অনলাইনে হয়রানির শিকার ৭০ শতাংশ ১৫-২৫ এর মেয়েরা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৭
রাজধানীতে অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৫-২৫ বছর। এই নারীদের বেশিরভাগই যৌন হয়রানি, হ্যাকিং, সাইবার পর্নোগ্রাফি এবং ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার। মত প্রকাশের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯) রাজধানীর আদাবরে উন্নয়ন সহযোগী টিম (ইউএসটি) মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণমাধ্যমে কর্মরত দেশের বিভিন্ন জেলার নারী সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট, নারী মানবাধিকার কর্মী ও সংস্কৃতি কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘প্রযুক্তিকে ভয় নয় বরং এর প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক দিক জেনে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ প্রযুক্তির ব্যবহার জ্ঞান ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। ডিজিটাল লিটারেসি বা প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে অনলাইনে নারীরা নেতিবাচক বিষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।’
ব্যক্তিগত সুরক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও অ্যাপ ব্যবহারের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভূমিকার শুরুতেই ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের’ কথা বলা হয়েছে। অথচ আইনের কোন ধারায় নিরাপত্তার বিধান নাই। তাই অনলাইনে বিচরণের ক্ষেত্রে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে পার্থক্য রাখা জরুরী। আইনী সুরক্ষার আগে অনলাইন ব্যবহারকারীকে প্রযুক্তির কারিগরি দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।’
পুলিশ কর্মকর্তা মিশুক চাকমা বলেন, অনলাইনে হয়রানির শিকার ৭০ শতাংশই নারী। এই নারীদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনের বয়স ১৫-২৫ বছর।
অনলাইন হয়রানি প্রসঙ্গে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মিশুক চাকমা বলেন, ‘দেশের একমাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনালে যেসব হয়রানির অভিযোগ ও মামলা আসে সেগুলোর মধ্যে হ্যাকিং ২০ শতাংশ, ফেক আইডি ২০ শতাংশ, হয়রানি বা মানহানি ১৮ শতাংশ, সাইবার পর্নোগ্রাফি ১৪ শতাংশ, মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা ১৪ শতাংশ, ব্ল্যাকমেইল বা চাঁদাবাজি ৭ শতাংশ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ১ শতাংশ ও অন্যান্য ৬ শতাংশ। এই হিসাব কেবল রাজধানী ঢাকার। ঢাকার বাইরের চিত্রও প্রায় একইরকম। তবে মফস্বলে অনলাইনে হয়রানির শিকার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী থানায় যান না।’
সাইবার অপরাধ তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে মিশুক বলেন, ‘মফস্বল পর্যায়ের থানা-পুলিশের সাইবার বিষয়ক পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। বর্তমানে পুলিশের সব পর্যায়ে অনলাইন হয়রানির অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত কীভাবে করতে হয় এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনেক অভিযোগের তদন্ত করতে ফেসবুকের কাছে তথ্য চাইলেও সহজে পাওয়া যায় না। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে যারা গুজব ছড়ায় ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা কঠিন। তিনি বলেন, পুলিশের একার পক্ষে সাইবার অপরাধ মোকাবেলা সম্ভব নয়। এজন্য পরিবার থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/cyberctdmp) এবং হেল্প ডেস্কে (০১৭৬৯৬৯১৫২২) যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনলাইন মৌলিক মানবাধিকার চর্চায় আইনী চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, অনলাইনে ‘তথ্যের সুরক্ষা’ (ডাটা প্রটেকশন), বিদ্বেষমূলক বক্তব্য (হেইট স্পিচ), ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞাও নেই। এছাড়া অনলাইন অপরাধের বিপুল অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য বিদ্যমান সাইবার ট্রাইবুন্যাল যথেষ্ট নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রযুক্তির ব্যবহারে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, অভিজ্ঞতা বিনিময়, হয়রানি প্রতিরোধে আইনগত আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়, বাধা এবং এক্ষেত্রে করণীয়গুলো চিহ্নিত করা, আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশুক চাকমা, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও আইনজীবী সাইমুম রেজা তালুকদার।