দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাংকারে বিলাসবহুল হোটেল
১৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:১৪
জার্মানির হামবুর্গ ডিস্ট্রিক্টের সেন্ট পাউলিতে অবস্থিত ফ্লাক টাওয়ার ৪। ১৯৪২ সালে মাত্র ৩০০ দিনে নির্মিত এই স্থাপনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হোচবাংকার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন এই ভবনের ছাদে নয়নাভিরাম পার্ক। আর বাংকারটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তর করা হচ্ছে।
হামবুর্গের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ১ হাজার বাংকারের সমন্বয়ে এই স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪২ সালে ১ হাজার শ্রমিককে জোর করে এই স্থাপনা নির্মাণে কাজে লাগানো হয়েছিল। ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭৫ মিটার প্রস্থের এই বাংকারগুলো ৩.৫ মিটার পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। প্রায় ১৮ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই হোচবাংকারে ১৯৪৩ সালের বিমান হামলার সময় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন, যার মধ্যে অধিকাংশই সন্তানসম্ভাবা নারী। কথা ছিল যুদ্ধের পরই এই বাংকারটি ভেঙে ফেলা হবে। কিন্তু যে পরিমাণ বিস্ফোরক দিয়ে এই বাংকারটি ধ্বংস হবে, সে পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করলে আশেপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই পরে আর বাংকারটি ধ্বংস করা হয়নি। পরে প্রায় ৪০ টির মতো কোম্পানি এই বাংকারটি সাধারণের বসবাসের জন্য আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিজুড়ে চলা আবাসন সংকটের মুখে বেসামরিক জার্মানরা এই ভবনটি জরুরি আবাসনের কাজে ব্যবহার করতেন। তার কিছুদিন পর জার্মানির টিভি স্টেশন এবং অন্যান্য ব্যবসাকেন্দ্রও এই ভবনে কাজ করেছিল।
হামবুর্গের পর্যটন ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, এই ভবনটিকে মিডিয়া বাংকার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভবনে বিভিন্ন নাইটক্লাব, রেডিও স্টেশন, স্টুডিও স্থাপন করা হয়েছিল।
এখন, এই ভবনটিকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তর করেছে এনএইচ হোটেল গ্রুপ। তার সঙ্গে সঙ্গে এর ল্যান্ডস্কেপকে নয়নাভিরাম করে তোলার প্রকল্পও হাতে নিয়েছে তারা। এই হোটেলটিতে ১৩৬ টি রুমে থাকছে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। প্রতিরাতে থাকতে খরচ পড়বে ১০০ ইউরো। এনএইচ গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, এই হোটেলটিতে অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য পানশালা, ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্ট থাকবে। ২০২১ সাল নাগাদ এই হোটেলটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
ছাদের পার্কটি ওই ভবনে বসবাসকারী সকলেই ব্যবহার করতে পারবে। ছাদে আরও থাকবে একটি জাদুঘর, সেখানে জার্মানিতে নাৎসিদের হাতে নিপীড়িতদের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকবে। পরিকল্পনানুসারে, পাঁচটি পিরামিড আকৃতির ফ্লোর তৈরি করা হবে। আর ছাদ থেকে গোটা শহরের একটি প্যানারোমা দৃশ্য দেখতে পারবেন অতিথিরা। বাংকারগুলোর ওপরে ওঠার জন্য পাহাড়ি পথও তৈরি করা হবে।
এনএইচ গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডার্ক টুরিজমকে লক্ষ্য করে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যায় যে, বর্তমানে পর্যটকদের মধ্যে গণহত্যা, যুদ্ধক্ষেত্র, কারাগার, দাস কেনাবেচার স্থান, গণকবর ইত্যাদি এলাকায় ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে।
জার্মানি ফ্লাক টাওয়ার বাংকার বিলাসবহুল হোটেল সেন্ট পাউলি হামবুর্গ