ক্লিকে ক্লিকে ঈদ শপিং
২৭ মে ২০১৯ ০৭:৪৬
ঢাকা: প্রতি বছরই রমজান মাসে ঢাকার একই চিত্র থাকে। সেই একই যানজট, অফিস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা আর পথের ক্লান্তি। সব মিলিয়ে অনেকেই ঈদের কেনাকাটার জন্য সময় বের করতে পারেন না। ফলাফল হিসেবে দেখা যায় ঈদের দুদিন আগে কোনোরকমে কেনা হয় পোশাক বা অন্যান্য অনুষঙ্গ। যা হয়ত মন মতোও হয় না। তবু কিনতে হয় বলেই কেনা হয়।
তবে গত কয়েকবছরে এই দৃশ্য কিছুটা পাল্টেছে। মানুষের পথের ভোগান্তি দূর করতে হাজির হয়েছে অনলাইন শপগুলো। এক্ষেত্রে ঘরে, অফিসে বা যানজটের মধ্যে বসেও শুধু একটি মাত্র ক্লিকে আপনি অর্ডার করতে পারবেন পছন্দের পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, গয়না থেকে শুরু করে মশলা বা মাংস পর্যন্ত।
ছবি দেখে পণ্য পছন্দ করবেন আর এক ক্লিকে করবেন অর্ডার। এরপর সময়মতো সেই পণ্য হাজির হয়ে যাবে আপনার দোরগোড়ায়। কিছু কিছু অনলাইন শপ রিটার্ন অপশনও রাখে। যেখানে, সাইজে না মিললে তারা আবার বদলে দিয়ে যাবে পোশাক বা জুতো। আর এর কোনোটার জন্যই আপনাকে দোকানে দোকানে হাঁটতে হবে না। ডেলিভারিম্যানরা পণ্য নিয়ে চলে আসবেন আপনার বাড়ি বা অফিসেই।
কেমন চলছে অনলাইন শপগুলোর ঈদ আয়োজন? জানতে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় কয়েকটি অনলাইন শপের ডিজাইনার ও কর্ণধারদের সঙ্গে।
রোজার ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন পোশাক নকশা করেছেন অনলাইন শপগুলোর ডিজাইনাররা। কেউ কেউ দিচ্ছেন বিশেষ ছাড়। কোনো কোনো অনলাইন শপ দিচ্ছেন বিভিন্ন অফার।
রংধনু ক্রিয়েশন
রংধনু ক্রিয়েশনের কর্ণধার ও ডিজাইনার শাহনাজ সুলতানা বলেন, এবছর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঈদ হবে। তাই গরমের কথা মাথায় রেখে কাজ করার জন্য সুতি কাপড়কেই বেছে নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে কাজ করছেন হ্যান্ডলুম কটন কাপড়ে। বাচ্চাদের জন্য এনেছেন হাল্কা ছিমছাম হাতে আঁকা ফ্রক, পাঞ্জাবি, ফতুয়া।
রংধনু ক্রিয়েশনের সিগনেচার আইটেমের মধ্যে আছে দেশি সুতি কাপড়ের কাফতান। বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙ এর কাফতানে রয়েছে হাতে আঁকা নানা রকম মোটিফ।
বরাবরের মত দারুণ সব হাতে আঁকা শাড়ির কালেকশন রয়েছে শাহনাজের। এজন্য বেছে নিয়েছেন মসলিন, সিল্ক, হাফসিল্ক এবং সুতি শাড়ি। এসব শাড়িতে আঁকা হয়েছে নানা রকমের ফুল। নানান ঋতুর সব দেশি ফুল প্রাধান্য পেয়েছে এবার। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কদম সবই মিলবে রংধনু ক্রিয়েশনের শাড়িতে।
এছাড়া হাতে তৈরি বিডসের গয়না ও ব্রুচ পাওয়া যাবে এই অনলাইন দোকানে। ঈদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে একেবারে ছোট্ট বাচ্চাদের জন্য জামা আর জুতার সেট। উপহার হিসেবে এটা যেমন অভিনব তেমনি পরিবারের সবচেয়ে নতুন সদস্যের ঈদকে পূর্ণতাও দেবে হাতে আঁকা এই জামা জুতা।
ওয়্যারহাউজ
আরেক অনলাইন দোকান ওয়্যারহাউজের কর্ণধার তাসনিম ফেরদৌস জানান, প্রতিবারের মতো এবারও কাঠের ব্লক করা ডুডল ইনসপায়ার্ড পোশাক এনেছেন তারা। মূলত সুতি কাপড়ের ওপর কাজ করলেও এবার ঈদ উপলক্ষে কিছু সিল্ক আর মসলিনের সালোয়ার কামিজ সেট এনেছে ওয়্যারহাউজ। এবারের ঈদের কাজের অনুপ্রেরণা নিয়েছেন গোলাপসহ বিভিন্ন ফুল ও পাতা থেকে।
তাসনিম বলেন, যেহেতু এখন অনেক গরম, তাই কাপড় নির্বাচনের সময় সেটা মাথায় রেখেছেন। পিওর কটন, খাদি আর দেশি সিল্ক ব্যবহার করেছেন। পোশাক হিসেবে আছে স্টিচড সিঙ্গেল কামিজ, ডাবল সাইডেড কোটিসহ নানা কিছু। এই ডাবল সাইডেড কোটিগুলো বেশ মজার। সোজা বা উল্টো দুইভাবেই পরা যায় এগুলো।
ওয়্যারহাউজের ফেসবুক পেজ থেকে যে কেউ পোশাক পছন্দ করে অর্ডার করতে পারবেন। অর্ডারের তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের যে কোনো স্থানে পণ্য পেয়ে যাবেন। ওয়্যারহাউজের পোশাকগুলোর দাম ১২০০ থেকে ৩৩৯০ টাকার মধ্যে।
অংশু
ঈদে যারা দেশি কিন্তু একটু ভারী বা গর্জিয়াস পোশাক চান তারা ঘুরে আসতে পারেন অংশুর ফেসবুক পেজ থেকে। অংশু মূলত দেশি সিল্ক, কাতান আর বেনারসি নিয়ে কাজ করে।
তবে এবার ঈদে বিশেষ চমক রয়েছে অংশুতে। এর কর্ণধার তানজিনা হক বললেন, ‘আশির দশকের প্রায় সব মায়েদেরই বোধহয় সিম্পল স্ট্রাইপের জাপান সিল্ক শাড়ি ছিল। এগুলো ছিল ভীষন সিম্পল কিন্তু সেইসঙ্গে দারুণ এলিগ্যান্ট। ভাবলাম, মেয়েদেরই বা সেই শাড়ি থাকবে না কেন? সেই ভাবনা থেকেই নতুন ধরনের শাড়ির নকশা করেছি।’
শাড়িটা মসলিনের মতন অসম্ভব সূক্ষ্ম তন্তুর। পুরো শাড়ির ওজন ১০০ গ্রাম বা তার চেয়ে কিছু বেশি বলে জানালেন তানজিনা। বললেন, এই শাড়ি বুনতে গিয়ে তাঁতীদের নাস্তানাবুদ অবস্থা। এত সুক্ষ তন্তু নিয়ে কেউ কাজ করতে শুরুতে কেউ রাজিই হচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পর শাড়িটা তৈরি হয়ে হাতে এসেছে জানিয়ে তানজিনা বলেন, কেউ চাইলে এখন অর্ডার করলে তাকে ঈদের আগেই পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
কইন্যা
যারা উপহার দেওয়ার জন্য শাড়ি বা কামিজ পিস ঘুরছেন তারা ঘুরে আসতে পারেন কইন্যা’র ফেসবুক পাতা। হাফসিল্ক আর সুতির ওপর কাঠব্লকের ভিন্নধর্মী কাজগুলো আপনার নজর কাড়বে।
কইন্যার কর্ণধার ও ডিজাইনার বাধন মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, তারা মূলত গরমকে সামনে রেখে পোশাক নকশা করেছেন। বিশেষ করে এই গরমে ঈদের সকালে পরার জন্য তাদের পোশাকগুলো খুবই আরামদায়ক হতে পারে। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য কইন্যা এনেছে আরামদায়ক ম্যাটারনিটি ওয়্যার। যেহেতু এবার ঈদের সময়টা বেশ গরম তাই যারা ঈদে আরামদায়ক কিছু খুঁজছেন তারা বেছে নিতে পারেন স্টিচড এই পোশাকগুলো। বিশেষ এই পোশাকগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন নতুন মায়েরা যে কোনো জায়গায় গিয়ে সহজেই শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। ফলে নতুন মায়েরা ঈদে কোথাও বেড়াতে গেলেও বিড়ম্বনায় পড়বেন না।
বিজেন্স
ভিন্নধর্মী পোশাকের জন্য অনলাইন মার্কেটে সবসময়ই বিজেন্সের নাম ছিল। ঈদেরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানালেন বিজেন্সের অন্যতম ডিজাইনার জিনাত জাহান নিশা।
নিশা বলেন, ঈদের সময় ক্রেতা চাহিদা মাথায় রেখেই পোশাকের নকশা করেছেন তারা। এজন্য বেছে নিয়েছেন কাতান আর সিল্ক কাপড়কে। তবে সুতির ওপরেও কাজ করেছেন। মূলত এসব পোশাকের ওপর স্ক্রিন প্রিন্ট ও ব্লক প্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। সবসময়ই বিজেন্সের ব্লক বা স্ক্রিনের নকশায় নতুনত্ব থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানালেন নিশা।
এছাড়া যারা শাড়িতে স্বচ্ছন্দ্য নন বা গরমে শাড়ি পরতে চান না তাদের জন্য একটু অন্যধরনের কাটের কামিজ বা কুর্তি এনেছে বিজেন্স। ঈদের আগে বিজেন্সের ফেসবুক পেজে অর্ডার দিয়ে যে কেউ সংগ্রহ করতে পারবেন এসব পোশাক।
ফেব্রিকার্ট
অনলাইন মার্কেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দেশের যে কোনো স্থানে বসেই ব্যবসা করা যায়। নিজের মেধা আর দক্ষতাকে অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে দেওয়া যায়।
তেমনই একটি বুটিকশপ ফেব্রিকার্ট। মূলত খুলনাভিত্তিক অনলাইন বুটিক এটি, তবে এখন খুলনা শহরেই আছে তাদের আউটলেট। আর ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে দেশের যে কোনা স্থানের মানুষ পেতে পারেন ফেব্রিকার্টের পোশাক।
ফেব্রিকার্টের কর্ণধার আকসা হৈম জানালেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্যাটালগের পণ্যও পাওয়া যায় তার তার দোকানে। তবে একেবারে নিজেদের ডিজাইনের দেশি পোশাকের চাহিদাও অনেক। হৈম বলেন, ‘বিদেশি প্রোডাক্ট এর ভীড়ে যখন অনেকে দেশি নিজস্ব প্রোডাক্ট খুঁজতে আসেন, তখন এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। আর সেই ভালো লাগা থেকেই এবার ঈদে নিজেদের নকশার শাড়ি, সালোয়ার কামিজ আর পাঞ্জাবি এনেছে ফেব্রিকার্ট।’
তাদের এবারের ঈদ কালেকশনে রয়েছে হাতে কাজ করা করা সিল্ক নকশি শাড়ী, নকশি সিঙ্গেল পিস, হাতের কাজ আর কাঠ ব্লকের সমন্বয়ে করা সালোয়ার কামিজ সেট, এমব্রয়ডারি কাজের শাড়ী, সালোয়ার কামিজ, এপ্লিকের কাজের শাড়ি, মসলিস শাড়ি এবং সুতি কাপড়ে করা স্ক্রিনপ্রিন্টের পাঞ্জাবি।
ঈদ কালেকশনে ক্রেতাদের দারুণ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন হৈম। বিশেষ করে দেশি পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহই কাজ করতে প্রেরণা জাগায় বলে জানান তিনি।
অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুকে এখন হাজারও পেজ। সেখান থেকে কয়েক ক্লিকের মাধ্যমেই ক্রেতারা কিনতে পারেন প্রয়োজনীয় পণ্য। তবে অনলাইনে শপিং করার আগে ক্রেতাদের কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যেমন, যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনছেন তারা আসল পণ্য সরবরাহ করে কি না। কোনো পণ্য কেনার সময় আসল ছবি দেখে নিন, অনেক সময়ই অর্ডার করা পণ্যের সঙ্গে হাতে পাওয়া পণ্যের মিল থাকে না। সেজন্য কেনার আগে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নিন।
অনেক পণ্যই আগে থেকে পেমেন্ট করতে হয়। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। যে পেজ থেকে পণ্য কিনবেন তার রিভিউ এবং রেটিংস দেখে নিন। কিংবা পরিচিত কেউ কিনে থাকলে তার অভিজ্ঞতা জেনে নিন।
অনেকেই অনলাইনে পণ্য কিনে ঠকেছেন বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু এই অনলাইনে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন বহু ব্যবসায়ী। গুটিকয়েক প্রতারকের জন্য তাদেরকেও অবিশ্বাস করাটা ঠিক হবে না। তাই ক্রেতাদের প্রতি পরামর্শ যাচাই করে পণ্য কিনুন।
সারাবাংলা/এসএমএন/টিসি
অনলাইন শপিং অংশু ঈদ শপিং ওয়্যারহাউজ কইন্যা ফেব্রিকার্ট বিজেন্স রংধনু ক্রিয়েশন