Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারীর প্রতি সহিংসতা, এ যেন আরেক মহামারি

সাদিয়া সাবাহ্
২৪ আগস্ট ২০২১ ১৫:৫৩

দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনকে একদল পুলিশ পৈশাচিকভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে হত্যা করে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে দিনাজপুরসহ সারা দেশে। তারপর থেকে দিবসটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা অন্যান্য যে কোনো সমস্যাগুলোর মতোই গুরুত্ব বহন করে। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা বলতে পারি না যে, নারীরা সুরক্ষিত। আমাদের নারীরা রাস্তাঘাটে, অফিসে এমনকি বাড়িতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের কাজ করতে পারছে- এমন দাবিও আমরা করতে পারি না। উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে যেন নারীর প্রতি সহিংসতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ যেন আরেক মহামারি। এর শেষ কোথায়? আদৌ কি এর শেষ আছে? সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী সবাই কাজ করে যাচ্ছেন নারী নির্যাতন নিয়ে। কিন্তু, সকল পদক্ষেপ যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র যদি আমরা দেখতে যাই, তাহলে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এই করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা যেমন বেড়েছে তেমনি তা বহুমাত্রিক আকার ধারণ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে এইটা বলা যায়, সমাজে যেন নারীর প্রতি সহিংসতা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটলেও তার দিকেই আঙুল ওঠে। নির্যাতনের শিকার নারীর পোশাক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখরোচক আলোচনা উঠে এবং শেষে তাকেই দায়ী করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে সমাজ ও রাষ্ট্র তো নয়ই পরিবারও দাঁড়ায় না। তাই তো নারীর প্রতি সহিংসতা হলে তেমন প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠে না। অপরাধের শাস্তির জন্য আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। আইন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছে না। এ সংস্কৃতি অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের শীর্ষস্হানীয় নারী সংগঠন মহিলা পরিষদ ১৩টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সারাদেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতনের তথ্য সংরক্ষণ করে। সংরক্ষিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম ছয়মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যাসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের মতো বিভিন্ন অপরাধের সংখ্যা ছিল ১৪৫১ টি। চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১৭৯৪টি। নারীর প্রতি সংগঠিত অপরাধ বৃদ্ধির হার প্রায় ২৪ শতাংশ। নির্যাতনের হার গ্রামেই বেশি। স্কুল বন্ধ থাকায়, কাজ না থাকায় এ সময় শিশু নির্যাতনের হারও বেশি। এটি একটি পরিসংখ্যানগত তথ্য যা মহিলা পরিষদের ডাটাভাণ্ডারে সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র আরো ভয়ানক।

আবহমান কাল ধরেই বাংলাদেশের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আর এই পুরুষতন্ত্রের ফসলই নারীর প্রতি সহিংসতা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী সবসময়ই অবলা,অবহেলিত। এই সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা শুরু হয় যৌতুকের জন্য, কন্যাসন্তান জন্মদানের জন্য, রান্নায় একটু লবন বেশি দেওয়ার জন্য।

শুধুমাত্র পুরুষতন্ত্র যে নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী তা কিন্তু নয়। অর্থনৈতিক বিষয়টাও অনেকখানি নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী। আমাদের এই উপমহাদেশের পিতামাতার সন্তান জন্মদানের পূর্বেই ভেবে বসে থাকেন, বৃদ্ধ বয়সে ছেলেসন্তানই তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে দেখাশুনা করবে। তাই জন্মের পূর্বে মায়ের গর্ভের যে ভ্রুণ কন্যাসন্তানের হয় তার আর পৃথিবীর মুখ দেখা হয় না। জন্মের পূর্বে যেমন ভ্রুণটা কন্যাসন্তান হওয়ার দায় এড়াতে পারে না, জন্মের পরেও সে নারী হওয়ার দায় এড়াতে পারে না। রাস্তাঘাটে, বিদ্যালয়ে অফিসে, বাড়িতে এমনকি অনলাইনেও হেনস্তার মুখোমুখি হয়। কখনো অফিসের সহকর্মী, কখনো স্বামী, কখনো বন্ধুর দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হতে থাকে নারীরা। এ নির্যাতনের মহামারি থেকে বের হওয়ার কি কোন পথ নেই? এ পথের কানাগলি খুঁজে হতাশ নারীসমাজের বড় অংশ।

জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধের এই দিবসে আমাদের উচিত নারী পুরুষ সম্মিলিত ভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা। আমাদের উচিত বৈষম্য দূর করে একে-অপরের সহযোগী হয়ে উঠা। একমাত্র সহযোগী হয়ে কাজ করলেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ নতুবা এই মহামারি কাটিয়ে উঠা অনেক কঠিন হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

নারী নারীর প্রতি সহিংসতা রোকেয়া সরণি সহিংসতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর