Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪০-এর কম বয়সী নেপালি নারীরা বিদেশ যেতে চাইলে লাগবে অনুমতি

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:২৩

৪০ বছরের কম বয়সী নেপালি নারীরা এখন থেকে চাইলেই বিদেশে যেতে পারবেন না। দেশের বাইরে যেতে হলে তাদের পরিবারের অনুমতি লাগবে। তবে এখানেই শেষ নয়, স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসেরও অনুমোদন লাগবে তাদের। এমন বিধান রেখেই নতুন একটি আইন জারি করেছে নেপাল সরকার।

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, নতুন এই আইন ‘চলাচলের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল’ অভিহিত করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেপালের সাধারণ নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীরা। ‘বিতর্কিত’ ও ‘পশ্চাদপদ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’ আখ্যা দিয়ে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে সরকার বলছে, ৪০ বছরের কম বয়সী নারীদের পাচারের ঝুঁকি ঠেকাতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নেপালের নতুন এই আইন বলছে, ৪০ বছরের চেয়ে কম বয়সী নারীরা দেশের বাইরে যেতে হলে তাদের পরিবার এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। নেপালের অভিবাসন দফতরের মুখপাত্র টেক নারায়ন জানিয়েছেন, ৪০ বছরের কম বয়সী নারীদের ‘ভিজিট ভিসা’য় বিদেশ সফরের জন্য নতুন এই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘৪০ বছরের কম বয়সী নারীদের পাচার ও অন্যান্য দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নতুন এই আইন করা হয়েছে। দেশের বাইরে যেতে হলে পরিবার ও স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয়ের সুপারিশ প্রয়োজন হবে তাদের।

নতুন এই আইনের কথা চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা নেপালেই তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। আইনটিকে ‘পশ্চাৎপদ’ উল্লেখ করে তারা বলছেন, এর মাধ্যমে নারীদের স্বাধীনভাবে চলাচলের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার খর্ব করা হলো। শুধু তাই নয়, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের যে মৌলিক দায়িত্ব, এই আইনের মাধ্যমে সরকার সেই দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটি কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

বিজ্ঞাপন

নেপালি এক নাগরিক টুইটে লিখেছেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মাধ্যমে আমরা পেছন দিকে যাত্রা করেছি। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। তারা সেটি না করে আমাদের ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকজন লিখেছেন, ‘চলুন আমরা পেছন ফিরে দেখি। আরও পেছনে, মাত্র ৩৫ বছর আগে, যখন নারীদের তাদের বাবা, বড় ভাই বা স্বামীর অনুমতি নিতে হতো। এরপর ছোট ভাইকেও সেই তালিকায় যুক্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত সেই তালিকাটি দাঁড়ায় ১১ জনের, যাদের অনুমতি নিয়ে নারীকে বাইরে যেতে হতো।’

আইনটিকে পশ্চাৎমুখী অভিহিত করেছেন নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক কমিশনার মোহন আনসারি। তিনি লিখেছেন, ‘যারা পেছনের দিকে হাঁটছে… তাদের (পুরুষদের) বলুন স্ত্রী ও অভিভাবকের সম্মতি নিয়ে আসতে। অভিবাসন কর্মকর্তারা, কেবল নারীরাই পাচার হয়? পুরুষদের পাচার হওয়ার খবর আমরা কবে জানতে পারব?’

আরেক নেপালি নাগরিক তার টুইটে পুরুষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন নারীদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘নারীদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া থামান। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা হয়তো আপনাদের নারীর প্রতি বিদ্বেষ দেখাতে ও তাদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেয়, কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে নারীদের নিয়ন্ত্রণের অর্থ পুরো নারীজাতির প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো। আপনাদের আমাদের জন্য কিছু বলার কোনো প্রয়োজন নেই, কিছু করারও প্রয়োজন নেই।’

এর আগে, নেপালি অবিভাসী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির সরকার। ওইসব বিধিনিষেধ নারীদের সুরক্ষার কথা ভেবে নেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওইসব বিধিনিষেধের কারণেই অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন রুট ধরে নারীরা বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হন। এর ফলে তারা পাচারের শিকার হন, নানা ধরনের বিপদের মুখেও পড়েন। ওই নিষেধাজ্ঞা অভিবাসনে আগ্রহী নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রার দিকে ঠেলে দিয়েছিল বলে তীব্র সমালোচনা হয়।

এবারেও নারীদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমোদন সংক্রান্ত এই জটিলতা নিয়ে চলছে একই ধরনের সমালোচনা। তবে নেপাল সরকার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তা পডেল বলেন, ‘নতুন এই আইনের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া নারীদের তথ্য সরকারের কাছে থাকবে। ফলে তারা কোনো বিপদে পড়লে সরকার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর আগে অনেক নেপালি নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিজিট ভিসায় বিদেশ গিয়ে পরে কাজ করার অভিযোগ আছে। এভাবে অনেকেই ধরা পড়েন ও অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হন।’

সরকারের এই সাফাই মানতে নারাজ সাধারণ নেপালি নাগরিকরা। এই আইন নারীদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। একজন টুইটে লিখেছেন, ‘‘আমরা কবে থেকে নারীদের মানুষ হিসেবে নিজের ও রাষ্ট্রের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্য হিসেবে দেখতে শুরু করব? নতুন এই আইনটি একেবারেই অযৌক্তিক।’

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

টপ নিউজ নেপাল নেপালি নারী বিদেশ ভ্রমণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর