Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলবেয়ার কামুকে কি কেজিবি হত্যা করেছে?


৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৪৯

নোবেলজয়ী ফরাসী সাহিত্যিক আলবেয়ার কামু মারা গিয়েছিলেন ৬০ বছর আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনায়। তখন তার বয়স ছিল ৪৬। সম্প্রতি ইতালি থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ে দাবি করা হয়েছে সোভিয়েত বিরোধী মনোভাব পোষণের কারণে কামুকে হত্যা করেছে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। ইতালির লেখক গিওভান্নি কাতেল্লি ২০১১ সালে এই কথা প্রথমবার বলে আলোচনায় এসেছিলেন। সেই সময় ডেল্লা সেরা নামের এক পত্রিকায় তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের কবি যান জাব্রানার সূত্র ব্যবহার করে দাবি করেছিলেন কামুর মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। কিন্তু এখন আলবেয়ার কামুর মৃত্যু নিয়ে কাতেল্লি রীতিমত একটি বই লিখে ফেলেছেন। বইয়ের নাম ‘দ্য ডেথ অব কামু’।

বিজ্ঞাপন

১৯৬০ সালের ৪ জানুয়ারি আলবেয়ার কামু তার প্রকাশকের সাথে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে তার প্রকাশক মাইকেল গ্যালিমার্ড গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে একটি গাছের সাথে গাড়ি ধাক্কা খেলে ঘটনাস্থলেই কামু মারা যান। তার প্রকাশক গ্যালিমার্ড কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মারা যান। মৃত্যুর তিন বছর পর ‘আউটসাইডার’ খ্যাত এই ফরাসী লেখক ‘ইল্যুমিনাট’ লেখার জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৮ সালে প্রকাশিত কামুর আত্মজীবনীতে হারবার্ট লোটম্যান বলেছিলেন, ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল গাড়ির ব্রেকের এক্সেল ভেঙে যাওয়ার কারণে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটেছিল একটি সোজা রাস্তায়, যা প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ত এবং সে সময় বলার মতো কোনো ভিড়ও ছিল না।

‘দ্য ডেথ অব কামু’র লেখক কাতেল্লি চেক প্রজাতন্ত্রের কবি জাব্রানার ব্যাখা বিশ্বাস করেন। ১৯৮০ সালের গ্রীষ্মে জাব্রানা লিখছেন, একজন জ্ঞানী ও যোগাযোগে দক্ষ ব্যক্তি তাকে বলেছেন কামুর মৃত্যুর ব্যাপারে কেজিবি জড়িত আছে। কেজিবি কামুকে বহনকারী ওই গাড়ির চাকা থেকে টায়ার আলাদা করার জন্য এমন এক ব্যবস্থা করে রেখেছিল যেন গাড়ির গতি বাড়ালেই তা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ছুটে যায়। জাব্রানা তার ডায়েরিতে স্পষ্ট করে লিখেছেন সবাই মনে করেন গাড়ি দুর্ঘটনায় কামু মারা গেছেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো কেজিবি তাকে খুন করেছে। কিন্তু এই কথা কেউ সামনে আনতে চান না।

১৯৫৭ সালের মার্চে এক ফরাসী পত্রিকায় কামুর লেখা একটি রাজনৈতিক প্রবন্ধের কারণে এই হত্যাকান্ডের অনুমোদন দিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দিমিত্রি শেপিলভ। জাব্রানা তার ডায়েরিতে লিখেছেন আদেশ পাওয়ার পর আরও তিন বছর সময় নিয়ে কামুকে হত্যা করে কেজিবির গুপ্তচররা। তারপর তারা এমনভাবে সবকিছু সাজিয়ে রেখেছে যাতে করে যে কেউ ভাবতে পারেন আলবেয়ার কামু এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। যদিও সেই জ্ঞানী এবং  যোগাযোগ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি কাতেল্লিকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করেননি। কিন্তু তারপরও জোর দিয়ে বলেছেন এসব তথ্য বিশ্বাসযোগ্য।

হাঙ্গেরির উত্থানের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের শরৎ থেকেই আলবেয়ার কামু জন সমাগম থেকে দূরে নীরব ও নির্ঝঞ্জাট জীবন বেছে নেন। এবং এ কথা সত্যি যে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ দুই চোখে দেখতে পারতেন না। তিনি খোলাখুলিভাবেই সোভিয়েত বিরোধী লেখক বরিস পাস্তারনাকের সমর্থক ছিলেন।

‘দ্য ডেথ অব কামু’ বইটি লিখতে গিয়ে জাব্রানার কথার সূত্র ধরে বছরের পর বছর গবেষণা করেছেন কাতেল্লি। তিনি জাব্রানার বিধবা মারির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, ফ্রান্সে কেজিবির প্রভাব নিয়েও অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ইতালির একজন ব্যারিস্টার ভারজেস কাতেল্লিকে বলেছেন, এই গাড়ি দুর্ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ সাজানো। তিনি এর স্বপক্ষে কিছু দলিল ও দেখিয়েছেন কাতেল্লিকে। তারপর থেকে কাতেল্লি মোটামুটি নিশ্চিত যে কেজিবি কিছু ফরাসী গুপ্তচরের সহায়তায় কামুর এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাতেল্লি নিশ্চিত যে, কামু তার জবানের  লাগাম না টানার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকার খেসারত হিসেবে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

আলবেয়ার কামু কেজিবি গাড়ি দুর্ঘটনা নোবেল পুরস্কার ফ্রান্স সোভিয়েত ইউনিয়ন হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর