নোবেল জয়ী ওলগা তোকারচুক: ইতিহাসের ডানায় বিশ্বদর্শন
১০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৫৫
২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন পোলান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক ওলগা তোকারচুক। বিচারকদের দৃষ্টিতে তিনি, স্থানিক প্রতিবেশের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকলেও পৃথিবীকে দেখেছেন যেন পাখির চোখে। চতুরতার পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ততাও ছড়িয়ে রয়েছে তার সাহিত্য কর্মজুড়ে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দ্য সুইডিশ একাডেমি এবছর একসঙ্গে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। ১৫ তম নারী হিসেবে নোবেল জিতলেন পোলিশ লেখিকা ওলগা। ৫৭ বছর বয়েসি এই লেখিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে খুব একটা অপরিচিত না হলেও গত বছর (২০১৮) সালে ‘ফ্লাইটস’ উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার পান।
এছাড়া সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে পোলান্ডের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সম্মানজনক বার্ষিক সাহিত্য পুরস্কার ও দেশটির সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘দ্য নাইক অ্যান্ড দ্য নাইক রিডারস’ পুরস্কার লাভ করেছেন। লিখেছেন আটটি উপন্যাস, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার তিনটি ছোটগল্পের বই।
পোলান্ডের শুলেচো শহরে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ওলগা তোকারচুক। বর্তমানে তিনি দেশটির রকলো শহরের বসবাস করছেন। বাবা-মা দুজনেই পেশায় শিক্ষক হলেও বাবা স্কুলের লাইব্রেরিয়ান হিসেবেও কাজ করতেন। সেই লাইব্রেরিতে হাতের কাছে যা পেতেন তাই পড়তেন। সেখান থেকেই বাড়তে থাকে পড়ার প্রতি নেশা।
এরপর ওয়ারশ ইউনিভিার্সিটি থেকে সাইকোলোজিতে পড়ালেখা শেষে ১৯৯৩ সালে পডরোজ লুডজি সেগির সঙ্গে যৌথভাবে লেখেন ‘দ্য জার্নি অব দ্য বুক পিপল’। বই ১৭ শতাব্দির ফ্রান্স ও স্পেনের প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাস। যেখানে চরিত্রগুলো পেরিনিজ অঞ্চলে একটি রহস্যজনক বইয়ের সন্ধান করে। বইটি ১০৯৩-৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ উদীয়মান সাহিত্যিক বিভাগে পোলিশ পাবলিশার্স পুরস্কার অর্জন করে।
তবে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তার তৃতীয় উপন্যাস ‘প্রাইয়েক আই ইনিক্রেসি’ প্রকাশের পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ওলগা তোকারচুক। একটি পরিবারের বংশ পরম্পরার সুক্ষ্ম বর্ণনা দিতে গিয়ে পৌরাণিক প্রেক্ষাপটে যে উপমার ব্যবহার করেছেন তা সত্যি অসাধারণ। বিংশ শতাব্দির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি কাহিনীটি ১৯১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এ উপন্যাসের বিষয়ে তোকারচুকের বক্তব্য হলো, পোলান্ডের জাতীয় ইমেজকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করার নিজস্ব বয়ানরীতি ব্যবহার করেছেন তিনি। উপন্যাসটি ১৯৮৯ সালের পর পোলিশ সাহিত্যে অন্যতম উদাহরণ হিসেবেও স্বীকৃত।
পারিপাশ্বিকতা ও মানচিত্র থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ওলাগা তোকারচুক যার প্রভাব তার উপন্যাস ‘প্রাইমভাল ইজ এ অ্যা ভিলেজ ইন দ্য মিডস্ট অব ইউনিভার্স’- এ পাওয়া যায়। অনুরুপভাবে তার তার হাউজ অব ডে, হাউজ অব নাইটে মিথ ও বাস্তবতার অঙ্গাঙ্গীভাবে সংযোগ করেছেন।
তবে এখন পর্যন্ত তোকারচুকের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘সেইগি জাকুবো’ বা ‘দ্য বুক অব জ্যাকব’কে।
তোকারচুক বদলেছেন তার লেখালেখির ধারাও। এরজন্য কয়েক বছর একটানা ইতিহাসনির্ভর পড়ালেখা ও গবেষণা করে কাটিয়েছেন, যাতে কাজটাকে সহজ করা যায়।
১৯৮০ সালে ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে তিনি কিশোরদের আচরণগত সমস্যার জন্য নির্মিত কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৫ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ভ্রোক্লাউ ও পরে ভালব্রিচে চলে যান, সেখানে তিনি থেরাপিস্ট হিসেবে অনুশীলন শুরু করেন। তোকারচুক নিজে কার্ল জাঙের শিষ্য হিসেবে বিবেচনা করেন এবং জাঙের মনস্তত্ত্ব তার সাহিত্যকর্মের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন।
১৯৯৮ সাল থেকে তোকারচুক নোয়া রুদার কাছে একটি ছোট গ্রামে বসবাস করছেন এবং সেখান থেকে তিনি তার ব্যক্তিগত প্রকাশনা কোম্পানি রুটা তত্ত্বাবধান করেন। তিনি রাজনৈতিক দল দ্য গ্রিনসের সদস্য এবং বামপন্থী ধারণায় বিশ্বাসী