Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৭১ এর শহীদদের প্রতি ভিন্নভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ভারতীয় ২ শিল্পীর


৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:১৮

পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। ৯ মাসের টানা যুদ্ধের পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই মহান দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ভারতের দুজন বিখ্যাত শিল্পীর কাজ তুলে ধরা হলো। যারা তাদের কাজের মাধ্যমে এই মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি জানিয়েছেন শ্রদ্ধা।

বিজ্ঞাপন

অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে জন্মগ্রহন করেন বিংশ শতাব্দীর শেষভাবে আবির্ভূত একজন বাঙ্গালী চিত্রকর। যিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও,নাগরিকতা ও অবস্থানসূত্রে ভারতের পশ্চিম বাংলার অধিবাসী। সমাজ সচেতন এই শিল্পীর নাম যোগেন চৌধুরী। দেশভাগের পর উদ্বাস্তু হয়ে আসেন কলকাতায়। নিজের মাকে কেউ ছেড়ে আসতে চায় না। আর মাতৃভূমি মায়ের মতো। কিন্তু যখন আসতে বাধ্য হয় বা বাধ্য করা হয় তখন সেই মানুষগুলোর জীবনে ভয়ঙ্কর একটা ঝড় বয়ে যায়। একই পরিস্থিতিতে না পড়লে এটা কারও পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব। সেই মনোবেদনা তাঁকে এখনো তাড়িত করে। শিকড় কিন্তু থেকে গিয়েছিল অনেক গভীরে। যাঁর অন্তরাত্মার সঙ্গে মিশে আছে এ দেশ। মাতৃভূমির কথা সবসময়েই যার মানসপটে ভাস্বর।

বিজ্ঞাপন

শিল্পসৃষ্টির প্রয়োজনে তিনি শরীরের সাবলীলতাকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙেছেন। ছবিতে মানবশরীরকে তিনি যে ভাবে আয়তন দিয়েছেন, তা যেন ভাস্কর্যকেই মনে করায়। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পর কলকাতার শরণার্থী শিবিরে দেখা উদ্বাস্তু নারী-পুরুষের বহু প্রতিকৃতি নিয়ে তিনি ছবি আঁকেন। জগৎ ও জীবনের প্রতি অসীম কৌতূহল আর মমতা যেন তাঁর বিকৃতি-বিদ্রূপের ধার কমিয়ে দিয়েছে। তিক্ততার সঙ্গে সঞ্চারিত করেছে প্রশান্তি, আনন্দ। তার আঁকা ছবিতে আধুনিকতা প্রভাব পাওয়া যায়। আবার অন্যদিকে ভারতীয় শিল্প আন্দোলন ও ইয়োরোপীয় শিল্প আন্দোলনের প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়।

তার রচনাশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ্যাচিং ও ক্রস-হ্যাচিং এর ব্যবহার, যা তিনি বলিরেখা হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৯৬৮-’৭২ কাটিয়েছেন মাদ্রাজে। তখন তিনি হ্যান্ডলুম বোর্ডের আর্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। সে সময় মাদ্রাজে বসে ১৯৭১ সালে তিনি আঁকেন “Homage to Bangladesh ” শিল্পকর্মটি। মাধ্যাম হিসেবে ব্যাবহার করেন জলরং, প্যাস্টেল,পেন বা শুধু কালি। এক হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা, অন্য হাতে অস্ত্র। যদিও শিল্পী পতাকায় সবুজের ব্যবহার করেন নি। কিন্তু পতাকার মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্র। পুরো বিষয় আবৃত লতানো ফুলে। আর ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড’র কালো রঙে শোকের ছাপ।

অন্ধকারের সঙ্গে আলোকে দেখতে চেয়েছেন এই শিল্পী। তিনি কখনো দেশভাগের অভিঘাতে ভেঙে পড়েননি। ঝড়, অবক্ষয় আর বিপর্যয়ের নেতিতেও তিনি ফুরিয়ে যান নি।

ভারতের একজন কনটেমপোরারি শিল্পী, যার কাজ মানব দেহ এবং এর পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, প্রকৃতির রূপক বলা যায়। তিনি একজন প্রকাশ্য সমকামী শিল্পী, লিঙ্গ সংজ্ঞা এবং লিঙ্গ পরিচয়ের সমস্যাটি ছিল তাঁর কাজের প্রধান বিষয়। তাঁর প্রায় সব চিত্রগুলিতে ভারতীয় পুরাণ এবং পৌরাণিক থিমের উল্লেখ পাওয়া যায়।

১৯৭২ সালে “Muktibahini Soldier with Gun” শীর্ষক ছবিটির মাধ্যমে শিল্পী ভূপেন খাক্কা একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাকে তুলে ধরেছেন। যার পরনে ছিল সাধারন একটি সাদা গেঞ্জি। যেন যুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। নিজের বুকের সামনে বন্দুক চেপে ধরে রাস্তা থেকে দাঁড়িয়ে নির্বাক চশমা পরিহীত চোখে যেন দৃশ্যগুলি উপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশী “মুক্তিযোদ্ধা” চিত্রকর্মটির কোনও ম্যাচো ফিগার (macho figure) ছিল না, তবে তাকে দুর্বল বলে মনে হয়েছিল।সব মিলে কৌতুকপূর্ণ এবং হাস্যকর বৈশিষ্ট্য শিল্পীর পক্ষে আরও অনেক শক্ত প্রশ্নের দিকে পরিচালিত করে। এই ছদ্মবেশ শিল্পীকে ধর্মীয় উপাসনা, সমকামিতা এবং ভারতের রাজনৈতিক চেতনাসহ,অস্বস্তিকর বিষয়গুলির মুখোমুখি হতে দেয়। মুক্তিবাহিনী সৈনিকের সঙ্গে বন্দুকের মতো চিত্র (১৯৭২) যা সমজাতীয় ও ধর্মীয় প্রতিমূর্তির মিশ্রণ চিত্রিত করে।

এই কাজটির সঙ্গে অনেকটা “মোনালিসা” কাজের মিল পাওয়া যায়। মোনালিসা’তে যেমন পেছনে ল্যান্ডস্ক্যাপ রয়েছে, এই মুক্তিযোদ্ধার পেছনে পাহাড়ের স্তরে স্তরে যুদ্ধের কিছু সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। আর এই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অসামান্য।ভারত তার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রেখেছিল সবসময়।তারই বহিঃপ্রকাশ ডানপাশে ভারতের পতাকা আর বামপাশে বাংলাদেশের পতাকা।

লেখক- শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর (শেষ বর্ষ), শিল্প ইতিহাস বিভাগ, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর