Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়’

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
১৫ জুলাই ২০২১ ২০:৫৮

বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সামগ্রিকভাবে নারীর জন্য মানবাধিকার রক্ষা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। এমতাবস্থায় সকলে মিলে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কীভাবে সাংসদসহ সকলের সমন্বয়ে কাজ করা যায় তা নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে “নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা: প্রতিকারের সমন্বিত পদক্ষেপ” শীর্ষক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাথে অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী (সাবেক) এবং এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ, এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মোঃ আব্দুল আজিজ, এমপি এবং বেগম শবনম জাহান, এমপি।

বিজ্ঞাপন

মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর জীবনের অনেক দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে কিন্তু এই উন্নয়নের ধারা বাঁধা দেওয়ায় একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। সমস্যা সমাধানে যখন সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, তখন এসব ঘটনা নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তাদের আতংকিত করে তোলে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। অপরাধ ও ক্ষমতা একত্রে চলতে থাকলে নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবার মত পরিবার ও সমাজ তৈরি কখনোই সম্ভব না। তাই নারীর প্রতি সহিংসতাকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে দেখতে হবে। এসময় তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রণীত আইনের ধারাসমূহের উল্লেখ করে বলেন আমরা কতটা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলাম সেটি দেখতে হবে। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত রূপরেখা তৈরি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ, সহিংসতার ঘটনা সংসদে উত্থাপন, সাইবার অপরাধ দমন, ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত আইনি বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং কালো টাকার ব্যবহার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির নিষ্পত্তির দাবি জানান।

অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাপতি সাংসদ বেগম মেহের আফরোজ বলেন, সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিরা সবসময় সাথে আছেন, সবাই মিলে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আইন থাকলেও বাস্তবায়নে বাধা আছে। সহিংসতার অন্যতম কারণ সমাজে সচেতনতার অভাব ও পিছিয়ে থাকা। যেমন, কিশোর গ্যাং কেন তৈরি হচ্ছে তা আমাদের এখনই খুঁজে বের করতে হবে, নয়তো একসময় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি প্রাচীন প্রথা যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ক্ষমতার বহি:প্রকাশ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে, একইসাথে জেন্ডার বাজেট মনিটরিং ও নারী উন্নয়ন নীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবিও তিনি তুলে ধরেন। তিনি সহিংসতা প্রতিরোধে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদেরকে ও মহিলা পরিষদকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন করোনাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতাসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে এবং নারী ও কন্যাদের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলের লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সবসময় মহিলা পরিষদের পাশে আছে বলে মন্তব্য করেন।

মত-বিনিময় সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য শবনম জাহান বলেন, ‘আমাদের সরকার নারীবান্ধব। সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার প্রণীত নানা আইনের উল্লেখ করে বলেন, নারী ও শিশুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠানের নয় বরং পরিবারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পুলিশি তৎপরতা এবং আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, মহিলা মন্ত্রণালয়ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সহিংসতা প্রতিরোধে অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। এসময় তিনি সকল অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ও ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি করোনাকালীন সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে সরকারসহ সকলে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।

সংসদ সদস্য ডা. মোঃ আব্দুল আজিজ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকের আলোচনা সময়োপযোগী একটি আলোচনা। তিনি নারী ও শিশুর কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, যারা সহিংসতার শিকার হয় তাদের নিগৃহীত না করে সহায়তা করতে হবে, ভিকটিমকে দোষারোপ করা যাবেনা। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব তৈরি হচ্ছে, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় প্রতিটি সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত সভা করছে, কাজ করছে, যা সবসময় অব্যাহত থাকবে। এসময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে, এটি প্রতিরোধে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে জনপ্রশাসনের সকলকে সম্পৃক্ত করে কাজ চলমান আছে। শিশুকিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া, বাল্যবিবাহ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তিনি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে এলাকা ভাগ করে মহিলা পরিষদ, সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য এনজিওকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। সমন্বিতভাবে কাজ করলে এই সমাজ থেকে ধর্ষক দূর হবে ও সকল অপরাধ দূর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। তিনি করোনাকালে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন শিশু ও তরুণ নারীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি গত ছয়মাসে নারী ও কন্যার প্রতি সংঘটিত নানা ঘটনা ও ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এসময় তিনি ঘটনা বৃদ্ধির জন্য বেআইনি সালিশ, বেআইনি ফতোয়া, আইন ও বিচারের দীর্ঘসুত্রিতা, বিদ্যমান আইন যথাযথ সময়ে যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা, নিরাপদ আশ্রয়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অভাবসমূহকে উল্লেখ করে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।

উক্ত মতবিনিময় সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর