Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন দেশি খাবার ভুলে না যায়!


১৬ মার্চ ২০১৯ ১৬:২৫

রসুইঘরের প্রতিষ্ঠাতা লাখিয়া হাবিবা

বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ- অন্য যেকোন উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। অনলাইন এখন যেকোন কাজের জন্য সবচেয়ে দ্রুতগামী ও কার্যকরী মাধ্যম। এদেশের অনেক নারী অনলাইনকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করছেন, রীতিমত সফলতার সাথে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সারাবাংলা এরকম কয়েকজন নারীকে আড্ডা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যারা অনলাইন প্লাটফর্মে নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে রীতিমত সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। এদেরই একজন লাখিয়া হাবিবা। 

বিজ্ঞাপন


লাখিয়া হাবিবা, প্রতিষ্ঠাতা, রসুইঘর

কোন গর্ভবতী নারীর হয়ত হালকা মসলায় রান্না করা বেলে মাছের পাতুরি খেতে ইচ্ছে করছে। নিজের হাতে রান্না করা সম্ভব না। এমন কেউ নাই যে রান্নাটা জানে বা করে খাওয়াবে। ঢাকায় এমন কোন রেস্টুরেন্টও নাই যেখানে আপনি হুটাহাট করে এসব পছন্দসই খাবার অর্ডার দিতে পারবেন।

অথবা কোন কর্মজীবী দম্পতির বাসায় হয়ত কিছু অতিথি আসবেন। তারা খাওয়াতে চান পুঁইশাক দিয়ে চিংড়ি মাছ, দেশি মুরগির কোরমা, কই মাছের টমেটো মাখা বা পাবদা-টমেটোর ঝোল। রেস্টুরেন্টে এসব খাবার খুঁজে পেতে হয়রান হয়ে যাবেন। আবার নিজেরা বাজার করে রান্না করবেন সেই সময় বা সুযোগ নাই।

লাখিয়া হাবিবা

রসুইঘরের মজার সব খাবার

এমনই কিছু মজাদার দেশি খাবারের আয়োজন নিয়ে আছে রসুইঘর। উদ্যোক্তা লাখিয়া হাবিবা। সারাবাংলার আয়োজনে এসে জানালেন রসুইঘরের শুরুর গল্পটা। যখন শুরু করেছিলেন তখন স্কুলে পড়াতেন। দুটো বাচ্চা সামলিয়ে, স্কুলে পড়িয়ে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ পাওয়া যেত না। তবে মনের মধ্যে সবসময়ই নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিলই।

লাখিয়া জানান ওই সময় অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। অনেককেই দেখতেন কাপড়চোপড়, গয়না ইত্যাদি বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছেন। লাখিয়া ভাবতেন তিনি তো এমন কিছু পারেননা, হাতে অত পুঁজিও নাই। তবে কি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবেনা?

এমন সময়েই লাখিয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসেন তার ছোটবোন। রান্নাবান্না নিয়ে লাখিয়ার আগ্রহটাকেই কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে লাখিয়া ঘুরেছেন দেশের নানা জায়গায়। আগ্রহ নিয়ে শিখেছেন সেসব আঞ্চলিক রান্না। আবার দাদি-নানীদের রান্না করা খাবারের স্বাদ ভুলতে পারেননা আজও। নিজের সন্তানসহ নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাতে চান সেসব খাবার যেগুলোর নামও অনেকসময় জানেনা তারা।

বিজ্ঞাপন

এভাবেই ২০১৬ সালে রসুইঘর পেইজ ওপেন করে শুরু করেন দেশি খাবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস। শুরুতে সহকর্মী, পরিচিতদের দিয়েই শুরু হয় তারা খাবার সরবরাহ করা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। প্রথম থেকেই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী খাবার রান্না করে দেন তিনি। তেল-ঝাল-মসলা কম হবে না বেশি ইত্যাদি গ্রাহকের কাছেই শুনে নিয়ে সেভাবেই রান্না করে দেন তিনি।

২০১৭ এর জানুয়ারিতে স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মননিবেশ করেন লাখিয়া। তখন ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন সংস্থা মেয়ে নেটওয়ার্কের সাহায্য পান তিনি। তাদের হাত ধরেই অনলাইনে ব্যবসার বিস্তৃতি বাড়ে আরেকটু। অনেকেই তাদের পছন্দের খাবার অর্ডার দিতে শুরু করেন।

লাখিয়া বলেন, যারা পছন্দের খাবার রান্না করার সুযোগ পান না, তাদের জন্যই আমার পেইজ এবং আমি। বাড়িতে অতিথি আসবে বা একটা গেট টুগেদার হবে তখন অনেকেই হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে খাওয়ানো পছন্দ করেননা, তাদের জন্যই রসুইঘর।

খাবার সরবরাহ ব্যবসার চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে লাখিয়া বলেন, রান্না করা খাবার ঠিকমত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সবসময়ের জন্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি থাকেন মিরপুর। সেখান থেকে ঢাকার দূরবর্তী প্রান্তে খাবার সময়মত পৌঁছে দিতে ঝামেলায় পড়েন অনেকসময়। তবে এসব সমস্যা এখন অনেকটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে বলে জানালেন লাখিয়া।

লাখিয়া হাবিবা

লাখিয়া হাবিবার হাতে প্রতিকৃতি তুলে দিচ্ছেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও মাহমুদ মেনন খান

শুরুর দিকে খাবার সরবরাহ নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলেন, বলে জানান লাখিয়া। কুরিয়ার সার্ভিস অনেকগুলো থাকলেও তারা শাড়ি-গয়নাই সরবরাহ করত বেশি। খাবার সরবরাহ করতে অনেকেই আপত্তি জানাত। অনেক অনুরোধের পরেই রাজী হত কেউ কেউ।

তখন রসুইঘরের নিজস্ব খাবার সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এখন লাখিয়ার সাথে রসুইঘরে ছয়জন আছেন। তাদের মধ্যে কেউ রান্নায় সাহায্য করেন আর বাকিরা খাবার সরবরাহ, বাজার ইত্যাদি করেন।

লাখিয়া বলেন, ‘রসুইঘর করার ক্ষেত্রে আমার মাথায় ছিল হারিয়ে যাওয়া খাবারগুলো আবার ফিরিয়ে আনা। ছোটবেলায় গ্রামে যেয়ে আমাদের দাদী-নানীদের আমলের যেসব খাবার খেতাম আমাদের ছেলেমেয়েরা সেসব খাবারের নামটাও জানেনা অনেকসময়। আমি চেষ্টা করছি সেগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে। আমি চেষ্টা করছি সেসব খাবার যেন আমাদের বাচ্চারা চেনে জানে এবং খেতে অভ্যস্ত হয়।’

লাখিয়া হাবিবার কথা শুনতে দেখুন ভিডিও 

https://www.youtube.com/watch?v=hhSNBZn4Xn0

 

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস/আরএফ

দেশি খাবার রসুইঘর লাখিয়া হাবিবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর