এক বাসে লন্ডন থেকে কলকাতা
১ জুলাই ২০২০ ২০:৩৩
১৯৬৮ সালে লন্ডন থেকে বাণিজ্যিক বাসে সরসারি কলকাতা যাওয়া যেত। ভাড়া ছিল মাত্র ৮৫ পাউন্ড। এরকম সরাসরি ১৫ টি টিপ চলার পর সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়।
মূলত লন্ডন থেকে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সস্তায় চলাচলের জন্য এই বাস সার্ভিস চালু হয়। এই বাসে করে যাত্রীরা সরাসরি কলকাতা যেতেন। তারপর তাদের জাহাজে করে সিডনি নিয়ে যাওয়া হত। সঙ্গে বাসটাও।
১৯৪৭ সালের তৈরি এলবিন ডবল ডেকার বাসটি ২১ বছর যাত্রী সেবা দেয়ার পর একটি দুর্ঘটনায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এন্ড্রি স্টুয়ার্ট নামের এক ভ্রমণপিপাসু অল্পদামে বাসটি কিনে নেন। প্রথম তিনি এটাকে তার ভ্রাম্যমাণ ঘর হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা করে। ভেবেছিলেন, গাড়িটিতে গেরস্থালি জীবনের টুকিটাকি জিনিস নিয়ে পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়বেন। পরে ভাবলেন, এতবড় বাসে চাইলেই কিছু যাত্রী নেয়া যায়। তাতে দুই পয়সায় আয় হয়। যে ভাবনা সেই কাজ।
১৯৬৮ সালের ৮ অক্টোবর সিডনির মার্টিন প্যালেস থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে এলবার্ট নামের এই বাসটি প্রথম যাত্রা শুরু করে। জাহাজে যাত্রীসমেত কলকাতা আসার পর শুরু হয় তার সুদীর্ঘ যাত্রা। স্টুয়ার্ট আরো ১৩ জন যাত্রী নিয়ে ১৬০০০ কিলোমিটারের এ পথ পাড়ি দেন ১৩২ দিনে। এতে তাদের ১৫০ টি সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়েছিল। ১৯৬৯-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা লন্ডন পৌঁছান।
এভাবে ১৫ টি ভ্রমণ সম্পন্ন করছিল এই এলবার্ট। এর প্রথম ৯ টি সফর সিডনি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরবর্তীতে এটা কলকাতায় শেষ হয়ে যেত। পরবর্তীতে যাত্রীরা উড়োজাহাজে সিডনি যেতেন।
২৫ জুলাই ১৯৭২ সালের ভ্রমণসূচিতে দেখা যায় লন্ডন থেকে কলকাতা আসতে ৪৯ দিন সময় লাগত। এ দীর্ঘযাত্রায় যাত্রীদের খাবার-দাবার ও বিশ্রামের ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া হতো। গাড়ির ভেতরে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য বাঙ্ক ছিল। গাড়ির নিচ তলায় ছিল খাবার ও বই পড়ার ব্যবস্থা। গাড়ি থাকত পর্যাপ্ত পাখা ও রুম হিটার।
বাসের যাত্রীরা পথে ভ্রমণের দারুণ সুযোগ পেতেন। তারা বেনারস, আফগানিস্তানের গ্রামাঞ্চল, গোল্ডেন হর্ন, দানিয়ুব নদী, ময়ূর সিহাংসন, দিল্লির রাজপথ, রেইন নদী, খাইবার পাস, কাশপিয়ান সাগর, তাজমহল দেখার সুযোগ পেতেন। দিল্লি, তেহরান, শেলজবার্গ, কাবুল, ইস্তাম্বুলে, ভিয়েনায় শপিঙের জন্য বিরতি দেয়া হত। রাখা হত হোটেলে।
১৯৭৬ সালে ইরানে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিলে এই সরাসরি বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। এলবার্ট বাসটিকে সিডনি নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে জন ও উইনি নামের দুই বন্ধু বিখ্যাত এ বাসটির মালিক। ২০১২ সালে তারা এক নিলামে বাসটি কিনে নেন।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, সেন্ট্রাল ওয়েস্টার্ন ডেইলি