ঢাবি ও সচিবালয়ে মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়
২ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
।। সুমন ইসলাম ।।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফায়েল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগের জনসভায় উপস্থিত হয় লাখো ছাত্র জনতা। বিশাল ওই ছাত্রসভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করা হয় স্বাধীনতার প্রস্তাব। ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ করে। ছাত্রলীগ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনও বক্তৃতা করেন। প্রস্তুতি শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামের। ঢাকার নিউ মার্কেটে এ্যাপোলো ক্লথ স্টোরের কর্ণধার কাঙ্ক্ষিত পতাকা তৈরি করে দেন বিনা পারিশ্রমিকে। সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররমের দিকে যায়।
পর্ব-১: বাংলার জনগণ ইয়াহিয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে: বঙ্গবন্ধু
দুপুরে সচিবালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। রাতে হঠাৎ বেতারে ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়া হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকেরা বের হয়ে আসে এবং কারফিউ-এর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। তারা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। এ সময় শ্লোগান ছিল- ‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ ইত্যাদি। পুরো শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। ডি আই টি এভিনিউর মোড়, মর্নিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। ক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউসের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, এদিন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান কথাটা একরকম হাওয়া হয়ে যায় বাঙালিদের মুখ থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধ্যায় তার সংবাদ সম্মেলনে বারবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ পল্টন ময়দানে সমাবেশ করে যাতে বক্তৃতা দেন সাইফুদ্দিন মানিক, মতিয়া চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ, নুরুল ইসলাম সহ অনেকে।
ঢাকা শহরে ছিলো হরতাল। স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা সবগুলো ছিলো জনশূন্য, কোনো অফিসে কাজ হয়নি। লোকসমাগম বলতে রাস্তায় এবং প্রতিবাদ সমাবেশে। আগেই বলা হয়েছে তাদের গন্তব্য। সারাদিন একটি ট্রাকে করে আওয়ামী লীগের সদস্যরা সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এটাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। সারা শহরে সরকারের পেটোয়া বাহিনী হরতাল ঠেকাতে মাঠে নামে। পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের বেশিরভাগই তেজগাঁও এলাকার। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ ও মামুনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর আজিজ মারা যান।
সামরিক আইন প্রশাসক এদিন কারফিউ জারি করে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ মুজিবুর রহমান যাতে নিরস্ত্রদের ওপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয়। পরদিন ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে অর্ধদিবস (ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা) হরতালের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু।
সারাবাংলা/এনএইচ
আরও পড়ুন:
উত্তাল মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা