সিঙ্গাপুরের অ্যাপাক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে দুই বাংলাদেশি জুরি
২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:০৩
সারাবাংলা রিপোর্ট
ঢাকা: প্রতিবছর সিঙ্গাপুরে বসে মিডিয়া এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ড উৎসব। এবছরও আগামী ১৫ মার্চ বসবে সে আসর। যাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শত শত মিডিয়া কর্মী অংশ নেবেন, জিতবেন ডজন ডজন ক্যাটেগরিতে নানা মর্যাদার পুরস্কার। মেতে উঠবেন উৎসবে। এই আয়োজনে বাংলাদেশেরও রয়েছে অংশ নেওয়ার সুযোগ। তবে সে খবর দিতে নয়, এখনকার মতো খবর হচ্ছে- এবারের এই অ্যাপাক অ্যাওয়ার্ডের বিচারক প্যানেলে রয়েছেন দুইজন বাংলাদেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এরা হচ্ছেন -গাজী টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ ফয়েজ ও গ্রামীণফোনের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড স্পন্সরশিপ শিকদার আখতার-উজ-জামান।
ফেস্টিভাল অব মিডিয়া অ্যাপাক অ্যাওয়ার্ডস এর অফিসিয়াল সাইটে জুরি বোর্ডের অন্য বিচারকদের সাথে রয়েছে এই দুই বাংলাদেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্বের নাম ও ছবি।
বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ নিয়ে কাজ করেন এমন মিডিয়া কর্মীরা এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করতে পারছেন। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকাশিত বা প্রচারিত মিডিয়া সম্পর্কিত কাজগুলোই এতে পাঠানো যাচ্ছে।
মিডিয়া বায়িং, ব্র্যান্ডিং, পরিকল্পনা, সৃষ্টিশীলতা এবং সার্বিকভাবে তার মাধ্যমে নিয়ে আসা পরিবর্তনই দেখা হয় এই অ্যাওয়ার্ডের প্রতিযোগীদের মধ্যে। মিডিয়া জগতে সেরা সেরা উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছেন এমন মানুষগুলো তাদের কাজ যেমন জমা দেন, তেমনি তারা জড়োও হন এই অ্যাওয়ার্ড উৎসবে। সে হিসাবে মার্চের এই মধ্য দিনটিতে মিডিয়া কর্মীদের মিলন মেলা বসবে সিঙ্গাপুরে।
ওই উৎসবেও থাকবেন আমান আশরাফ ফয়েজ ও শিকদার আখতার-উজ-জামান।
বিশ্বের দেশে দেশে মিডিয়া শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে বিচারক প্যানেল তৈরি করে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এই মিডিয়া ফেস্টিভাল এ্যাওয়ার্ড কতৃপর্ক্ষ। সেই তালিকায় স্থান পাওয়া প্রসঙ্গে সারাবাংলার কথা হয় দুই বাংলাদেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সঙ্গেই।
আমান আশরাফ ফয়েজ বলেন, উৎসবে অংশ নেওয়া একটি দারুণ বিষয়, তবে এবছরের জন্য বিষয়টি আরও একটু অন্যরকম হবে কারণ কর্তৃপক্ষ আমাকে এর বিচারক প্যানেলের অংশ করেছে।
‘এই বিচার কাজটি অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে সম্মৃদ্ধ করেছে। সেরা সেরা কাজগুলো যেমন দেখতে পাচ্ছি, তেমনি একটা অনুপ্রেরণার অনুভূতিও কাজ করছে। অনুপ্রেরণা এই যে, একটা আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি।’
আমান আশরাফ জানান, ২০১৭ সালের ফেস্টিভাল অব মিডিয়া অ্যাপাকের জন্য তাদের একটি প্রজেক্ট সাবমিশন ছিলো, সেটি শেষ পর্যন্ত পুরস্কার না জিতলেও অনেকটা নিজের উৎসাহেই তিনি উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন অভিজ্ঞতা নেওয়ার আগ্রহে। সেখানেই তার কথা হয় আয়োজকদের সঙ্গে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হয়। আর তারই সূত্র ধরে পরে কর্তৃপক্ষ তাকে এই আয়োজনের বিচারক করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
প্যানেলের অপর বাংলাদেশি জুরি শিকদার আখতার-উজ-জামান সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্ব পরিমণ্ডলে কাজ করার এটি একটি বড় সুযোগ আর অনুপ্রেরণাও বটে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজগুলো কতদূর এগিয়েছে তা দেখার ও বোঝার সুযোগটাও পাচ্ছি। যা নিজের ক্রিয়েটিভ ভাবনাকে আরও শাণিত করছে বলেই আমার বিশ্বাস, বলেন আখতার-উজ-জামান।
মিডিয়া অ্যাপাক অ্যাওয়ার্ডের অংশ নেওয়া গর্বের, এমনটা মন্তব্য করে তিনি বলেন, মিডিয়া শিল্পে দীর্ঘ ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা, নেতৃর্ত্ব, মেধা, সৃজনশীলতা আর অনেক উদ্ভাবনী সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত ছিলাম বলেই হয়তো অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে জুরি বোর্ডে যুক্ত করেছে।
আগামী ১৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে এই প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্ব।
সারা বিশে^র বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী সংস্থা, কনটেন্ট ক্রিয়েটিভ হাউজ, প্রোডাকশন হাউজ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে। তাদের সবচেয়ে সৃজনশীল বিজ্ঞাপনগুলো নিয়ে হাজির হবে। সুতরাং আয়োজনটি কেবল আকর্ষণীয় হবে তা নয়, হবে শিক্ষনীয়ও, সারাবাংলাকে বলেন আমান আশরাফ ফয়েজ ও আখতার-উজ জামান।
এবছর মিডিয়া বিভাগে যে কটি ক্যাটেগরিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে সেরা মাল্টি-স্ক্রিন ক্যাম্পেইন, সনাতনী মিডিয়ার সেরা ব্যবহার, সেরা কমিউনিটি স্ট্রাটেজি, সেরা এনগেজমেন্ট স্ট্রাটেজি, সেরা স্পন্সরশিপ ক্যাম্পেইন, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের সেরা ক্রিয়েটিভ ব্যবহার, সেরা কার্যকারিতা অ্যাওয়ার্ড, সেরা স্যোশাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, রিয়েল-টাইম মার্কেটিংয়ের সেরা ব্যবহার।
কনটেন্ট ক্যাটেগরিতে পুরস্কার থাকছে তিনটি। সেরা ব্র্যান্ডেড কনটেন্ট, কনটেন্টের সেরা ব্যবহার ও ইনফ্লুয়েন্সারের সেরা ব্যবহার।
প্রযুক্তি বিভাগে গেমিফিকেশনের সেরা ব্যবহার, ডিজিটাল মিডিয়ার সেরা ব্যবহার, মোবাইলের সেরা ব্যবহার, প্রযুক্তির সেরা ব্যবহার।
ইনসাইট অ্যাওয়ার্ডগুলোর মধ্যে থাকছে ড্যাটার সেরা ব্যবহার, নতুন ব্র্যান্ড, ই-কমার্স, মুনাফার জন্য নয় এমন ক্যাম্পেইন, আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের স্থানীয় ব্যবহার, ক্যাম্পেইন লঞ্চিং, সেরা টার্গেটেড ক্যাম্পেইন এগুলো।
এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, ওসেনিয়া অঞ্চলের সেরা মিডিয়া ক্যাম্পেইন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে এই আয়োজন থেকে।
আমান আশরাফ বলেন, যখন আমরা এই বিচারের কাজ করছি তখন দেখছি এই ক্যাম্পেইনগুলো কতটা গেম-চেঞ্জার, এগুলো জটিল নাকি খুব সহজ, এগুলো থেকে কাঙ্খিত ফল আসছে কি না? কিংবা এমন কিছু এসেছে যা কল্পনাও করা হয়নি। আইডিয়াটি কেমন, কোন ধরনের মিডিয়া ব্যবহার করা হলো, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো কি হতে পারে এসব কিছুই বিবেচনায় নিয়ে বিচার সম্পন্ন করা হয়।
জুরিরা ক্যাম্পেইনের ইনসাইট, স্ট্রাটেজি ও এক্সিকিউশন তিনটাই দেখবেন তেমনি এর ফলটাও বিবেচনায় রেখে বিচার কাজটি সম্পন্ন করবেন, এটা একটা বড় দায়িত্বশীলতা, বলেন শিকদার আখতার-উজ-জামান।
সারাবাংলাকে আমান আশরাফ জানান, এ বছর তারা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, ভারত, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের কনটেন্ট হাতে পেয়েছেন যেগুলোর ওপর তাদের মতামত ও মার্কিং করছেন। তিনি বলেন, বিদেশি একটি কাজ যখন আমরা মূল্যায়ন করতে যাচ্ছি তখন তার মান ও শ্রেষ্ঠত্বের দিকগুলো আমাদের কাছে নতুন শিক্ষা হিসেবে ধরা দিচ্ছে। এর ভিত্তিতে আমরা আমাদের কাজের মানও বাড়াতে পারব।
আমান আশরাফ ও আখতার-উজ জামান দুজনই সারাবাংলাকে জানান, বাংলাদেশ থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বাংলাদেশেও এমন অনেক ভালো কাজ হয়, যা এখানে পুরস্কায় জয় করতে পারে, মত তাদের।
এ বছরের জন্য অ্যাওয়ার্ডে প্রতিযোগী হওয়ার সুযোগ এই পর্যায়ে আর নেই, তবে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়বে বলেই প্রত্যাশা করেন তারা।
সারাবাংলা/এমএম