এলন মাস্ক রূপকথা
৬ আগস্ট ২০১৯ ১৮:১১
ছেলেকে সাথে নিয়ে তার মা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া থেকে জোহান্সবার্গ হয়ে ভাসতে ভাসতে কানাডায় পৌছান। টরেন্টোতে অল্প টাকায় একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। টানাপোড়েনের সংসার কিন্তু ছেলের চোখ ভরা স্বপ্ন। সে যেতে চায় আমেরিকা। আমেরিকায় আছে প্রযুক্তির সর্বশেষ সব ভার্সন আর নতুন নতুন সব আবিষ্কার। তাই আমেরিকা তার যাওয়া চাই ই চাই।
সেই সুযোগ হাতের ভেতর এসে গেলো একদিন, আমেরিকার বিখ্যাত পেন্সিলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপের চিঠি হাতে পেলেন। কিন্তু হাতে পেয়ে তিনি হতভম্ব। কি করবেন এরপর, কিছুই জানেন না। তবে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় উদ্ভাবনের নেশা, সেই নেশা তিনি দমাতে পারেন না। গল্পের এই ছেলেটিই এলন মাস্ক। আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির রাজপুত্র।
এলন মাস্ক ১৭ বছর বয়সে ২ হাজার ডলার, একটা ব্যাগপ্যাক আর স্যুটকেস ভর্তি বই নিয়ে অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় আসেন। তার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল আমেরিকায় এসে প্রযুক্তির নতুন ট্রেন্ড, আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের খুঁটিনাটি জানা, সে স্বপ্ন সত্যি হলো। কিন্তু তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছুই চেনেন না, জানেন না। শুধু সিলিকন ভ্যালির ঠিকানা জানেন।
প্রযুক্তির সব আপডেট, উদ্ভাবন আর সম্ভাবনা নিয়ে এক মহা কর্মযজ্ঞ চলে সিলিকন ভ্যালিতে। কিন্তু এলন মাস্ক গিয়ে নেটস্কেইপের সামনের লবিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি আবেদন করেছেন এখানে কাজের জন্য, সে আবেদনে কেউ সাড়া দেয়নি। কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজতে থাকেন কিন্তু কারো সাথে কথা বলার মত সাহস করে উঠতে পারেন না। দিনশেষে নতমুখে বাড়ি ফিরে যান।
এসব কিছুর পরে ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তারপর খুঁজে পান ঘুরে দাঁড়ানোর এক নতুন ফর্মূলা। তিনি স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ না করেই চলে আসেন, তখনও তার স্টুডেন্ট লোন ছিল ১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। ভাইয়ের সাথে মিলে জিপটু নামের একটা সফটওয়্যার বানানোর কোম্পানি খোলেন। সফটওয়্যারের মাধ্যমে তারা গণমাধ্যমগুলোকে অনলাইনে আনার কাজ শুরু করেন। অফলাইন গণমাধ্যমের জায়ান্ট নিউ ইয়র্ক টাইমস, হার্টস, নাইট রাইডার্সকে তারা অনলাইনে নিয়ে আসেন। তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। ১৯৯৯ সালে তাদের উপার্জিত মোট অর্থের পরিমান দাঁড়ায় ৩৪০ লাখ ডলার। এরপর অনলাইনের মানি ট্রান্সফারিং জায়ান্ট পেপল থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। পেপলকেও অনলাইন দুনিয়া চেনান এলন মাস্ক। এরপর শুরু করেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান টেসলা আর স্পেসএক্স নির্মানের কাজ। এরমধ্যেই তার খ্যাতি তাকে জড়িত করে দ্য বোরিং কোম্পানি এবং নিউরালিংকের সাথে।
সেই ১৭ বছর বয়সে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে আমেরিকায় আসা এলন মাস্কের এখন বয়স ৪৭ বছর। আর তার সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমেরিকায় এসে এলন মাস্ক যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চেয়েছিলেন সেই নেটস্কেইপে তিনি যাওয়ার সুযোগ পান বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার পর। নেটস্কেইপ তখন ব্যর্থ এক ইন্টারনেট কোম্পানি আর এলন মাস্ক তাদের কিউবিকলে বসে ত্রুটিমুক্ত সফটওয়্যার বানানোর জন্য কোডিং করে যাচ্ছেন।
গল্পটা রূপকথার মতো শোনালেও, এ গল্পই এলন মাস্কের জীবনের গল্প।
এলন মাস্ক কানাডা জোহান্সবার্গ টরেন্টো টেসলা নাইট রাইডার্স নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রিটোরিয়া সিলিকন ভ্যালি স্পেসএক্স হার্টস