‘আত্মরক্ষার কৌশল নারীকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে’
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২২
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘নারীকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে হবে। কারণ এটি প্রতিকূল পরিবেশেও নারীকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়।’
ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ—ভ্রমণকন্যার অন্যতম প্রকল্প নারীর চোখে বাংলাদেশ এর বর্ধিত কার্যক্রম ‘জেন্ডার ইক্যুইটি অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই আমাদের সমাজ মেয়েদের ওপর অনেক ধরনের বাধার দেয়াল তুলে দেয়। এসব প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন আসে তাদের নিরাপত্তার। আর সেজন্যই নারীকে আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে হবে।’
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক। এসময় দেশের ৬৪ জেলার শিক্ষা অফিসাররাও যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নারীর বয়ঃসন্ধি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে সফল হওয়া ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়টি অনেক আগে থেকে থাকলেও এখনও অনেক শিক্ষক এটি পড়াতে চান না। এর ফলে কিশোর-কিশোরীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পায় না। বিভ্রান্তি নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে এ সময়টা পার করে তারা। এর ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।’
জেন্ডার ইক্যুইটি অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পটির আওতায় অনলাইনে দেশের ৫০০ স্কুলের শিক্ষার্থীদের নানান বিষয়ে সচেতন করবে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ও পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বয়ঃসন্ধিকাল, আত্মরক্ষা কৌশল, ভালো স্পর্শ-খারাপ স্পর্শ, মাদক, বাল্যবিবাহ ও সড়ক নিরাপত্তা। আগের প্রকল্পে শুধুমাত্র কিশোরীদের যুক্ত করা হলেও এবারের প্রকল্পে কিশোরদেরও যুক্ত করা হবে। ২০২৬ সালের ৩১ আগস্ট শেষ হবে প্রকল্পটি।
ট্রাভেলেটসের কার্যক্রমে কিশোরদের যুক্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। তরুণদের এসব কাজের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে ওঠবে।
ভ্রমণকণ্যাদের এ কাজে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যারা জড়িত তাদের সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে এরকম যত বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন তত সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের মেয়েরা এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোক, এগুলো সম্পর্কে জানুক।’
নারীর উন্নয়নে ২০১৬ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছেন ৬০ হাজারেরও বেশি নারী সদস্য ও ৮০০’র বেশি স্বেচ্ছাসেবী।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মানসী সাহা ও ডা. সাকিয়া হক বলেন, ‘১ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মসূচী শুরু করেছি, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর আত্মউন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। তবে স্কুল খোলার পর আমরা অফলাইনে আমাদের কার্যক্রম আবারও শুরু করব।’
তিনি জানান, ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ৫ মে পর্যন্ত তারা স্কুটিতে করে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন। এসময় তারা ২৩ হাজারের বেশি স্কুলছাত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ, প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আত্মরক্ষা কৌশল ও খাদ্য-পুষ্টির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কর্মশালা করেন। এবারের বর্ধিত কার্যক্রমে এসব বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাল্যবিবাহ, ভালো স্পর্শ-খারাপ স্পর্শ, মাদক ও সড়ক নিরাপত্তা।
নারী উন্নয়নমূলক এ কাজের জন্য এরইমধ্যে দেশ-বিদেশে নানা স্বীকৃতি পেয়েছে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’, ‘জাফিগো অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’, ‘ইয়ুথ অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’, ‘চেঞ্জমেকার প্রোগ্রাম ২০১৯’ এবং ‘দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড ২০২০’।
সারাবাংলা/এসএসএস