Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দাদু নানুর আমলের গহনা ডিজাইনের ধারাটি ফিরিয়ে আনতে চাই’


১৯ মার্চ ২০১৯ ১৬:১২

গ্লুড টুগেদারের উদ্যোক্তা মেহনাজ আহমেদ আদিবা

বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ- অন্য যেকোন উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। অনলাইন এখন যেকোন কাজের জন্য সবচেয়ে দ্রুতগামী ও কার্যকরী মাধ্যম। এদেশের অনেক নারী অনলাইনকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করছেন, রীতিমত সফলতার সাথে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সারাবাংলা এরকম কয়েকজন নারীকে আড্ডা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যারা অনলাইন প্লাটফর্মে নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে রীতিমত সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। এদেরই একজন মেহনাজ আহমেদ আদিবা।

 

বিজ্ঞাপন

মেহনাজ আহমেদ আদিবা, প্রতিষ্ঠাতা, গ্লুড টুগেদার

মেহনাজ আহমেদ আদিবা স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। ২০১৫ সালে একটি ফার্মে কাজ শুরু করেন। চাকরির পেছনে অনেক সময় দিতে হতো। তারপরও প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে শুরু করেন ‘গ্লুড টুগেদার’ অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ। গহনার জন্য গ্লুড টুগেদার পরিচিত।

মেহনাজ আহমেদ আদিবা জানান, ব্যবসার শুরুটা গয়না দিয়ে হয়নি। যেহেতু পেশায় তিনি স্থাপত্যবিদ, তাই কাজের নির্দিষ্ট কোন সময় ছিল না। বেশিরভাগ দিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কখনও এমন হতো ৩/৪ দিন ধরে একটা প্রোজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু তার মনে হচ্ছিলো কোথায় যেন একটা ফাঁক আছে। তাই নিজের পেশাকে যতটা পছন্দ করতেন, সেই তুলনায় কাজ করতে পারতেন না।

গহনা ডিজাইনের

গ্লুড টুগেদারের গহনা

ব্যবসার শুরুর গল্পটি জানতে চাইলে মেহনাজ আহমেদ আদিবা বলেন, ‘এক ভাগ্নির জন্মদিনে কেনা জিনিস না দিয়ে হাতে বানানো কোন জিনিস ওকে দিতে চেয়েছিলাম। এজন্য ল্যাম্প বানাতে শুরু করলাম। বানানো শেষ হলে মা দেখে খুব প্রশংসা করলেন। মা বললেন, তুমি ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়ে দেখো সাড়া পাও কিনা। পোষ্ট দিলাম, এতো বেশি সাড়া পেলাম যে আমি অবাক হয়ে যাই। এক রাতের সিদ্ধান্তেই একটি পেজ খুলি। তারপর শুরু হয় হাতে বানানো ল্যাম্প, সুগন্ধি মোমবাতি ও কোষ্টারের কাজ। এখান থেকেই শুরু হয় গ্লুড টুগেদারের গল্প।

তবে চাকরির কারণে তখন নিজের হাতে কিছু বানানোর সময় কম পেয়েছিলেন মেহনাজ আহমেদ আদিবা। তাই ল্যাম্প, কোষ্টার সহ অন্যান্য জিনিস আর বানাতে পারেননি। তখন গহনা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পুরনো দিনের অর্থাৎ দাদী-নানীদের আমলের গয়না ব্যতিক্রমী ধাঁচের বলে আমি মনে করি। যখন গহনার ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছি তখন সচরাচর কোন মার্কেটে পুরনো দিনের গহনার ডিজাইন দেখতাম না। ইন্ডিয়ান গহনা এতো বেশি বাজারে ছড়িয়ে গেছে যে আমাদের দেশের গহনার কাজগুলো বাজারে আর পাওয়াই যেতো না। তখন নিজেই গহনার ডিজাইন করতে শুরু করি। প্রথমদিকে কারিগর পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রত্যেক মাসেই গহনায় নানা ধরনের ডিজাইন করেছি। চাকরি করেছি, পাশাপাশি গ্লুড টুগেদার চলেছে। একে কখনও ব্যবসা হিসেবে দেখিনি। এটি আমার শখের জায়গা।’

ব্যবসায় মায়ের অনেক সহযোগিতা পান মেহনাজ আহমেদ আদিবা। চাকরির কাজে অনেকসময় ব্যস্ত থাকলে তার মা ক্রেতাদের সাথে কথা বলেন। তাছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার কাজটা একটু ব্যতিক্রমী, তাই ডিজাইন হাতে এঁকে কারিগরদের দেই। সেটি প্রসেস হতে তিন, চারমাস লেগে যায়। আমি প্রতিবার চেষ্টা করি একটি কনসেপ্টে কাজ করতে। একটি কাজ শেষ হতে না হতেই আরেকটি কাজ শুরু করি। আমি দেখেছি, আমাদের দেশের কারিগররা অত্যন্ত দক্ষ। তারাও আমাকে আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেন। মাঝে মাঝে তারা নতুন ডিজাইন দেন। শুরুর দিকে আমার মাথায় একটি ভাবনা আসে, আমাদের দেশে যারা রিকশা পেইন্ট করেন তাদের নিয়ে কাজ শুরু করবো। একজন আর্টিষ্ট খুঁজে বের করলাম। তাকে দিয়ে গহনায় ববিতার ছবি হাতে আঁকালাম রিকশা পেইন্ট হিসেবে। এই নকশাটি ভাল সাড়া পেল। এরপর ভাল একটি ডেলিভারি সার্ভিসের সাথে কাজ করতে শুরু করলাম। ফলে আমার কাজটি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।’

গহনা ডিজাইনের

মেহনাজ আহমেদ আদিবার হাতে প্রতিকৃতি তুলে দিচ্ছেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও মাহমুদ মেনন খান

অনেকে অনলাইনে পণ্য নেওয়ার পর অভিযোগ করেন। এই প্রসঙ্গে মেহনাজ আহমেদ আদিবা বলেন, ‘এই প্রশ্নগুলো নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে আসে। পুরনো ক্রেতারা করেন না। পুরনো ক্রেতারা পর্যালোচনা করেন। যেহেতু আমি নিজে নকশা করি এবং আমার নিজের ফটোগ্রাফার ছবি তোলেন, ফলে আমার পণ্য দেখতে দেখতে ক্রেতাদের একটি ধারণা হয়ে যায়। আমি ক্রেতাদের ইতিবাচক সাড়াই বেশিরভাগ সময় পাই। অনেক সময় এমনও হয় ক্রেতারা বলেন, ছবির চেয়ে বাস্তবে গহনাটি ভাল লেগেছে।’

গ্লুড টুগেদারের সব গহনা ধাতব বা মেটালের তৈরি। তবে কেউ রুপার গহনা অর্ডার দিলেও বানিয়ে দেওয়া হয়। মেহনাজ আহমেদ আদিবা জানান, ভরি প্রতি রুপার দাম বেশি এবং রুপার তৈরি গহনার মজুরিও বেশি দিতে হয়। তাছাড়া রুপার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন রুপার গহনায় সব ডিজাইন আনা যায় না। এজন্য অধিকাংশ নারী মেটালের তৈরি গহনাই পছন্দ করেন। তাছাড়া মেটালের তৈরি গহনা দেখতে রুপার মতোই লাগে। আর মেটাল সোনার রঙের হলে গহনাও সোনার মতো দেখায়।

মেহনাজ আহমেদ আদিবা বলেন, ‘খুব ঘরোয়াভাবে গ্লুড টুগেদার এখন পর্যন্ত চলছে। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে গহনা তৈরির কাজ করছি। ক্রেতাদের অনেক সাড়া পেয়েছি।’

https://www.youtube.com/watch?v=881HrQLNQ3Y

সারাবাংলা/টিসি/এসএস

গহনা গ্লুড টুগেদার মেহনাজ আহমেদ আদিবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর