Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আত্মপ্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা ৭ নারী


২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৪৫

আত্মপ্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা ৭ নারী

মানবসভ্যতার শুরু থেকেই পরিবার, সমাজ, দেশ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীর সম্পৃক্ততা ছিল। নারীর অবদান তাই সবক্ষেত্রেই। শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে সারা পৃথিবীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে গেছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা কাজ করছেন, আবার শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শনের জায়গাও করেছেন সমৃদ্ধ।

আজকে এমনই সাতজন নারীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যারা চলচ্চিত্র, ব্যবসা, আইনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। শুধু তাই নয়, নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এভাবেই সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অনন্য স্থান অধিকার করে নিয়েছেন এই নারীরা।

বিজ্ঞাপন

কালচার ট্রিপে প্রকাশিত জুলিয়া ওয়াইট্রাজেক এর লেখাটি সংরাবাংলার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন তিথি চক্রবর্তী।

 

পিপ জেমিসন, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, দ্য ডটস
লন্ডনে কর্মরত

পিপ জেমিসন ‘দ্য ডটস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কিছুটা ভিন্ন।
জেমিসন তার এক সাক্ষাৎকারে জানান, সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করাই তার প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। তিনি সুপ্ত প্রতিভার প্রকাশ ঘটানোর লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষকে কাজ দিয়ে মূল্যায়ন করেন। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা—এসব তার কাছে বড় নয়।

পিপ জেমিসন, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, দ্য ডটস

পিপ জেমিসন, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, দ্য ডটস

তার প্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি নেওয়া হয় না। এর কারণ হলো, নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের নাম, ঠিকানা, ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন রাখা, যেন নিয়োগে কোনো অনিয়ম না হয়।

বিজ্ঞাপন

 

মিনু ভাদেরা, উইমেন অন হুইলসের প্রতিষ্ঠাতা
নয়াদিল্লিতে কাজ করছেন

ভারতে নারী অধিকার নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন মিনু ভাদেরা। ২০০৮ সালে দিল্লিতে নারীদের নিরাপদ যানবাহনের সুবিধার জন্য চালু করেন ‘ফিমেল ট্যাক্সি’ সেবা। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠান উইমেন অন হুইলসে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে নারীরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। মিনু ভাদেরা অন্তত ৬০০ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন।
উইমেন অন হুইলসের দুটি বিভাগ আছে। এর একটি হলো ‘আজাদ’। এই বিভাগ নারীদের গাড়ি চালানো শেখায়। গাড়ি চালাতে পারলে ‘শাখা’ নামের আরেকটি বিভাগে এই নারীদের যুক্ত করা হয়।

মিনু ভাদেরা, উইমেন অন হুইলসের প্রতিষ্ঠাতা

মিনু ভাদেরা, উইমেন অন হুইলসের প্রতিষ্ঠাতা

মিনু ভাদেরার এই উদ্যোগ দিল্লি ছাড়াও কলকাতা, আহামেদাবাদ, ব্যাঙ্গালোর ও ইন্দোরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে মিনু বলেন, ‘অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই অনেক নারী আসেন উইমেন অন হুইলসে। এই নারীরা কিছু করার আশা নিয়েই এখানে আসেন।’

 

কোরিনা অ্যান্ত্রোবাস, প্রতিষ্ঠাতা, বেচডেল টেস্ট ফেস্ট
লন্ডনে কর্মরত

কোরিনা অ্যান্ত্রোবাস ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। নারীর সমতা নিয়ে কাজ করছেন। #মিটু আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি নারী অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন সোচ্চার। কোরিনা অ্যান্ত্রোবাস নারী চরিত্রকে প্রধান করে কিছু চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন । এই চলচ্চিত্রগুলোর লন্ডনের ‘বেচডেল’ নামের একটি উৎসবে প্রদশর্নী হয়। এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ‘এলিসন বেচডেল’ নীতি অনুসরণ করে। এলিসন বেচডেল নীতি হলো, কোন চলচ্চিত্রে নারী চরিত্র কতটুকু উপস্থাপিত হলো, তা পর্যালোচনা করা।

কোরিনা অ্যান্ত্রোবাস, প্রতিষ্ঠাতা, বেচডেল টেস্ট ফেস্ট

কোরিনা অ্যান্ত্রোবাস, প্রতিষ্ঠাতা, বেচডেল টেস্ট ফেস্ট

কোরিনা অ্যাস্ত্রোবাস নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নানা ধরনের সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখেন। বেচডেল উৎসবে নারী নির্মাতাদের জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। এছাড়া এই উৎসবে নারী নির্মাতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

 

অ্যালভি স্মিথ, আহ্বায়ক, ৮ম সংশোধনী বাতিল জোট
আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতকে বৈধতা দিয়ে আইন পাস হয়। গত বছরের ২৬ মে ৮ম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে এই আইন কার্যকর হয়েছে। গর্ভপাত আইন বাতিল চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আয়ারল্যান্ডের নারীরা আন্দোলন করেছেন। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন অ্যালভি স্মিথ। তিনি গর্ভপাত আইনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। ৮ম সংশোধনী বাতিল জোটের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।

অ্যালভি স্মিথ, আহ্বায়ক, ৮ম সংশোধনী বাতিল জোট

অ্যালভি স্মিথ, আহ্বায়ক, ৮ম সংশোধনী বাতিল জোট

নতুন আইন কার্যকরের আগে আয়ারল্যান্ডের নারীরা নিজের সিদ্ধান্তে গর্ভপাত করতে পারতেন না। গর্ভপাতের অনুমতি না পাওয়ায় অনেক নারী মারাও গিয়েছিলেন। ২০১২ সালে সবিতা হরপ্পানাবারের মৃত্যুর পর আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে গণভোটের আয়োজন করা হয়। এরপর দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে ওই সংশোধনী বাতিল হয়।

আন্দোলনে বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে অ্যালভি স্মিথ বলেন, ‘আমি মুক্তির আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।’

 

নাজিন বালচ, চলচ্চিত্র পরিচালক
পাকিস্তানের ল্যারি শহরে কর্মরত

নাজিন বালচ একজন পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার চলচ্চিত্র Lyari, Prison without wall ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বালচের চিন্তার প্রখরতার ছাপ পাওয়া যায় এই চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটি অনেক পুরস্কার লাভ করে।

পাকিস্তানের করাচির প্রত্যন্ত এলাকা ল্যারিতে চলচ্চিত্রের শুটিং হয়। একটি পরিবারের কাহিনী নিয়েই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়।
পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে জায়গা করে নিয়েছেন নাজিন বালচ। সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরাই কতৃত্ব করছেন। কিন্তু নিজের একাগ্রতা ও চিন্তার প্রখরতা বেলুচ নাজিনকে এই শিল্পে করেছে অনন্য, ধীরে ধীরে সবার কাছে হয়ে উঠেছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

নাজিন বালচ, চলচ্চিত্র পরিচালক

নাজিন বালচ, চলচ্চিত্র পরিচালক

চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি নারীদের নিয়ে কাজ করতে চান। নাজিন বালচ বলেন, ‘নারীদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। ২০ জন পুরুষের সঙ্গে একজন নারী কাজ করবেন, এমন ব্যাপার কখনোই কাম্য নয়।’

গতানুগতিক গানপ্রধান চলচ্চিত্র থেকে বেরিয়ে এসে তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান।

ম্যান্দখাই জারগলসেইক্যান, ফ্যাশন ডিজাইনার
লন্ডন ও মঙ্গোলিয়ায় থাকেন

ম্যান্দখাই জারগলসেইক্যান তার পোশাক তৈরির কারখানায় সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রধানত নারীদের। তার প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০ ভাগ কর্মকর্তাই নারী। এর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।

১৯৯৩ সালে কমিউনিস্ট শাসনের পরবর্তী সময়ে মঙ্গোলিয়ায় চালু করেন পোশাক তৈরির কারখানা। এটিই ছিল মঙ্গোলিয়ায় কাপড়ের প্রথম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

শুরুর দিকে তিনি ও তার সহযোগীরা পোশাক তৈরির জন্য ‘ম্যান্দখাই’ নামের এক ধরনের তন্তু সংগ্রহ করতেন। এই তন্তু থেকে তৈরি হতো সুতা। এছাড়া ছাগলের লোম থেকে তৈরি করতেন উল। এভাবে প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে তিনি গড়ে তুলেছিলেন পোশাক কারখানা।

ম্যান্দখাই জারগলসেইক্যান, ফ্যাশন ডিজাইনার

ম্যান্দখাই জারগলসেইক্যান, ফ্যাশন ডিজাইনার

তার প্রতিষ্ঠান এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ২০১৯ সালে তার পোশাকের ব্যান্ডকে পাকিস্তানের ‘অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ম্যান্দখাই জারগলসেইক্যান জানান, শুধু মঙ্গোলিয় ধাঁচেরই নয়, পশ্চিমা পোশাক নিয়েও কাজ করার জন্য নতুন প্রজন্ম ও শিল্পীদের আগ্রহী করে তুলছেন তিনি।

 

আরিয়া ওয়েলশ, মিস ট্রান্সজেন্ডার, যুক্তরাজ্য
স্কটল্যান্ডের পার্থে থাকেন

আরিয়া ওয়েলশ যা বিশ্বাস করেন, জীবনে তা ধারণ করেন। নিজের মতো জীবনকে উপভোগ করতে পছন্দ করেন। ‘আমার আমি’ হওয়ার সাধনা তার সারা জীবনেই। এ কারণে ২০১৫ সালেও নিজের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিলেন পুরুষ থেকে নারী হবেন। ব্যস, হয়েও গেলেন। এরপর হারালেন স্ত্রী, চাকরি, বন্ধু-বান্ধব এমনকি পোষা কুকুরটিও। সবকিছু হারিয়েও তিনি বিশ্বাস করেন, যা করেছেন তা জেনে-বুঝেই করেছেন। এজন্য কোনো আক্ষেপ নেই তার।

আরিয়া ওয়েলশ, মিস ট্রান্সজেন্ডার, যুক্তরাজ্য

আরিয়া ওয়েলশ, মিস ট্রান্সজেন্ডার, যুক্তরাজ্য

আরিয়া ওয়েলশ থেমে থাকেননি কখনো। সম্প্রতি তিনি অংশ নিয়েছিলেন মিস ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম হলো, অংশগ্রহণকারীকে অবশ্যই একটি দাতব্য কাজের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং কাজটি করতে হবে। আরিয়া ওয়েলশ নবজাতকদের জন্য ফান্ড গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন এবং তা ভালোভাবে করেন। ফলে এই প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন এবং ১০ হাজার ইউরো পান। আর তাকে দেওয়া হয় ‘মিস ট্রান্সজেন্ডার’ উপাধি।

ভবিষ্যতে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চান আরিয়া ওয়েলশ।

 

সারাবাংলা/টিসি/এমএম

বিশ্বসেরা ৭ নারী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর