Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিকটেটর্স ডিনার্স


৫ জুলাই ২০২০ ১৩:৪৬

রাজশেখর বসূর ‘রাজভোগ’ গল্পে আমরা পাতিপুরের মহারাজের গল্প পড়েছি। মহারাজ অ্যাংলো-মোগলাই হোটেলে গিয়ে বিভিন্ন খাবারের খবর নেন। ম্যানেজার রাইচরনের মুখে খাবারের বর্ণনা শুনে তাঁর জিহ্বার জল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু খাবার সময় অর্ডার দিলেন লেবু আর লবণ দিয়ে মাখানো বার্লি সিদ্ধ। কারণ তিনি তিন বছর ধরে ডিসপেপসিয়ায় ভুগছেন। কিছুই তাঁর হজম হয় না। আবার বিপরীত গল্পও পাই। মোগল বাদশাহদের রাজকীয় ভোগের অনেক বর্ণনা মিলে। খাবার গ্রহণের জন্য সুখ্যাতি ছিল মৌর্য সম্রাট অশোকের।

বিজ্ঞাপন

বড়ো মানুষদের খাবার নিয়ে সাধারণের আগ্রহ সবসময়। ভিক্টোরিয়া ক্লার্ক ও মেলিসা স্কট তাদের ‘ডিকটেটর্স ডিনার্স’ বইতে পৃথিবীর কয়েকজন কুখ্যাত স্বৈরশাসকের প্রিয় খাদ্য, খাদ্যাচার ও বিষভীতি নিয়ে লিখেছেন। আরও আছে খাবারকে কেন্দ্র করে এসব নিষ্ঠুর শাসকদের অদ্ভুত সব খেয়ালের কথা।

১. কিম জং
উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং ২-এর প্রিয় খাবার হলো হাঙ্গরের ডানার আর কুকুরের মাংসের স্যুপ। তার ধারণা এসব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পৌরুষত্ব বৃদ্ধি করে।
তার রসুইখানায় নারী পাচকের একটি দল ছিল, যাদের কাজ হলো তার খাবারে যে চাল ব্যবহার হয় সেসবের আকার গড়ন ও রং যেন একই রকম হয় তা নিশ্চিত করা।

২. এডলফ হিটলার
হিটলার নিরামিষভোজী ছিলেন। এটা তার রাজনৈতিক দর্শনের অংশ ছিল। এছাড়াও তিনি বিশ্বাস করতেন নিরামিশ তার পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান করবে। শেষ জীবনে তিনি শুধু আলু ভর্তা আর আলুর তরকারির ঝোল খেতেন।
তার খাদ্যের স্বাদ আস্বাদনের জন্য ১৫ জনের একটি দল ছিল। খাবার পরিবেশনের আগে তারা খাবার চেখে দেখত। তাদের খাওয়া হওয়ার ৪৫ মিনিট পর তিনি খাবার খেতেন।

৩. যোসেফ স্টালিন
সোভিয়েৎ ইউনিয়নের একনায়ক যোসেফ স্টালিন জর্জিয়ার খাবারের ভক্ত ছিলেন। তিনি সাধারণত আখরোট, রসুন, বরই, ডালিম, ওয়াইন খেতেন। মধুতে আখরোট দিয়ে ঘন করা এক ধরনের জর্জিয়ান বরফি আকৃতির মিষ্টি তার প্রিয় ছিল।
তিনি পাওয়ার প্লে ড্রিংকিং গেমস খেলে মদ খেতেন।
স্টালিনের নিজস্ব একটি পাচক দল ছিল। সেই পাচক দলের সদস্য ছিলেন বর্তমানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনির দাদা। স্টালিনের খাবার প্রস্তুত করতে পাচকদের ৬ ঘন্টা সময় লাগত।

বিজ্ঞাপন

৪. বেনিতো মুসোলিনি
ইতালির স্বৈরশাসক বেনিত মুসোলিনি সাদামাটা খাবার গ্রহণ করতেন। তেল ও লেবুর রসে চুবানো রসুনের টুকরো খেতে পছন্দ করতেন। তিনি ফরাসি খাবার একেবারে পছন্দ করতেন না। মুসোলিনি তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসে খেতে পছন্দ করতেন। তার সব কিছুই ছিল সময়ানুবর্তী। তিনি আসার আগেই সবাই খাবার টেবিলে হাজির হত। খাবার থাকত সাজানো।

৫. ইদি আমিন
উগান্ডার নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ইদি আমিন পছন্দ করতেন ছাগলের মাংসের রোস্টের সঙ্গে কাসাভা কিংবা বাজরার রুটি। তিনি প্রতিদিন ৪০ টি কমলা খেতেন। তার ধারণা ছিল কমলা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা যা তার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তিনি সৌদী আরবে নির্বাসনে যান, তখন তার প্রিয় খাদ্য হয়ে দাঁড়ায় কেএফসির খাবার আর পিৎজা।
তার নামে অভিযোগ ছিল তিনি নাকি মানুষের মাংস খেতেন। পালিয়ে যাওয়ার পর তার ফ্রিজ থেকে মানুষের মাথা ও মাংস পাওয়া গিয়েছিল। তিনি ব্রিটিশ খাদ্যের খুব অনুরাগী ছিলেন। তিনি চাইতেন তার সব খাবারই ব্রিটেন থেকে আনা হোক। তিনি ব্রিটিশ চা না হলে চা খেতেন না।

৬. পল পট
কম্বোডিয়ার রক্তপিপাসু নিষ্ঠুর শাসক পলপটের প্রিয় খাদ্য ছিল হরিণ, বণ্য শুকর ও সাপের মাংস। সঙ্গে তাজা ফল, ব্র্যান্ডি আর চাইনিজ ওয়াইন থাকা চাই। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য ছিল কিং কোবরা সাপের মাংসের স্টু।
এ খেমারুজ গেরিলা নেতা বুদ্ধিবৃত্তিকবিরোধী সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম শুরু করেন। এতে তিনি কম্বোডিয়ার শিক্ষিত পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের বাধ্য করেন শ্রমশিবিরে কাজ করতে। সেখানে কৃষকদের কপালে জুটত দুই বেলা খুদের ভাত। আর তিনি খেতেন বিলাসবহুল খাবার। তার সময় ২০ লক্ষ মানুষ শাস্তি, দুর্ভিক্ষ কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মারা যায়।

৭. নিকোলাই চাওচেস্কু
রোমানিয়ার স্বৈরশাসক চাওচেস্কু পছন্দ করতেন লাসানিয়া নামের এক ধরনের ইতালিয়ান খাবার। তবে তার উপরে দেয়া লাগত টক ক্রিম দিয়ে মাখানো ডিম। সঙ্গে টমেটো, পেঁয়াজ আর মাংস কুচির সালাদ।

৮. ফ্রান্সিকো মেসি এনগুয়েমা
আফ্রিকার গায়েনার স্বৈরশাসক এনগুয়েমা পছন্দ করতেন ভাং, গাঁজা গাছের পাতার চা আর ইবাগো গাছের মূলের ছাল, যা দিয়ে নেশা হত।

৯. ফ্রান্সিকো ডুভালিয়ার
হাইতির স্বৈরশাসক ফ্রান্সিকো ডুভালিয়ারের ছিল অনেক রোগ। ভুগেছেন ডায়বেটিসে। ছিল হৃৎযন্ত্রের সমস্যা আর আর্থ্রাইটিস। তিনি নিজে একসময় ডাক্তার ছিলেন। কিন্তু শরীরের কারণে তিনি রোগের কাছে ছিলেন অসহায়। তাই তাকে তোলা খাবার দেয়া হত। তার স্ত্রী তাকে চামচ দিয়ে খাওয়াতেন। স্বৈরশাসকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন খাবারের দিক দিয়ে সবচেয়ে দুর্বল। কিন্তু নিষ্ঠুরতায় তিনি কম ছিলেন না। তিনি খাবার পর চোরা গর্ত দিয়ে তার নির্যাতন শিবিরে বন্দিদের নির্যাতন করা দেখতেন। এটা ছিল তার অন্যতম বিনোদন। তিনি ত্রিশ হাজার মানুষকে অত্যাচার করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা

ইদি আমিন এডলফ হিটলার কিং কোবরার স্টু কিম জং ডিকটেটর্স ডিনার্স নিকোলাই চওচেস্কু বেনিতো মুসোলিনি যোসেফ স্টালিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর