Saturday 13 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিচিত্র বিশ্বে বছরের ১০ অবাক ঘটনা


২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৩০ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:০৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২০ সাল। উচ্চারণ করলেই মনে হয় করোনাভাইরাস মহামারি ছাড়া আর কিছুই নেই। আসলেও তাই। গোটা বছরটি কেটেছে মহামারির সঙ্গে লড়াই করে। লড়াই তো নয় যেন পালিয়ে বাঁচা। সব কাজ ফেলে নিরাপদে ঘরে বসা থাকাই যেন বড় কাজ। বলা চলে, পুরো বছরটাই গিয়েছে হাত গুটিয়ে বসে থেকে। হ্যাঁ, ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বিশেষ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় কাজ হয়েছে বটে, তবে অন্য বছরের মতো হুড়োহুড়ি ছিলো না এ বছরে। তবুও কি বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে বিচিত্র ঘটনার কোনো কমতি ছিলো? মোটেও না। এর মধ্যেও বিশ্বজুড়ে ঘটে গেছে নানা বিচিত্র ঘটনা। এমন সব ঘটনা যা আমাদের বিস্মিত করেছে, ভাবিয়েছে, হাসি-কান্নার কারণ হয়েছে বা কোনো কোনোটা নিছক কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়। বছরজুড়ে আলোচিত এমন ১০টি বিচিত্র ঘটনা একবার ফিরে দেখা যাক—

বিজ্ঞাপন

চেক প্রজাতন্ত্রে পোল্যান্ডের হামলা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে দখলবাজীর ইতিহাস নেই বললেই চলে। ওই বিশ্বযুদ্ধে একে অন্যের সঙ্গে তুমুল লড়াই করা দেশগুলো এখন শান্তিতে থাকতে চায়। যুদ্ধ জড়ানোর ঘটনা দেখাই যায় না। তবে ২০২০ সালে কি-না চেক প্রজাতন্ত্রের ভূমি দখলে সেনা অভিযান পরিচালনা করে বসলো পোল্যান্ড?

হ্যাঁ, এমনটা ঘটেছে সত্য, তবে তা নিছক ভুল বুঝাবুঝির কারণে। ঠিকই পড়েছেন। এ বছরের মার্চে যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তুঙ্গে— তখন এ ঘটনাটি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল।

গত জুনে পোল্যান্ড স্বীকার করে— এক অভিযান চালিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের কিছু অংশ দখল করেছিল দেশটির সেনাবাহিনী। তবে তা ভুল বোঝাবুঝির কারণেই হয়েছিল বলে দাবি করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘটনাটি ঘটেছিল মোরাভিয়ায়। এটি ঐতিহাসিক সিলেসিয়া অঞ্চলের অংশ, যার কিছু অংশ পড়েছে চেক প্রজাতন্ত্রে।

পিঙ্ক সুপার মুন
গত এপ্রিলের ৭ তারিখ পৃথিবী থেকে দেখা গেছে পিঙ্ক সুপার মুন। চলতি বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে ওইদিনই চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে। ফলে বছরের সবচেয়ে বড় চাঁদ ওইদিনই দেখেছেন পৃথিবীবাসী। পৃথিবী থেকে চাঁদ দেখা গেছে গোলাপি রঙের। তবে বাস্তবে তো এর চাঁদের রঙ গোলাপি হয়ে যায়নি।

আমেরিকার উপজাতিয় সংস্কৃতি সহ পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতে, সারা বছর জুড়ে পূর্ণ চাঁদের নানা নামকরণ করা হয়েছে। হয়ত বছরের সময়ের হিসাব রাখার জন্য এই প্রথার প্রচলন হয়েছিল। এপ্রিলের পূর্ণ চন্দ্রের নাম সেই হিসাবে গোলাপি চাঁদ বা পিঙ্ক মুন হলেও এই চাঁদের রঙ গোলাপি নয়।

চীনের আকাশে তিন সূর্য
গেলো অক্টোবরে চীনের মোহে শহরের বাসিন্দারা এমন এক ঘটনার সাক্ষী হলেন। শহরের বাসিন্দারা সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন মাথার উপর জ্বলজ্বল করছে গোটা তিনেক সূর্য। এমনটাও হয় নাকি?

অবশ্য বিজ্ঞান দিয়েছে তার উত্তর। দৃষ্টিভ্রমের কারণেই এমনটা মনে হয়। তিন সূর্যের মাঝখানের সূর্যটাই আসল সূর্য। ফলে মূলত একটি সূর্যই আমরা দেখি আর পাশের দুই সূর্য হলো তার প্রতিফলন। সূর্যের আলোর প্রতিফলনে আলাদা দুটি আলোকবিন্দু তৈরি হওয়ার এ ঘটনাকে বলা হয় সান ডগ। মূলত বায়ুমণ্ডলে মেঘের মধ্যে থাকা বরফে সূর্যের আলোর প্রতিফলিত হলেই আকাশে আরও আলোকবিন্দু তৈরি হয়। আর খালি চোখে দেখে মনে হয় যেন আরও কয়েকটি সূর্য।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিচে গোপন পথ
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নিচে পাওয়া গেছে ১৭ শতাব্দীতে তৈরি গোপন প্রবেশপথ। ২৬ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্ট নতুন এই দরজার খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি সবাইকে অবহিত করে। পার্লামেন্ট জানায়, এটা ১৬৬১ সালে তৈরি করা হয়েছিল রাজা দ্বিতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের জন্য।

প্রকল্পটির ইতিহাস বিষয়ক পরামর্শক প্রফেসর লিজ হ্যালাম স্মিথ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড আর্কাইভে আমরা প্যালেস সংশ্লিষ্ট ১০ হাজারের বেশি নথিপত্র ঘাঁটছিলাম—যেগুলো এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। এগুলোর মধ্যে আমরা ওয়েস্টমিনিস্টার হলের পেছনে প্রবেশপথের নকশা খুঁজে পাই।’

পরে আর্কিটেকচার অ্যান্ড হেরিটেজ টিম সাড়ে এগারো ফুট উঁচু দু’টি কাঠের দরজার অবস্থান শনাক্ত করতে সমর্থ হয়। আর দুই দরজার মাঝে পাওয়া যায় ছোট্ট একটি ঘর।

মদত্যাগ করেন তিনি
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এক নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি তার মূত্র বা প্রস্রাব দিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। গবেষণাগারে তার প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আর দশ জন মানুষের মতো স্বাভাবিক প্রস্রাব নয়, তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে অ্যালকোহল বা মদ!

যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গের বাসিন্দা ওই নারী শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এটা-ওটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েই দেখা গেছে, তার শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই ইস্ট ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে তৈরি হয় অ্যালকোহল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার মূত্রথলি থেকে যা বেরিয়ে আসে, তা মদ।

গবেষকরা এই সমস্যার নাম দিয়েছেন ‘ব্লাডার ফারমেন্টেশন সিনড্রোম’। এই অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে কখনো অ্যালকোহল পান না করলেও শরীরে তৈরি হবে অ্যালকোহল। মূলত শরীরের কার্বোহাইড্রেটগুলো বিরল এক ধরনের বিক্রিয়ার মাধ্যমে মূত্রথলিতে এই অ্যালকোহল উৎপাদন করে থাকে।

পাঁচ টিয়াকে সংশোধনাগারে পাঠাল চিড়িয়াখানা
একসঙ্গে হলেই খারাপ কথা বলে। ছোট-বড় বাছবিচার নেই, নেই সময়জ্ঞানটুকুও। দর্শকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি চলেই। এরিক, জেড, এলসি, টাইসন আর বিল্লি পাঁচ টিয়া পাখি মিলে বিরল এক সমস্যায় ফেলেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। উপায়ন্তর না দেখে তাদের মুখের ভাষা শোধরে নিতে প্রশিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়।

যুক্তরাজ্যের লিংকনশায়ার ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করা হচ্ছিল এই পাঁচ টিয়া পাখি একসঙ্গে হলেই গালাগালির তুবড়ি ছুটে। চিড়িয়াখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ নিকোলাস বলেন, “টিয়া পাখির মুখের এমন ভাষার সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু একসঙ্গে এমন পাঁচ টিয়া পাখি হলে যে কী হয় সে অভিজ্ঞতা আমাদের ছিলো না। অনেক দর্শকই এদের কথায় আনন্দ পায়। কিন্তু শিশুদের সামনে ওদের নোংরা কথা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম”।

জাপানে স্বচ্ছ কাচের পাবলিক টয়লেট
এ বছরের আগস্টে জাপানের রাজধানী টোকিওতে স্বচ্ছ কাচের পাবলিক টয়লেট চালু হয়। নান্দনিক ডিজাইনের টয়েলটগুলো ইতিমধ্যে জাপানের রাজধানীর আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। যদিও বাইরে থেকে ভেতর দেখার জন্যই তৈরি করা হয়েছে স্বচ্ছ কাচের টয়লেট, তবে ভয় নেই, ব্যবহারকারী ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেই আর তা স্বচ্ছ থাকবে না। কারণ দরজা বন্ধ করলেই স্মার্ট কাচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে ব্যবহারের সময় বাইরে থেকে কেউ দেখার ঝুঁকি নেই।

কর্তৃপক্ষ জানায়- ইট, সিমেন্টের নির্মিত পাবলিক টয়লেট থাকে অন্ধকার ও নোংরা। ফলে এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহার বিপজ্জনক। এ কারণে অনেকেই তা ব্যবহারও করে না। বিশেষত নারীদের জন্য অন্ধকার পাবলিক টয়লেট ঝুঁকিপূর্ণ। স্বচ্ছ কাচের টয়লেট হলে বাইরে থেকে ভিতর দেখে ব্যবহারকারীরা নিশ্চিন্ত মনে তা ব্যবহার করতে পারেন। টোকিওর ব্যস্ততম দুটি পার্কে এ পর্যন্ত দুটি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।

রহস্যজনক মোনোলিথ
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বে বছরের শেষ দিকে নতুন এক রহস্য নিয়ে ভাবাচ্ছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে ধাতব বস্তু মনোলিথ পাওয়া যাচ্ছে। প্রিজম আকৃতির ধাতব স্তম্ভটি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের মরুভূমিতে দেখা যায়। কে বা কারা এটি স্থাপন করলো তা জানার আগেই অবশ্য সেটি গায়েবও হয়ে যায়।

এরপর আমেরিকারও অন্য কয়েকটি রাজ্য ও ইউরোপের কিছু স্থানে পাওয়া গেছে মনোলিথ। মনোলিথ রহস্য এখনও সমাধান হয়নি। বিষয়টি ভাবনার কারণ বৈকি।

৫০ বছর বয়েসে দেড়শো সন্তানের বাবা তিনি
তার সন্তানের সংখ্যা বয়েসের তুলনায় তিনগুণ। বিচিত্র এ খবরে অনেকের চক্ষু চড়ক গাছ। জো নামের মার্কিন এই বাবা মূলত স্পার্ম দান করেন। তাই এত সন্তানের জনক হতে পেরেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারিতেও স্পার্ম দান করেছেন তিনি। এ বছর আরও ১০ সন্তানের বাবা হয়েছেন জো। এ ব্যাপারে জো বলেন, সন্তান জন্মাতে দেখলে ভালো লাগে। এসব সন্তানদের বেশিরভাগের চেহারাই আমার মতো দেখতে।

শুধু স্পার্ম দানই নয়, প্রয়োজনে সরাসরি যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সন্তান জন্ম দিতে সাহায্য করেন জো।

প্রিয় তারকার ডাকে কোমা থেকে ফিরলেন ভক্ত
বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হুঁশ চলে গিয়েছিল ইতালিয়ান তরুণী ইলিয়েনা মাতিল্লির। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কোমায় ছিলেন তিনি। কোনো চিকিৎসাই জ্ঞান ফেরাতে পারছিল না তার। তবে ইতালিয়ান ফুটবল সুপারস্টার ফ্রান্সিসকো টট্টির ডাকে জ্ঞান ফেরে অবশেষে।

ঘটনাটি কোনো সিনেমা বা রোমান্টিক গল্পের ক্লাইমেক্স নয়। বাস্তব এ ঘটনাটি ঘটেছে এ বছর। ১৯ বছর বয়েসি ইলিয়েনা মাতিল্লি ইতালিয়ান ক্লাব রোমার সমর্থক। ওই ক্লাবের কিংবদন্তী ফুটবলার ফ্রান্সিসকো টট্টি। তারই এক ভিডিও বার্তা পেয়ে কোমা থেকে ফিরেছেন তরুণী।

এ কাজটি হয় তার বাবা-মার বুদ্ধিতে। কোনো চিকিৎসাতেই কাজ হচ্ছিল না দেখে নিয়মিত মেয়ের কানের কাছে ফুটবল ক্লাবের অ্যান্থেমটি বাজাতেন তারা। এ খবর শুনে ফ্রানসিসকো টট্টি এক ভিডিওবার্তা পাঠান। বার্তায় তিনি বলেন, ‘হার মেনো না ইলিয়েনা। তুমি জিতবে। আমরা তোমার সঙ্গে আছে।’ টট্টির এ ভিডিওবার্তা শোনার পরই সাড়া দেন তরুণী। এর আগে ৯ মাস জ্ঞান ছিল না তার।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর