Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাকসিনে আস্থা কমেছে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের


২০ জুন ২০১৯ ০৭:২৯

গুটি বসন্ত, পোলিও অথবা হামের মতো রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ব্যবহার আধুনিক চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ওঠে এসেছে অবাক করার মতো তথ্য। ভ্যাকসিন কার্যকর নয় এমন প্রচলিত ভুল ধারণার বৃদ্ধি ও এ বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ভয়ের কারণে সারাবিশ্বে ভ্যাকসিন ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে, বিশেষ করে হাম রোগের ক্ষেত্রে। কোথাও কোথাও এই নির্ভরতার হার শতকরা সর্বনিম্ন ৫০ ভাগ। তবে কোথাও আবার সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ পর্যন্ত। ১৪০টি দেশের ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মতামতের জরিপ নিয়ে একথা জানিয়েছে দাতব্য ফাউন্ডেশন ওয়েলকাম ট্রাস্ট।

বিজ্ঞাপন

জরিপ অংশ নেওয়া সবাইকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে দুটি প্রশ্ন। ভ্যাকসিন নিরাপদ কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে শতকরা ৭৯ ভাগ ‘সম্মতিসূচক’ মতামত জানান, ৭ ভাগ বলেন বিশ্বাস করেন না, বাকি ১৪ ভাগ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন। এছাড়া দ্বিতীয় প্রশ্ন, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিষয়ে শতকরা ৮৪ ভাগ আস্থার কথা নিশ্চিত করেন, ৫ ভাগ অনাস্থা জানিয়েছেন, এছাড়া সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন শতকরা ১২ ভাগ।

ওয়েলকাম ট্রাস্টের প্রতিনিধি ইমরান খান বলেন, হাম রোগে ভ্যাকসিনের অনাস্থা নিয়ে আমরা চিন্তিত। শতকরা ৯৫ ভাগের যখন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না তখন রোগটি আশঙ্কাজনকভাবে ছড়াতে পারে। যা এখন আমরা দেখছি।

ইতোমধ্যে দ্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও), ভ্যাকসিন ব্যবহারে মানুষের এই দ্বিধাকে শীর্ষ ১০টি স্বাস্থ্য সমস্যার ১টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংক্রমিত রোগের বিস্তারে ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনীহা চিকিৎসাব্যবস্থাকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি। যদিও ভ্যাকসিনের সফলতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। বসন্তের মতো রোগ ভ্যাকসিনের কারণেই নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া পোলিও প্রায় নির্মূলের পথে।

তবে হামের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়া ও নির্মূল না হওয়ার কারণে ভ্যাকসিন ব্যবহারে অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে ভুল তথ্যের প্রচার ও রোগের ভয় তাদের কাবু করেছে। ফলে ভ্যাকসিনের সফলতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

টিকাদান বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যান লিন্ডস্ট্রান্ড বলেন, ভ্যাকসিন বিষয়ে যে দ্বিধা বা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা ভয়াবহ। বিশেষ করে কিছু জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

হামের বিস্তার রোধে সফলতা এলেও আমেরিকাসহ ইউরোপের বেশি কিছু দেশে পুনরায় এটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে সব অঞ্চলে হামে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। আক্রান্ত এলাকায় ভ্যাকসিন কর্মসূচি জোরদার না হলে এই আশঙ্কা বাড়বেই।

বিজ্ঞাপন

ওয়েলকাম ট্রাস্টের জরিপে দেখা যায়, উচ্চ আয়ের অনেক দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনীহা রয়েছে। যেমন ফ্রান্সে হাম ছড়িয়েছে। দেশটিতে প্রতি তিন জনের এক জন বলেছেন তাদের আস্থা নেই ভ্যাকসিনের ওপর। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে তা কার্যকর হয়না বলেও মত জানায় শতকরা ১৯ ভাগ মানুষ।

পার্শ্ববর্তী দেশ ইতালিতে শতকরা ৭৬ ভাগ জানায় ভ্যাকসিন নিরাপদ। সেদেশের সরকার আইন করেছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে বাবা-মাকে জরিমানা করতে পারে, শিক্ষার্থীর স্কুলে আসা নিষিদ্ধ করতে পারে।

যুক্তরাজ্য চিন্তাভাবনা করছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার। এদিকে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৬ টি রাজ্যে হাম আক্রান্ত ৯৮০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা বেশ ভাবনার!

পূর্ব ইউরোপে শতকরা ৫০ ভাগ ও পশ্চিম ইউরোপে ৫৯ ভাগ মানুষ আস্থা রাখছে না ভ্যাকসিনের ওপর। উল্লেখ্য পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে গত বছর ৫৩ হাজার ২১৮টি হাম আক্রান্তের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া, বেলারুশের ৪৬, মালদোবাতে ৪৯ ও রাশিয়াতে ৬২ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় বিশ্বাস রাখছেন না।

তবে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশে ভ্যাকসিনের ব্যবহার আশাপ্রদ। দক্ষিণ এশিয়ায় ৯৫ ভাগ ও পূর্ব আফ্রিকায় ৯২ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিনে ভরসা রাখছে। বাংলাদেশ এবং রুয়ান্ডা ভ্যাকসিন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। ওয়েলকাম ট্রাস্টের মতে, ভ্যাকসিন প্রকল্পে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় দেশগুলো এই সফলতা পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করছেন, ভ্যাকসিনসহ সব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবে ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমীচীন নয়। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন অকার্যকর উল্লেখ করে ইন্টারনেটে যেসব ভুল তথ্য ঘুরে বেড়ায় সেসব এড়িয়ে চলাই উচিত!

সারাবাংলা/এনএইচ

বিবিসি থেকে অনূদিত

গুটি বসন্ত টপ নিউজ পোলিও ভ্যাকসিন হাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর