“সাংবাদিকতায় লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি!”
২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:১৯
রোকেয়া সরণি প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই গণমাধ্যমে, বিশেষত সাংবাদিকতায় লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সংবাদ উপস্থাপনে নিরপেক্ষ না থেকে অনেক সময় ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। আবার লিঙ্গ বৈষম্যমূলক সংবাদের হারও এখনো কমেনি। এ ব্যপারে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও দিক নির্দেশনার অভাব।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘সাংবাদিকতায় লৈঙ্গিক সমতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। আয়োজনে ছিল সুইডেনের লিনিয়াস ইউনিভার্সিটির ফোজো মিডিয়া ইনস্টিটিউট ও ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বা এমআরডিআই।
সূচনা বক্তব্য রাখেন এমআরডিআই এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। সাবেক উপদেষ্টা ও উন্নয়নকর্মী রাশেদা কে চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, লৈঙ্গিক সমতায় শুধু নারীরাই জড়িত নয়, তৃতীয় লিঙ্গ বা শিশুরাও এর আওতাধীন। তিনি আরও বলেন, মিডিয়ায় নারীকে যেভাবে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তার থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের আরও বেশি বৈচিত্র্যমূলক সংবাদ পরিবেশন নিয়ে কাজ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, সাংবাদিকতায় লৈঙ্গিক সমতার মানে লৈঙ্গিক বৈষম্য ছাড়া সংবাদ পরিবেশন, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক ভাষা এড়িয়ে চলা, আর নারীদের শুধুমাত্র ‘লাইফস্টাইল’ ও ‘সফট বা কোমল’ রিপোর্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা। তিনি বলেন নারীদের নিজের পরিচয়েই পরিচিত করানো উচিৎ, বাবা বা স্বামীর পরিচয়ে নয়। যেসব সংবাদে লৈঙ্গিক বৈষম্য প্রকাশ পায় তা এড়িয়ে চলতে হবে। মিডিয়া হাউজগুলো সংবাদগুলো কাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরছে তা নিয়েও কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য প্রকাশ পায় এমন বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি প্রত্যেক নিউজরুমে, মিডিয়া হাউজে আর ইউনিয়ন মিটিং এ লৈঙ্গিক সমতার বিষয়ে কথা বলার ব্যপারে জোর দেন তিনি।
ফোজো মিডিয়া ইন্সটিটিউটের জেন্ডার বা লিঙ্গ বিষয়ক উপদেষ্টা এগনেটা সোঁদাবেরি জ্যাকবসন বলেন, সংবাদ মাধ্যমগুলোকে নিজেদের জনগোষ্ঠীর সাথে সংগতিপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি নারী পাঠক তৈরির উদ্দেশ্যে নারীদের জন্য সংবাদ পরিবেশন বাড়াতে হবে। তার উপস্থাপনায় তিনি দেখান, যেসব প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহন বেশি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী কম তাদের থেকে ভালো।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর উপদেষ্টা (সংবাদ) কুররাতুল আইন তাহমিনা, মোজাম্মেল হক রাজা, ডেইলি স্টারের ডেপুটি এডিটর শাহরিয়ার খানসহ আরও অনেকে। কুররাতুল আইন তাহমিনা বলেন, জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী আর ৪৯ শতাংশ পুরুষ হলেও দেখা যায় পাঠক হিসেবে নারীরা পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছে।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা সংবাদকর্মীদের কথায় উঠে আসে যে রাজধানীতে নারীরা সাংবাদিকতা পেশায় এগিয়ে থাকলেও মফস্বলে সেভাবে নারীরা এগিয়ে আসছেন না। সেক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাবকে দায়ী করেন অনেকে।
সারাবাংলা/আরএফ/এসএস