Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটলে তাকে দমানোর চেষ্টা করা হয়

সারাবাংলা ডেস্ক
২৯ আগস্ট ২০২১ ২৩:১২

নারী মাথা উঁচু করে হাঁটলে পুরুষতন্ত্র তা সহ্য করতে পারে না। এক্ষেত্রে নারীকে মেরে, ক্ষেত্র বিশেষে রিমান্ডে নিয়ে তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ। পরীমনি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে দেখেছি মাথা উঁচু করে মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটতে, যার জন্য তিনি অভিবাদন পাবেন।’ পরীমনি বের হয়ে এভাবেই মাথা উঁচু করে কাজে ফিরবেন বলে আশাবাদ জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা ডটনেটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘সারাবাংলা স্পটলাইট উইথ শারমিন শামস পাওয়ার্ড বাই ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে তিনি এই মন্তব্য করেন। বুধবার (২৫ আগস্ট) রাত ৯টায় সারাবাংলা ডটনেট ও ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের ফেসবুক পেজ থেকে একযোগে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সারাবাংলা স্পটলাইটের প্রথম এই পর্বের বিষয় ছিল ‘পরীমনির অপরাধ, আইন ও নাগরিক অধিকার’।

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর সম্পাদক শারমিন শামস্‌-এর সঙ্গে এই আলোচনায় ইমতিয়াজ মাহমুদ ছাড়াও যুক্ত ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক আজাদ আবুল কালাম এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার।

আয়োজনে বক্তারা পরীমনিকে গ্রেফতার, তার বাসায় মাদকদ্রব্য পাওয়া, জামিন আবেদন অগ্রাহ্য করে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানান। তারা মনে করছেন, একজন নাগরিক হিসেবে পরীমনির যেসব রাষ্ট্রীয় অধিকার পাওয়ার কথা সেগুলো থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। রাষ্ট্র, সমাজ, অভিনয়জগত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব মহলই তাকে একজন নারী, একজন নায়িকা হিসেবে বিচার করছে।

আইনজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা বা মাদক সরবরাহের কোনো মামলা হয়নি। তার বাড়িতে অনেকগুলো মদের বোতল পাওয়া গেছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার বিধান অনুযায়ী পুলিশ গ্রেফতারের পর আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাবেন। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক করবেন তাকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে নাকি আদালতে পাঠানো হবে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে আবেদন করতে পারে। তখন ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব মামলার বিবরণ ও পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে কি না, তা বিচার করে সিদ্ধান্ত দেওয়া। একজন ম্যাজিস্ট্রেট চাইলেই রিমান্ড দিতে পারেন না। আইনের ভাষায় ম্যাজিস্ট্রেটকে নিজের কাছে সন্তুষ্ট হতে হয় রিমান্ডের প্রয়োজন মনে হলে।

বিজ্ঞাপন

ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, পরীমনির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাকে প্রথমে র‍্যাব তুলে নিয়ে গেল যা গ্রেফতার নয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা র‍্যাব তাকে নিজেদের হেফাজতে রেখে তারপর মামলা করে, যা বেআইনি। ২৪ ঘণ্টা পর মামলা করে আবার রিমান্ড চায়। ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। আবারও পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চায় সিআইডি। এবার তারা যুক্তি দেখায়, তারা এই মামলায় নতুন বলে রিমান্ড প্রয়োজন। এরপর যখন আবার পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়, তখন ম্যাজিস্ট্রেটের উচিত ছিল রিমান্ডে নেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করা।

