কোরবানির প্রস্তুতি
৫ জুলাই ২০২২ ১১:০০
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানমাত্রই কোরবানি দিয়ে থাকেন। এই ইদে ব্যস্ততার পুরোটাই থাকে পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কোরবানির আয়োজনে অনেকেই নানা ভুল করে থাকেন। কোরবানির আগে ও পরে কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। কারণ কোরবানি যেমন নিয়ম মাফিক করতে হয় আবার কোরবানির পরে কোরবানির স্থান পরিস্কার করাও জরুরি। আসুন জেনে নেয়া যাক কোরবানির কিছু করণীয় ও প্রস্তুতির বিষয়ে-
কোরবানির আগে
পশু কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, চামড়ায় যেন কোনো গভীর ক্ষত চিহ্ন বা দাগ যেন না থাকে।
পশুকে বাসায় এনেই পানি খাওয়ান। স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ানো অনেক বেশি উপকারী। প্রাণীটি ধকল কাটিয়ে আরামবোধ করবে।
রোগব্যাধি থেকে দূরে রাখতে জীবাণুনাশ অথবা ক্ষার জাতীয় সাবান বা পটাস দিয়ে গোসল করাতে হবে অথবা স্প্রে করতে হবে। তবে ছাগলকে রাতের বেলা গোসল না করানো ভালো।
পশুর যত্ন নিন। অহেতুক কোনো কষ্ট দেবেন না। পশুকে প্রদর্শন করবেন না। পশু এমন স্থানে বাঁধুন যেন পথচারীদের কষ্ট না হয়।
নতুন পরিবেশের সঙ্গে পশু ভালোভাবে খাপ খাইয়ে চলছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। খাবার দিলে খাচ্ছে কিনা, সক্রিয় ও চঞ্চল কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোরবানির জন্য দক্ষ কসাই নিয়োগ করুন। নইলে কোরবানির পশুর সমস্যা হতে পারে।
কোরবানির আগে পশুকে ভালোভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। কোরবানির সময় পশুকে শোয়ানোর জন্য পাটের রশি প্রস্তুত রাখতে হবে।
কোরবানির আগের রাত ১০টার পর থেকে পশুকে কোনো প্রকার খাদ্য খাওয়ানো যাবে না। শুধুমাত্র পানি বা তরল খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে।
কোরবানির সময়ে
বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি করা ভালো।
কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছানো সহজ হবে।
পশু জবাইয়ের কাজে বড় ও চামড়া ছাড়ানোর কাজে ধারালো মাথা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কোরবানির জন্য শোয়ানো অবস্থায় পশুটিকে যেন টানাহেঁচড়া না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কোরবানির সময় পশুকে ২০ হাত রশি দিয়ে বেঁধে শোয়াতে হবে। এমনভাবে পশুকে রাখতে হবে যাতে পশু বেশি কষ্ট না পায়।
পশু জবাই করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবাই করার সময় পশুর কষ্ট না হয়।
কোরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়াতে হবে। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।
পশুর ধমনী যাতে পুরোপুরি কাটা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাংস কাটা শুরু করা হলে মাংসের ভেতর রক্ত থেকে যাবে।
জবাই করার স্থানটিতে ঠিক গলার নিচে দেড় ফুট গভীর ও দেড় ফুট আড়ে ও লম্বায় একটি গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে পশুর রক্ত ঝরাতে হবে।এমনভাবে পশুকে রাখতে হবে, যাতে গর্তে সম্পূর্ণ রক্ত ঝরে পড়ে।
কোরবানির পর
জবাই করার পর পশুকে টানাহেঁচড়া না করে উঁচু করে সরিয়ে জবাই করার স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে চামড়া ছড়াতে হবে। চামড়া ছড়ানোর পদ্ধতি এবং যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, তা অন্তত তিনদিন আগে প্রস্তুত রাখতে হবে।
কোরবানির গোশত তিন ভাগ করা মোস্তাহাব। এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে উপহার দিন। এক ভাগ গরিব-মিসকিনকে দান করুন। এক ভাগ নিজের পরিবার-পরিজনদের জন্য রেখে দিন।
জবাই করা, গোশত বানানো অথবা কোরবানি সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে যারা সহযোগিতা করেছে- সে সবের বিনিময়ে পশুর কোনো অংশ তাদেরকে দেওয়া যাবে না।
কোরবানির পশুর গোশত, চর্বি, ভুড়ি বিক্রি করা বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নেই। নগদ অর্থ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে তাদের পাওনা পরিশোধ করুন।
কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে রাখা যাবে না। এগুলো গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে। কারণ রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর যদি রক্ত মাটি থেকে সরানো সম্ভব না হয়, তাহলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অনেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা এক সঙ্গে জড়ো করে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি