Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিকরণ জরুরি


১৩ এপ্রিল ২০২১ ২১:২৩

ঢাকা: বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে, তৃতীয় লিঙ্গ ও লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, সমাজে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার জন্য যে সুযোগ তাদের পাওয়া উচিত তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু এখন সময় এসেছে তাদের মূলধারার জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা এবং সেজন্য যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা। তৃতীয় লিঙ্গ ও লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তি ও চাকরিদাতাদের মধ্যেকার দূরত্ব কমাতে সাহায্য করছে জুনিয়র কমার্স ইন্ডিপেন্ডেন্ট ঢাকা (জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট )। এ উপলক্ষে অনলাইনে একটি ওয়েবিনার ও ওয়ার্কশপ করেছে জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার মাস মার্চে শুরু হয় জুনিয়র ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্টের নতুন অধ্যায়—জুনিয়র ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র— সবার জন্য সমানাধিকার, সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তারা তৃতীয় লিঙ্গ ও লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উপলক্ষে শনিবার (১০ এপ্রিল) আয়োজিত হয় ওয়েবিনার ও ওয়ার্কশপ। অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে অংশ নেন জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর প্রতিনিধি, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী এবং তরুণ উদ্যোক্তারা।

বিজ্ঞাপন

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রেসিডেন্ট তাসনুভা আহমেদ। ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ নাজিয়া জেবিন এবং জেসিআই ঢাকার আইন বিষয়ক পরামর্শক আইনজীবী শরাবন তহুরা জামান।

এক প্রেজেন্টেশনে তৃতীয় লিঙ্গ ও লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিদের অবস্থা দেখানোর পাশাপাশি নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা বিষয়ে দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের মতো লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিরাও যে কোনো পেশা বেছে নিতে পারবেন। কিন্তু মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় এখনও তাদের গ্রহণ করা হয় না। যার ফলে তারা নিজের জন্য পছন্দের জীবন বেছে নিতে পারছেন না।

এতে আরও অংশ নেন ভুঁইয়া ফ্যাশন ও ‘আমাদের ভাবনা’ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সিনথিয়া ভুঁইয়া। তিনি জানান, পারিবারিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বলেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন তিনি। তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এসব ব্যক্তিদের কাজ না শিখিয়েই তিনি নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন। পরে প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে যান এবং অন্যদেরও আসতে বাঁধা দেন। তারা কাজ করতে চায় না বরং বাইরে টাকা তুললে বেশি টাকা পাবে এমন চিন্তা ধারণ করেন। এতকিছুর মধ্যেও তার কাছে দশজন লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তি কাজ করছেন।

মন্ত্রীর কাছে তিনি আহ্বান জানান, দেশে যেন আইন করে রাস্তায় টাকা তোলা বন্ধ করা হয়। এর মাধ্যমে তারাও মূলধারার কর্মজীবনে আসতে বাধ্য হবে।

নাজিয়া জেবিন বলেন, সাধারণত লিঙ্গ সমতার কথা বললে আমরা নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা ধরে নেই। এর ফলে বাদ পড়ে যায় তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা।

শরাবন তহুরা বলেন, ২০১৩ সালে আইনের মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডারদের নাগরিক স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তারা ভাবেন সামাজিকভাবে এখনও তাদের মানুষ হিসেবে সমান চোখে দেখা হয় না। ফলে সেভাবে মূলধারার চাকরির বাজারে ঢুকতে পারছেন না লিঙ্গান্তরিতরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সব লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে। চমৎকার এই উদ্যোগের জন্য জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্টের সঙ্গে যুক্ত তরুণদের অভিনন্দন জানান তিনি।

তাসনুভা আহমেদ বলেন, আমরা মূলধারার জীবনযাত্রায় সমাজের সবার অন্তর্ভুক্তিকরণের কথা বলছি। অন্তর্ভুক্তিকরণ তাদের জন্য কোনো অতিরিক্ত প্রাপ্য নয় বরং তাদের অধিকার। নারী-পুরুষের মতো ট্রান্সজেন্ডারদেরও রয়েছে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার যা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অংশ নেন চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মী হো চি মিন ইসলাম। তিনি সবাইকে এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ট্রান্সজেন্ডারদের অন্তর্ভুকতিকরণের বিষয়ে অনেকেই কাজ করছেন কিন্তু সেখানে ট্রান্স কমিনিউনিটি থেকে প্রতিনিধি রাখা হয় না। ফলে তাদের জন্য কোনো পরিকল্পনা করলে সেখানে ছোট ছোট অনেক ফাঁক থেকে যায় এবং অনেক পরিকল্পনাই মুখ থুবড়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ট্রান্স বা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারা থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এর ফলে তারা মূলধারার শিক্ষা, সমাজ এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার সমাজ তাদের স্বাভাবিকিভাবে না নেওয়ায় অনেক ট্রান্স ব্যক্তিই নিজের পরিচয় গোপন করে, যা তাদের জন্য মানসিকভাবে কষ্টদায়ক। কেউ হয়ত পুরুষের মতো দেখতে কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে নারী আবার অনেক নারীর ক্ষেত্রেও উল্টো ঘটনা ঘটে। এভাবে বাহ্যিক আচার-আচরণ দেখে এসব ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্যরা বিরূপ আচরণ করেন। একজন ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় যেন সে নিজেই নিশ্চিত করতে পারে এমন সমাজ গড়তে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

উল্লেখ্য, জেসিআই ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট একটি অলাভজনক সংগঠন যার নেতৃত্বে রয়েছে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সের তরুণরা। সমাজের সব শ্রেণির নাগরিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে তারা।

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর