Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফসল বাঁচাতে ঠাকুরগাঁওয়ে ডাকলক্ষ্মী পূজা!


১৯ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৪৫

ঠাকুরগাঁও: ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে ঠাকুরগাঁওয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শাস্ত্র মতে, পূর্ণিমা তিথিতে এই পূজার আয়োজন করার নিয়ম। সে অনুযায়ী শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ এই পূজার আয়োজন হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি ডাকলক্ষ্মী পূজা হিসেবে পরিচিত।

রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন, এই পূজা করলে ফসলে কীটপতঙ্গ ধরবে না, ফসল নষ্ট হবে না। উপজেলার দেবীপুর গ্রামের জগদীশ রায় বলেন, ডাকলক্ষ্মী পূজায় নিম খই, জামবুড়া এবং বেল গাছের পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করা হয়। পূজার নৈবেদ্য হিসেবে নিয়ে সেই গুঁড়া জমিতে ছিটিয়ে দেন কৃষক। এটি কীটনাশকের কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

পিয়ালা গ্রামের কামিনী রায় বলেন, কার্তিক মাসের শুরুতে প্রতিবছরই বিশেষ এই পূজা করা হয়। বাড়ির উঠানে তুলসী তলার পাশে কাপড় দিয়ে ঘিরে ডাকলক্ষ্মীর উপাসনাস্থল তৈরি করা হয়। এই পুজোয় দেবী লক্ষ্মীর কোনো বিগ্রহ থাকে না। জমি থেকে ধান গাছের গোছা মাটিসহ তুলে এনে দেবী লক্ষ্মীর প্রতিমা হিসেবে পূজা করা হয়। নৈবেদ্য হিসেবে ফল দেওয়া হয়। হাঁস কৃষি জমিতে চলাফেরা করে বলে ডাকলক্ষ্মী পূজায় অতীতে প্রজাদের খাওয়ানোর জন্য জোতদাররা প্রচুর হাঁস বলি দিতেন। সেই প্রথা এখনো চলে আসছে।

স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক নৃপতিভূষণ রায় বলেন, ডাকলক্ষ্মী পূজায় অনেক বিজ্ঞানসম্মত বিষয় লুকিয়ে আছে। ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এতে কৃষি উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। ফসলের রোগ-বালাইয়ের ধরণ বদলে যাওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। ডাকলক্ষ্মী পূজায় যে নৈবেদ্য দেওয়া হয় তা মূলত কীটনাশকের কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে জমির এক মুঠো ধান গাছ তুলে এনে পূজো করা হয়। পূজা শেষে সেই জায়গায় গাছ পুনঃস্থাপন করা হয়। তিনটি পাটকাঠি পুঁতে তার মাথায় কলা গাছের থোরের উপরের অংশ কেটে বসানো হয়। সেটা প্রদীপের মতো হয়। জমিতেই বলি দেওয়া হয়। তারপর হাঁসের মাথা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এরপর উচ্চস্বরে ডাক (হাঁক) দিকে নৈবদ্য ছিটানো হয়— বলেন তিনি।

ডাকলক্ষ্মী পূজা

এই বিষয়ে লোকসংস্কৃতি গবেষক ও শিক্ষক প্রফুল্ল রায় জানিয়েছেন, রাজবংশী সমাজে এই পুজোকে ক্ষেতি অর্থাৎ খেতের ফসল রক্ষার জন্য পুজো বলা হয়। একে ডাকলক্ষ্মী বলে। ফসলকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য যেহেতু ডাক (হাঁক) দেওয়া হয়, তাই একে ডাকলক্ষ্মী বলা হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ডাকলক্ষ্মী পূজায় ক্ষেতে প্রদীপ জ্বালানো হয়, আমরাও কৃষকদের এই পরামর্শ দিয়ে থাকি। ক্ষেতের মাঝখানে ‘আলোর ফাঁদ’ বসিয়ে সহজে পোকা দমন করা যায়।

ডাকলক্ষ্মী পূজা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর