শুচি হোক ধরা… তবে এই হোক আহ্বান
১৩ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪৯
শুচি হোক ধরা… তবে এই হোক আহ্বান। সম্ভবত এটাই নতুন বছরের জন্য সবচেয়ে সঠিক আহ্বান। নুসরাতের মৃত্যু বাংলা ১৪২৫’র শেষভাগটিতে কার না মন বিষিয়ে তুলেছে? নববর্ষের আনন্দ উদযাপনে সে মৃত্যুমুখ, অসহায় ছোট্ট মেয়েটির সেই হাহাকার করা শব্দগুলো অনেকেরই কানে বাজবে। তখন সবার মনে হবে, ধরণীতলে ঘটে গেছে যে অন্যায়, তার শুচি হওয়ার প্রয়োজন। তবে তারপরেও নতুন বছর… নতুন বছরের নতুন সূর্য, সেতো সকলেরই জন্য আনন্দের।
আসলে নতুন বছর যখন আসে তখন মন প্রাণ এক অজানা আনন্দে মাতোয়ারা হতে থাকে। আবহমান বাংলার বৈশাখ সবার জন্যই সমান। সে নিয়ে আনন্দও সমান। কি শহর, কি গ্রাম? সবখানেই চলে এক আনন্দ আয়োজন। কালের পরিক্রমায় একটি বছর হারিয়ে গেলেও একটি নতুন ভোর সবার মনে আশা জাগানিয়া ডাক দেয়। সে ডাকে লাল সাদায় ঝলমলে হয়ে, চনমনে মন নিয়ে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে পড়ে। মেলায় যায়। বৈশাখের গান গায়।
এই বৈশাখের গান আমরা গাই… এসো হে বৈশাখ এসো এসো বলে প্রাণের আহ্বানে বরণ করে নেই নতুন বছর। আর সে গাওয়া এবং নেওয়ার মধ্যেই নিহিত বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বাঙালির আচার-আচরণ। এখানেই বাঙালির উৎসব প্রিয়তার প্রকাশ। এখানেই আমরা অতি আধুনিক সময়েও, অতি পুরোনো দিনের সময়ের সাথে মিলে যাই, মেলাই। আমরা তো উৎসব প্রিয় এক জাতিই। আমরা তো ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেই ভালোবাসি। আমরাতো সেই দিন চাই যেখানে সবাই একসাথে মিলেমিশে আনন্দ করবে। সকল স্রোত এসে মিসবে এক মেলার স্রোতে। সেখানে বাজবে মোহনীয় বাঁশি… ঢোলকের তাল আমাদের উত্তাল করে তুলবে। আমরা নাচবো, গাইবো, প্রাণ খুলে হাসবো। সাঁঝের বেলায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরবো। তাতেই আমাদের আনন্দ।
কিন্তু তার মাঝেও আমরা এমন কিছু হতে দেখি যা আমাদের ব্যাথিত করে। এমন ঘটনা ঘটে, যা আমাদের উৎসবকে ব্যহত করে। এমন কিছু ঘটে যা আমাদের আবহমান সংস্কৃতিকে বিকৃত করে। আর সর্বোপরি আমাদের বিব্রত করে।
আমরা নুদরাত কিংবা নুসরাতদের অমন মৃত্যু দেখতে চাই না। আমরা সিরাজ-উদ-দৌলার মতো ভণ্ড, নোংরা মনের ধর্ম ব্যবসায়ী দেখতে চাইনা। নুর উদ্দীন কিংবা মাসুম বিল্লাহর মতো বিপথে যাওয়া, বিকৃত মন আর বিদ্যাবিমুখ ধর্ষকামী তরুণদের দেখতে চাই না।
এসব থেকে মুক্ত হোক দেশ। এমন বিকৃত মনের মানুষগুলো সমাজ থেকে হোক বিতাড়িত। তাদের মন প্রাণ দেহ শুচি হোক। মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা… অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্বাগত ১৪২৬।
সারাবাংলা/এমএম