Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ত্যাগের ঈদে জয় হোক মানবতার

রাজনীন ফারজানা
২১ জুলাই ২০২১ ১২:৩০

করোনাকালে এল আরও একটি ঈদুলআজহা। যেহেতু এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদেশ্যে পশু কোরবানি দেওয়া হয়, তাই একে কোরবানির ঈদই বলা হয়ে থাকে সাধারণত। আর কোরবানি শব্দের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত ত্যাগের মহিমা। কুরআন অনুযায়ী চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা পশু কোরবানি করে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

বলা হয়ে থাকে পশু কোরবানিকে উপলক্ষ করে আসলে মানুষ তার ভেতরের পশুকে কোরবানি দেয়। এখানে পশু বলতে নেতিবাচক স্বভাব, আবেগ, অনুভূতির কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জুলুম, নির্যাতন, হত্যা প্রবণতার মানুষের যে আদিম স্বভাব সেই স্বভাবকে ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাই বলা হয়, প্রতিবছর ত্যাগের মহিমাকে ধারণ করে আসে ঈদুল আজহা। চাঁদের পরিক্রমায় আরও একটি ঈদুল আজহা আসলেও গতবছরের মত এবারও ঈদ এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্ব, প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে হাজারে হাজারে মানুষ। অন্তত অর্ধকোটি মানুষ ইতোমধ্যেই মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। আর যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি তার ঢেউয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মত কাবু আমাদের দেশও।

বিজ্ঞাপন

করোনা ভাইরাসে ২০২০ সালের জুন-জুলাই নাগাদ সংক্রমণ শনাক্তের হার ও পরিমাণ সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওই সময় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু কমতে থাকে। তবে মার্চ মাস থেকেই আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু সেই সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যায় জুন ও জুলাই মাসে। বিশেষত জুলাই মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে সংক্রমণ শনাক্ত, নমুনা পরীক্ষা ও মৃত্যুসংখ্যা সবই ছাড়িয়ে গেছে পূর্বের সকল পরিসংখ্যান।

১০০ দিনের সংক্রমণ প্রথম ৪০০ দিনের ৬৫%, মৃত্যু ৮৮%

ঈদের আগেরদিন অর্থাৎ বুধবার (২০ জুলাই) মারা গেছেন ২০০ জন আর আগেরদিন মারা যায় ২৩১ জন যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। মহামারিতে সদ্য স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে মৃত্যু আতঙ্ক সঙ্গে করেই এসেছে খুশির ঈদ। এর মধ্যেই ঈদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেশবাসী। ঈদকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহের জন্য শিথিল করা হয়েছে চলাচলের বিধিনিষেধ। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই মানুষ ছুটছে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আবার কেউ ছুটছেন পশুর হাটের দিকে। ঈদযাত্রা অথবা পশুর হাট কোথাও স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমত মানা হচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তও মিলছে বেশ।

গরুর হাটে এসে ১৮ জন করোনা পজিটিভ

এর আগে মহামারির শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ অধিক ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে আসছেন। যার প্রমাণ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত-অনুন্নত দেশ নির্বিশেষে দেখেছি। আমেরিকা থেকে শুরু করে সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সৃষ্ট অগণিত মৃত্যু, চিকিৎসাসংকট এমনকি সৎকারেও সংকট দেখেছি আমরা। কিন্তু সেসব দেখেও যেন সতর্ক নই আমরা অনেকেই। এটি সত্য যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি, কিন্তু যারা সুস্থ হচ্ছেন তারা দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরণের শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে চিকিৎসা ব্যয়ও যাচ্ছে বেড়ে। গত মাস থেকেই সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে বেড ফাঁকা থাকছে না। হাসপাতালে নিতে নিতেই প্রাণ চলে যাচ্ছে অনেক করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গসহ রোগীর। অনেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছালেও আইসিইউ বেড, হাইফ্লো অক্সিজেন সংকটের জন্য প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ঈদের সময়ে শিথিল লক ডাউনের ফলে ঈদ পরবর্তী করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ঈদ আসে খুশির বার্তা নিয়ে, উৎসবের উপলক্ষ হয়ে। সারাবছর কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় থাকা মানুষ ঈদের সময় স্বজনদের ডাক উপেক্ষা করতে পারেন না। তাই তারা ছুটে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই যখন স্বাস্থ্যবিধি মানায় সাধারণ মানুষের নিদারুণ উপেক্ষা চোখে পড়ে। পশুর হাটসহ ঈদযাত্রা বা কেনাকটার জন্য শপিংমলে ভিড় করা মানুষের সামান্য মাস্ক পরতেও যেন আপত্তি। তাই আসুন আমরা কোরবানির ঈদের ত্যাগের চেতনা ধারণ করে নিজেদের খুশি বিসর্জন দিয়ে অন্যকে নিরাপদ রাখি। কারণ, করোনা সংক্রমিত হলে আপনি হয়ত অসুস্থ হবেন না কিন্তু আপনার জন্য মারা পড়তে পারেন অন্য একজন বয়স্ক কিংবা কো-মরবিড রোগী। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে যেয়ে ভিড় না করাই ভালো। এই ঈদে আসুন সেই প্রতিজ্ঞাই করি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ও দেশের প্রতিটি মানুষকে এই মহামারি থেকে রক্ষার জন্য নিজে সচেতন হই, অন্যদেরকেও সচেতন করি।

একদিকে যেমন করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নাই, অন্যদিকে ত্যাগের এই ঈদে অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য। মহামারির প্রভাবে অনেকেই কর্মহীন হয়েছেন। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত অবস্থানে পৌঁছেছেন। এর ফলে প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনযাত্রায়। কারও ঘরে খাবার নাই তো কেউ কেউ শহরের পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। করোনা চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা করাতে যেয়েও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। তাই সামর্থ্যবানদের এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো অবশ্য কর্তব্য।

ঈদের মাংস তিন ভাগ করার নিয়ম আমাদের শেখায় কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। ত্যাগের এই ঈদে তাই একদিনই নয়, আসুন আমরা যার যার সামর্থ্য অন্যযায়ী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াই। আমাদের সবার প্রচেষ্টায় জয় হোক মানবতার।

সারাবাংলা/আরএফ/এসবিডিই

কোরবানির ঈদ কোরবানির পশুর হাট টপ নিউজ পশুর হাট রাজনীন ফারাজান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর