Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হজের বিভিন্ন বিধিবিধান

তরিকুর রহমান
২৮ মে ২০২২ ১৬:৩৬

হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সমর্থ নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।’ শরিয়াহর বিধানমতে, এক ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। যদিও এইবার বিমানযাত্রা শুরু হতে কদিন দেরি হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। আর জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৮ জুলাই থেকে অনুষ্ঠিত হতে পারে পবিত্র হজ। এবার যারা হজ পালন করতে সৌদি আরবে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

হজে যাওয়ার আগে যে কাজগুলো করা জরুরি সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যপরীক্ষা, টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ এবং হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ। এছাড়া হজ পালনের প্রশিক্ষণও নেওয়া উচিত। হজ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় থেকে জানা যাবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় বইপুস্তক বা পরিচিত লোকজনের কাছ থেকেও হজবিষয়ক তথ্য জানা যায়। তবে হজের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে www.hajj.gov.bd ওয়েবসাইটে।

হজযাত্রার আগে পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও তারিখ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। যারা পড়তে পারেন না, তারা অভিজ্ঞ হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন।

হজ ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর করা, ভ্রমণ করা। পরিভাষায় হজ হলো: নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ আমল করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ—এই ৫ দিন হজের সময়। হজের নির্ধারিত স্থান মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা।

বিজ্ঞাপন

হজের বিশেষ আমল: ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, অকুফে আরাফা, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দমে শোকর ও কোরবানি, হলক ও কছর এবং জিয়ারতে মদিনা-রওজাতুর রাসুল (সা.) ইত্যাদি।

হজের ফরজ তিনটি

১. ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা।
২. অকুফে আরাফা করা: জিলহজের ৯ তারিখের জোহর হতে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা: জিলহজের ১০ তারিখ ভোর হতে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবা ঘর তাওয়াফ বা ৭ বার প্রদক্ষিণ করা।

হজের ওয়াজিব সাতটি

১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা।
২. সাফা ও মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো।
৩. রমিয়ে জিমার, ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা।
৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি করা।
৫. মাথার চুল কামিয়ে বা কেটে ইহরাম খোলা।
৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা।
৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা।
(আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)।

হজ ফরজ

হজ ফরজ হয় প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানসম্পন্ন সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর। সামর্থ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হজ পালন করতে হয়। অকারণে হজ বিলম্বিত করা উচিত নয়। তবে হজ ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য যে প্রি-রেজিস্ট্রেশন ও রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে পদ্ধতি অনুসরণ না করে উপায় নেই। তাই কেউ যদি হজের জন্য যথাসময়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করে রাখেন এবং রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ আসার আগেই মারা যান অথবা রেজিস্ট্রেশন করার পর মারা যান অথবা রেজিস্ট্রেশনের পর বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে হজ পালনে অসমর্থ হন; তাহলে তিনি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি থেকে বেঁচে যাবেন, ইনশাআল্লাহ। তাই সামর্থ্যবানদের অবশ্যই এখনই হজের জন্য প্রি-রেজিস্ট্রেশন করে রাখা কর্তব্য।

হজে বদল বা বদলি হজ

হজ ফরজ অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে অথবা অসুস্থতা বা কোনো ওজর তথা বাধার কারণে হজ পালন করতে না পারলে তার পক্ষে অন্য কারও দ্বারা বদলি হজ করানো আবশ্যক। আলিম ও পরহেজগার ব্যক্তি দ্বারা বদলি হজ করানো উত্তম। যিনি বদলি হজ করবেন, তার পূর্বে হজ করা শর্ত নয়; তবে নিজের ওপর হজ ফরজ থাকলে তা আদায় না করে বদলি হজ করা যাবে না।

লেখক: শিক্ষক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

তরিকুর রহমান ধর্ম ও জীবন ফিচার হজের ফরজ তিনটি হজের বিভিন্ন বিধিবিধান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর