Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একজন ওয়ালিদ ও ডাকসু নির্বাচন


৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১১:১০

শামিম রেজা

শাখা-প্রশাখা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী কড়ই গাছটা। ছায়া দিয়ে রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের পাশের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য ‘স্মৃতি চিরন্তন’কে। ছায়াশীতল এই গাছের নিচেই কমলা কাপড়ের ছোট্ট তাঁবুতে রাতদিন কাটাচ্ছেন আশরাফ ওয়ালিদ। ১৪ দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। একটাই দাবি ‘ডাকসু নির্বাচন চাই’।

২৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে প্রতিবাদে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণের এই শিক্ষার্থী। টানা অনশনে উঠে বসা বা কথা বলার শক্তিও নেই এখন তার। হাতের চামড়া ভেদ করে সিরিঞ্জ দিয়ে ঢুকানো ফোঁটা ফোঁটা স্যালাইন— এখন ওয়ালিদের খাবার।

গত ২৫ নভেম্বর শুরু হয়েছে তার এই অনশন। প্রথম পাঁচ দিন কিছুই খাননি। পরের পাঁচ দিনের খাবার শুধুই স্যালাইন । কিন্তু বৃহস্পতিবার বিদ্রোহ করে বসে শরীর । অসুস্থ হয়ে পড়েন ওয়ালিদ। তবু হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। প্রতিবাদী ওয়ালিদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো শিক্ষার্থী আর স্বজনরা হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে গেলেও শোনেননি চিকিৎসকের পরামর্শ। ভর্তি না হয়েই আবারও ফিরে আসেন তাঁবুতে, চলতেই থাকে অনশন। তার জেদের কাছে হার মেনে একজন চিকিৎসকই চলে আসেন তার তাঁবুতে। দিয়ে যান স্যালাইন আর দিনে তিনটি করে স্যালাইন নেওয়ার পরামর্শ ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ওয়ালিদের শরীরে তখন পঞ্চমবারের মতো স্যালাইন চলছে। ক্ষীণ গলায় চেষ্টা করেন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। তার একটায় চাওয়া ‘না খেয়ে মরব তবু ডাকসু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি না নিয়ে ঘরে ফিরব না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নির্বাচন হলেও কেন ডাকুস নির্বাচন নয়?’

বিজ্ঞাপন

ওয়ালিদের ক্ষোভ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরও। গৌরব আর আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার যেন কেউ নেই। অধিকার নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই। যেন ভুলেই গেছে প্রতিবাদের ভাষা।

নিজের পুরানো সাইকেল নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অংশ নেওয়া এই তরুণ মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন না দেওয়া আর সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে প্রতারণা করা একই কথা।

কেন অনশন করার কথা ভাবলেন, জানতে চাইলে ওয়ালিদ আশরাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সাধারণ ছাত্র, একা মানুষ। কোনো দলের সাথে যুক্ত নয়। একা একজন মানুষের পক্ষে আমার এটা করা ছাড়া আর কি-বা করার আছে।’

তিনি বলেন ‘সাধারণ ছাত্ররা আমার কাছে আসছে। আমার সাথে কথা বলছে। আমার প্রতিবাদকে প্রশংসা করছে, কিন্তু হলে সিট চলে যাওয়ার ভয়ে তারা কিছু বলতে পারছে না।’

‘তারা জানে না, যে ছাত্রনেতা তাকে আজ হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়, ডাকসু নির্বাচন হলে সেই নেতাই তাকে স্যার স্যার বলে হলে তুলবে। কারণ ওই নেতার তখন ওই ছাত্রের ভোটটাই প্রয়োজন হবে।’

ওয়ালিদ আশরাফ তার তাঁবুর পাশে একটি খাতা রেখেছেন। যেখানে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। যদিও ১৪ দিনে স্বাক্ষর মিলেছে মাত্র ৫৩৬টি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কোনো খোঁজ নিয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, অনশনের তৃতীয় দিনে সহকারী প্রোক্টর এসেছিলেন। তারপরে আর কোনো খবর নেননি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে আমরা বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। নির্বাচনে পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি সব কিছু বিবেচনায় সামনে একটা উদ্যোগ নিতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

ওয়ালিদ আশরাফ আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এর মধ্যেই নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ভাবছেন জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ভাবছি, ওয়ালিদকে নিয়ে কিছুই ভাবছি না।’

সারাবাংলা/এসআর/আইজেকে/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর