অফিস বা উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হবে।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন

নাটোরে ন্যায্যমূল্যের বাজার
৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর