কোরবানির আগের আমল ও বিধি-নিষেধ
২ জুলাই ২০২২ ১৭:২১
পবিত্র জিলহজ মাস শুরু হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই হবে ঈদুল আজহা ও কোরবানি। যারা কোরবানি করবেন তাদের জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিনের রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও বিধি-নিষেধ। যা পালন করা সুন্নত ও সাওয়াবের কাজ।
পুরো জিলহজ মাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ‘আশারায়ে জিলহজ’ বা জিলহজের প্রথম দশ দিন। কোরআনে কারিমের সূরায়ে ফজরের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এই ১০ রাতের কসম খেয়ে বলেন, ‘কসম ফজরের এবং ১০ রাতের।’ এর দ্বারা জিলহজের প্রথম দশকের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। হাদিস শরিফে আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নিকট কোনো দিনের আমলই এই দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়? উত্তরে বললেন, না আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদে যায় এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসে।’ (সহিহ বোখারি: ১/১৩২)
জিলহজের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে শেষের দু’দিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকে হাদিসের পরিভাষায় ‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমে নাহর’ বলা হয়। এ ছাড়াও দুটি ইবাদত এ মাসের প্রথম দশককে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তোলে। যে দুটি ইবাদত জিলহজ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমজানেও নয়। একটি হলো হজ, অপরটি কোরবানি।
যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে তাদের জন্য উচিত বিলম্ব না করে হজ আদায় করা। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন, যাদের ওপর হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও তা আদায়ে বিলম্ব করে থাকেন। মুসলমান হিসেবে কোনো পুণ্যময় কাজে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা উচিত নয়।
যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা তো অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। এমনকি যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন। বাহ্যিক সামর্থ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা তো আল্লাহ তায়ালার হাতে। সে কারণেই কোরবানি ওয়াজিব না হলেও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত।
এছাড়া জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি সম্পাদনের আগে পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা সুন্নত। পবিত্র হাদিসে হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।” (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন জিলহজের দশম দিন আসে এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার নিয়ত করে; তখন সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোনো অংশ না কাটে।’ (মুসলিম)
অর্থাৎ ৩০ জিলকদ দিন শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ঈদের দিন কোরবানি সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত হাত ও পায়ের নখ, মাথাসহ অন্যান্য অঙ্গের চুল কাটা থেকে বিরত থাকা। যদি কারো নখ ও চুল কাটার প্রয়োজন হয় তবে জিলকদ মাসের শেষ দিন সন্ধ্যার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নেয়া জরুরি। কোরবানির নিয়ত থাকলে এই আমলটিকে ফোকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব বলেছেন। জিলকদ মাসের শেষ দিনের মধ্যে নখ ও চুল না কাটলে তা লম্বা হয়ে যেতে পারে। যা সুন্নতের পরিপন্থী।
এ ছাড়াও কোরবানিদাতার জন্য জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজায় রয়েছে অনেক সওয়াব। বিশেষ করে আরাফার দিন রোজা পালনের সাওয়াব অনেক বেশি। এই মাসের প্রথম দশক যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল এবং এ সময়ের আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় ও গ্রহণীয় তাই এই দশকে বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। বিশেষত নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দান-খয়রাত ইত্যাদি। জিলহজের প্রথম দশকের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) জিলহজের প্রথম ৯ দিন (ঈদের দিন ছাড়া) রোজা রাখতেন। তবে এই দশকের নবম দিনটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দিন রোজা রাখার গুরুত্বও বেশি। হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’
৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ নামাজ একাকী কিংবা জামাতের সঙ্গে, পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের ওপর একবার এ তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষ উচ্চস্বরে আর নারী অনুচ্চস্বরে তাকবির বলবে।
লেখক: আইনজীবী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
এ জেড এম আব্দুস সবুর কোরবানির আগের আমল ও বিধি-নিষেধ ধর্ম ও জীবন ফিচার