বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় ২ বাংলাদেশি

প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন দু’জন বাংলাদেশি। তারা হলেন— মানবাধিকারকর্মী রিনা আক্তার এবং শিক্ষক ও সমাজকর্মী রিমা সুলতানা রিমু। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা রিনা আছেন ছয় নম্বরে, আর রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাক্ষরতা নিয়ে কাজ করা রিমা আছেন ৮৭ নম্বরে।

পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং মহামারির এই কঠিন সময়ে কাজের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন— এমন নারীদেরকেই এই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নারী সদস্যদের নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করা ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস টিকা গবেষণা দলের প্রধান সারাহ গিলবার্টের সঙ্গে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রিনা ও রিমা।

রিনা আক্তার সম্পর্কে বিবিসি’র বর্ণনায় বলা হয়েছে মাত্র আট বছর বয়সে এক আত্মীয় তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা ও পরে যৌনকর্মীতে পরিণত হওয়া রিনার। সেই রিনাই এখন অন্য যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে রিনা ও তার দল ঢাকায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত চারশ যৌনকর্মীকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এসব যৌনকর্মীরা মহামারির কারণে চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়েছেন।

রিনা আক্তার বিবিসিকে বলেছেন, ‘লোকজন আমাদের পেশাকে ছোট করে দেখে। কিন্তু আমরা এটি করি খাবার কেনার জন্য। আমি চেষ্টা করছি যেন এই পেশার কেউ না খেয়ে থাকে এবং তাদের বাচ্চাদের যেন এ কাজ করতে না হয়।’

অন্যদিকে রিমা সুলতানা রিমু একজন শিক্ষক। তিনি কক্সবাজার ভিত্তিক ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিসের  একজন সদস্য। এ কর্মসূচিটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ উইমেন পিস বিল্ডার্সের অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য সংঘাতসঙ্কুল দেশগুলো থেকে আসা তরুণ নারীদের ক্ষমতায়ন করা, যেন তারা নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শান্তির দূত হতে পারেন।

রিমা তার মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবিলায়। রোহিঙ্গা শরণার্থী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যাদের শিক্ষার সুযোগ নেই তাদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীল ও বয়সভিত্তিক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি।

রেডিও ব্রডকাস্ট ও থিয়েটার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করেছেন। ‘আমি বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অধিকার আদায়ের জন্য নারীর শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি,’— বিবিসিকে বলেন রিমা।

বিবিসি’র এই তালিকায় উপমহাদেশ থেকে আরও জায়গা পেয়েছেন ভারতের নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানু এবং পাকিস্তানি মাহিরা খান ও সানিয়া নিশতার। মাহিরা খান পাকিস্তানের অভিনেত্রী। তিনি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। কাজ করছেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে।

রঙ ফর্সাকারী ক্রিম প্রত্যাখ্যান করা মাহিরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে সমর্থন করেন। তিনি সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত ইস্যুগুলো মোকাবিলা করতে এগুলো সিনেমা ও টিভিতে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে ড. সানিয়া নিশতার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ক বিশেষ সহকারী। মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং এমন আরও কিছু মাধ্যমে লাখ লাখ পাকিস্তানির জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

ভারতের ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানু বেশ আলোচনায় এসেছিলেন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে। ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক রানা আইয়ুব শাহীনবাগের মুসলিমদের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এই নারীকে ‘প্রান্তজনের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এছাড়া একশ নারীর তালিকায় আরও যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে আছেন— ইথিওপিয়ার ফুটবলার লোজা আবেরা জেইনোর, সিয়েরা লিওনের মেয়র ইয়ভনে আকি সাভিয়্যের, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী সারাহ আল আমিরি, সিরিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াদ আল কাতিয়াব, যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী জেন ফনডা এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্ট।

বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বিভিন্ন ভাষা বিভাগের কর্মীদের নেটওয়ার্কের পরামর্শে এই নামগুলো সংগৃহীত হয় ও পরে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ পায়। বিগত ১২ মাস ধরে যারা গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম তৈরি করেছে, প্রভাবিত করার মতো অনুপ্রেরণামূলক গল্প তৈরি করেছে, তাদের মাধ্যমে সমাজ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন করেছে বা তাদের কাজ দিয়ে সমাজকে প্রভাবিত করেছে, তারাই উঠে আসে চূড়ান্ত বিবেচনায় ।

টপ নিউজ বিবিসি ১০০ প্রভাবশালী নারী বিবিসির প্রভাবশালী একশ নারী মানবাধিকারকর্মী রিনা আক্তার সমাজকর্মী রিমা সুলতানা রিমু