তিনি বলেন, রিমান্ডে দেওয়ার আগে আসামির কাছ থেকে যেসব জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়াও অন্তত দু’জন নিরপেক্ষ সাক্ষীর বক্তব্য প্রয়োজন হয়, যারা দেখেছে। রিমান্ডটা প্রথম থেকেই অদরকারি ছিল। আইনের ধারা অনুযায়ী না চলে বারবার যে রিমান্ডে নেওয়া হলো, এখানে বলা যায় তার সঙ্গে বিচার বিভাগ, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই অন্যায় করেছে। কারণ যে মামলা দেওয়া হয়েছে সেটি শুধুই মাদকদ্রব্য উদ্ধারের, কোনো ফৌজদারি অপরাধ বা নৈতিক অপরাধের না। সংবিধান নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আসামিকে নিজের অপরাধ নিজে প্রমাণ করতে বাধ্য করা যাবে না। সে অপরাধী হলেও চুপ থাকার অধিকার তার আছে। এখানে আমরা পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের যে মামলা দেখছি, সেখানে রিমান্ড পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় ছিল। ন্যূনতম দায়িত্ববোধ সম্পন্ন একজন ম্যাজিস্ট্রেট হলে এই আবেদন কখনোই মঞ্জুর করতেন না।

শারমিন শামস্‌ বলেন, সংবিধানে নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হলেও পরীমনির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে না। তাকে একবার র‍্যাব, একবার পুলিশ এভাবে বিভিন্ন মহল জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করছে।

পরীমনির গ্রেফতার ও হয়রানির ঘটনায় চলচ্চিত্র শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো মহলই তার পাশে দাঁড়ায়নি উল্লেখ করে নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী পরীমনি যথেষ্ট জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। তিনি চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং আরও করতে পারবেন। কিন্তু দেখা গেল, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির থেকে পরীমনিকে তড়িঘড়ি করে অপরাধী ঘোষণা করে তাকে নিজেদের কেউ না বলা হলো।

তিনি বলেন, কেউ যদি অপরাধী হয় কেউ না থাকলেও তার পরিবার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু এক্ষেত্রে আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই পরীমনিকে অপরাধী বলতে দেখা গেল। আবার কেউ কেউ এর পক্ষে সাফাইও গেয়েছে।

বিশিষ্ট এই অভিনেতা বলেন, শিল্পী সমিতি যেমন তেমন আলাদা করেও কোনো শিল্পীকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না তেমন একটা। এর কারণ আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। যেকোনো শিল্পীর প্রতি আঘাত এলে প্রতিটি শিল্পীর দায়িত্ব প্রতিবাদ জানানো। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি অনুপস্থিত দেখা গেল, যা আমাকে বেশ অবাক করেছে।

রাজনৈতিককর্মী লাকী আক্তার মনে করেন, পরীমনির আগরিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাকে হেনস্থার চিত্রে একধরনের জিঘাংসা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, পরীমনি নারী ও শোবিজের মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিগত বিষয় সামনে আনা হয়েছে যেন অপরাধের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনই প্রধান আলোচ্য। এমনকি গণমাধ্যমকেও দায়িত্বহীন আচরণ করতে দেখা গেছে। পরীমনির চরিত্র বিচারই যেন তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

লাকী আক্তার বলেন, পরীমনির ঘটনায় অনেকেই প্রতিবাদ করলেও চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট লোকজনকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। পরীমনির গ্রেফতার থেকে শুরু করে তাদের এই প্রতিবাদহীনতার ঘটনা দিয়ে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা বোঝা যায়। এগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। কেন চলচ্চিত্র শিল্প এত দুর্বল, কেন শিল্পীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন— এসব কারণও আলোচনায় আসতে হবে।

আজাদ আবুল কালাম বলেন, একটি দেশকে বহির্বিশ্বে চেনা যায় তার শিল্প-সংস্কৃতি আর সাংস্কৃতিক আচরণ দিয়ে। সে দেশের উন্নয়ন বা অবকাঠামোর চেয়েও বেশি এসবই উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনেও শিল্প-সংস্কৃতির অবদান কোনো অংশে কম নয়। ষাটের দশকে পাকিস্তানি সরকার রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ তেমন সচেতন আর প্রতিবাদী মানুষের দেখা মেলা ভার।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ আজাদ আবুল কালাম পরীমনি পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর লাকী আক্তার সারাবাংলা স্পটলাইট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর