‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো’
৫ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৫
।। সুমন ইসলাম ।।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ। পঞ্চম দিনের মতো হরতাল চলছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় চার জন শ্রমিক প্রাণ হারান, আহত হন আরও ২৫ শ্রমিক। এ খবরে ঢাকায় জনমনে উত্তেজনা তৈরি হয়। জনতা টঙ্গী ব্রিজের কাঠের অংশ উপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় রাস্তা।
চট্টগ্রামে বাঙালি-বিহারী সংঘর্ষ ও সামরিক জান্তার গুলিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ জনে। রাজশাহী ও যশোরেও মুক্তিকামী জনতার মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহত হয় অনেকে।
বঙ্গবন্ধুর আগে দেওয়া নির্দেশের ফলে হরতালের মধ্যেও ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। দুপুরে বায়তুল মোকররম মসজিদের সামনে থেকে ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো’ স্লোাগানে বিশাল লাঠি মিছিল নিয়ে বের করে ছাত্রলীগ।
সেই মিছিলে হাজারে হাজারে অংশ নেয় স্বতঃস্ফূর্ত জনতা। একাত্মতা ঘোষণা করে ড. আহমদ শরীফের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে শপথ নেন ঢাকার লেখক-শিল্পীরা। বাঙালি উপলব্ধি করতে থাকে, পাক হানাদারদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার একমাত্র পথ সশস্ত্র সংগ্রাম।
লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহিদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সংকটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত রাখার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকেলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি বেতারে প্রচারিত ‘ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ ভাটোয়ারা করতে রাজি আছেন শেখ মুজিব’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসৎ উদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
রেডিও ও টেলিভিশনের নাম পাল্টে সম্প্রচার শুরু হয়
বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহবানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়। ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান।
রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এর আগে, সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আজ ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর/আপ-এমও