Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বে প্রথম ‘করোনাভাইরাস’ শনাক্ত করেছেন যে নারী চিকিৎসক


১৭ এপ্রিল ২০২০ ১০:২৫

কোভিড-১৯ মহামারিতে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। নতুন এই রোগের ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য দেশে দেশে বিজ্ঞানীরা হন্যে হয়ে আছেন। কোভিড-১৯ আমাদের কাছে নতুন রোগ হিসেবে আবির্ভূত হলেও এই রোগের ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল আজ থেকে ৫৬ বছর আগে! স্কটল্যান্ডের নারী চিকিৎসক জুন আলমেইডা ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে মানব শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করেন।

বিবিসিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগের কারণ হিসেবে যে নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, সেটি মূলত নতুন ধরনের করোনাভাইরাস। আর প্রথম করোনাভাইরাসটি শনাক্ত করেন আলমেইডা। করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান আতঙ্কের মতো এই নারী চিকিৎসকের আবিষ্কৃত তথ্যগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন জুন আলমেইডার গবেষণাকর্ম।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ের পর জুন আলমেইডা কানাডার টরেন্টোতে চলে যান। সেখানে অন্টারিও ক্যানসার ইনস্টিটিউটে কাজ শুরু করেন। তিনি এমন একটি পদ্ধতিতে কাজ করতেন, যা অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ভাইরাসগুলো আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যেত।

জুন আলমেইডার প্রতিভা যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের নজর কাড়ে। সেখানকার নীতি-নীর্ধারণী পর্যায়েও আলমেইডার নাম আসে। তারা আলমেইডাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে কাজ করার প্রস্তাব দেন। আলমেইডা রাজি হন। সেন্ট থমাস হাসপাতালের আরেকজন চিকিৎসক ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ শুরু করেন আলমেইডা।

চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে আলমেইডা ও টাইরেল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কণায় মনোযোগ দেন। এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আলমেইডা দেখেন, মানবদেহের কিছু ভাইরাস কণা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে আলাদা। এই ভাইরাসের চারপাশে মুকুটের মতো একটি বিশেষ অংশ থাকে। চিকিৎসক আলমেইডা ও টাইরেল এই ভাইরাসের নাম দেন ‘করোনাভাইরাস’। পরবর্তীতে সারাবিশ্বে এই নামেই ভাইরাসটি পরিচিতি লাভ করে। করোনাভাইরাসে কারণে সেইসময় মানুষের যে রোগ দেখা দিয়েছিল তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘বি-৮১৪’।

বিজ্ঞাপন

এমন অভূতপূর্ব আবিষ্কারের জন্য আলমেইডা তার জীবদ্দশায় তেমন কোনো স্বীকৃতি পাননি। পিয়ার রিভিউড জার্নালে তার গবেষণার নথি পাঠনো হলে মুহূর্তেই তা বাতিল করে দেওয়া হয়। কর্তাব্যক্তিরা বলেন, আলমেইডার পাঠানো ছবিগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিবৃত কিছু ছবি!

তবে তাতে একবারেই ভেঙে পড়েননি আলমেইডা। নিজ দক্ষতায় কাজ চালিয়ে যান। পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে চাকরি শুরু করেন। দীর্ঘদিন সেখানে তিনি সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে এখন তোলপাড় হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি জুন আলমেইডার নামও। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল-যেখানে আলমেইডার হাত ধরে মানবদেহে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়, সেখানে এখন ভর্তি আছেন যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন।

দিনশেষে মেধা ও শ্রম বৃথা যায় না। বিজ্ঞানী আলমেইডা মারা গেছেন ২০০৭ এ। তারও ১৩ বছর পর তার কাজ মূল্যায়িত হচ্ছে। জুন আলমেইডার শ্রমের ফসল আজ বিজ্ঞানীদের অজানা সব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে।

জুন আলমেইডা প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত