দোহায় একটি নয়, ১০টি ফ্লাইটের নারীদের ‘পোশাক খুলে পরীক্ষা’
২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৭:০৯
কাতারের দোহায় অবস্থিত হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট নয়, ওইসময় বিমানবন্দরে অবস্থিত মোট ১০ টি ফ্লাইটের নারী যাত্রীদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয় বলে অভিযোগ করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন অস্ট্রেলিয়ান সিনেটে এক শুনানিতে এই দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, ২ অক্টোবর কাতার এয়ারওয়েজের যে ফ্লাইটে নারী যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়, সেখানে মোট ১৮ জন নারী ছিলেন। এদের মধ্যে ১৩ জন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। বাকি পাঁচজনের জাতিগত পরিচয় প্রকাশ না করলেও একজন ফরাসি নাগরিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য গত ২ অক্টোবর দোহা থেকে সিডনিগামী কাতার এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটের নারী যাত্রীদের প্লেন ছাড়ার আগ মুহুর্তে প্লেন থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের পরনের পোশাক খুলে পরীক্ষা করা হয় কেউ সদ্য সন্তান জন্ম দিয়েছেন কিনা। এ ঘটনার প্রায় ২৪ দিন পর অস্ট্রেলিয়া সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাতার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পর আন্তর্জাতিক মিডিয়ার এ বিষয়ক সংবাদ আসতে থাকে।
কাতারে নারী যাত্রীদের পোশাক খুলে পরীক্ষা, ক্ষুব্ধ অস্ট্রেলিয়া
২ অক্টোবর হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাকের একটি বাথরুমের ময়লার ঝুড়িতে একটি সদ্যাজাত শিশু পাওয়া যায়।শিশুটির জন্মদাত্রীকে খুঁজে বের করতে ওই তল্লাশি চালানো হয় বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শিশুটির পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনও এবং তাকে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্লেনে ওঠার পর হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে নারীদেরকে প্লেন থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে দোহার বিমানবন্দর টারমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের মধ্যে কেউ সন্তান জন্ম দিয়েছেন কি না দেখতে অন্তত তিন ঘণ্টা ধরে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে উলফগ্যাং বাবেক নামের এক যাত্রী জানান, ফিরে আসার পর ওই নারী যাত্রীদের মন খারাপ থাকতে দেখেছেন। এমনকি একজন অল্পবয়েসী মেয়ে কাঁদছিলেন।
এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ক্ষোভের প্রকাশ দেখা গেছে। কাতারে নারীদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধের হুমকি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ। সরকার থেকে বলা হয়েছে ওই যাত্রীরা সেসময় কিছু বলার সুযোগ পাননি।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন ঘটনাটিকে ‘চরম বিরক্তিকর, আপত্তিকর এবং উদ্বেগজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে ওই ১৩ নারীর সঙ্গে কোনো ধরনের যৌন সহিংসতা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। কাতারের প্রতিক্রিয়া জানার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সিডনিফেরত ওই নারী যাত্রীরা এখন ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে আছেন এবং সরকার থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন মেরিস পেইন।
এদিকে ২ অক্টোবর ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য দেয়নি কাতার সরকার। তবে হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া এক মায়ের স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বেগ জানান এবং বিমানবন্দর ত্যাগের আগে তাকে খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন। নবজাতকের পরিচয় এখনো খুঁজে বের করা যায়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা তার দেখাশোনা করছে বলেও জানান তিনি।
অস্ট্রেলিয়া কাতার এয়ারওয়েজ কাতারে নারীদের পোশাক খুলে পরীক্ষা নারী যাত্রীদের তল্লাশি হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর