ভারতের গুজরাটের শ্রী সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পিরিয়ড পরীক্ষার জন্য অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনের নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের ওপর এধরনের নির্যাতন চালানো হয়। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম কলেজটির অন্তত ৬৮ শিক্ষার্থীর ওপর ঘটা এমন ভয়াবহ নির্যাতনের খবর প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসির।
ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রী সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ ও হোস্টেলের প্রধান কর্মকর্তার ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।
সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটের একদল শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার কলেজে ঢোকার পরই নারী শিক্ষকদের তদারকিতে পিরিয়ড পরীক্ষার জন্য তাদের বাথরুমে নিয়ে অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি বাইরে প্রকাশ না করতেও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেয়।
দুইমাস আগে সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। এই নিয়ম অনুসারে, কোনো শিক্ষার্থীর পিরিয়ড হলে সে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে পারবে না। একেবারে পেছনের বেঞ্চে আলাদাভাবে বসতে হবে। সেসময় তারা হোস্টেলের মন্দির ও রান্নাঘরেও প্রবেশ করতে পারবে না।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হোস্টেলের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা নিয়ম ভঙ্গ করছে। তারা পিরিয়ডের সময় রান্নাঘরে ও মন্দিরে যাচ্ছে। পিরিয়ড চললেও তারা স্বীকার করছে না।
এরপরই মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলেন। কলেজে ঢোকার পর নারী শিক্ষার্থীদের অন্তর্বাস খুলে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ভীষণভাবে অপমানিতবোধ করছি। কলেজ প্রশাসন আমাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে।’
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান শিক্ষর্থীরা। তাদেরকে এভাবে হেনস্তা করার পেছনে যুক্ত সকল অপরাধীদের বিচার দাবি করেন তারা।
কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পারভীন পিন্দেরিয়া বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এধরনের ঘটনা ঘটে গেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিচার করা হবে।’
কলেজের উপাধ্যক্ষ দর্শনা ঢোলাকিয়া বলেন, ‘পিরিয়ড পরীক্ষা করতে মেয়েরা স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছিল। তখন আমাদের নারী শিক্ষকদের দিয়ে এটা করানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের শরীর স্পর্শ করা হয়নি। পিরিয়ড চললেও মেয়েরা মিথ্যা বলে। তাই তারাই দোষী। মিথ্যা বলার জন্য তারাই পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়েছে।’
উল্লেখ্য, সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউট পরিচালনা করে একটি হিন্দু ট্রাস্ট। ভারতের অনেক অঞ্চলে মাসিক ঋতুস্রাবকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এই সময় নারীদের ‘অশৌচ’ বলে গণ্য করা হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও এর ব্যতিক্রম নয়।