Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহানবী (স.) যেভাবে কোরবানির মাংস বণ্টন করতেন

তরিকুর রহমান
১০ জুলাই ২০২২ ১৩:২০

ইসলাম ধর্মের ইতিহাস যতটা প্রাচীন, কোরবানির ইতিহাস ততটাই প্রাচীন। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ইদুল আযহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য লাভের ও সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম কোরবানি। এ পন্থায় ত্যাগ, তিতিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সর্বাধিক প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হয়। পশু কোরবানির ফলে অন্তর হবে পরিশুদ্ধ। আর এটাই হলো কোরবানির মূল প্রেরণা।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করা পশুর মাংস ভাগ করার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। মহানবী (সা.) কোরবানির পশুর মাংস ভাগ করার নিয়ম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কোরবানির মাংস একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ দিতেন গরীব-মিসকিনদের।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সূরা হজ্ব-২৮)। রাসূলুল্লাহ (স.) কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন- ‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’(বোখারি-৫৫৬৯)। ‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়।

তবে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে ৩টি ভাগের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে,পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) হতে পরিমাণ নির্দিষ্ট করার কোনো স্পষ্ট আমল পাওয়া যায় না। রাসুলুল্লাহর আমলে তিনি প্রত্যেক কোরবানির পশু হতে কিছু কিছু করে নিয়ে রান্না করতেন, বাকিটা পুরোটাই দান ও বিতরণ করে দিতেন।

তবে আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) হতে একটি আছার (বক্তব্য) পাওয়া যায়, ‘কোরবানির পশু বা হাদি হতে ১/৩ তোমার পরিবারের জন্য, ১/৩ তোমার আত্নীয়-প্রতিবেশীর জন্য, ১/৩ গরিব মিসকিনের জন্য। তাহলে সাহাবাদের আমল থেকে পরিমাণ নির্দিষ্ট করার প্রমাণ পাওয়া যায়।’ যদি প্রয়োজন হয়, গরিব কোরবানি করেছে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি বা তার চেয়ে অভাবী আশেপাশে আর কেউ নেই তাহলে যদি পুরোটাই নিজেরা খায়, সেটাও জায়েজ। তার চেয়ে সচ্ছলদেরকে বিতরণ করতে হবে, এটা জরুরি নয়। তবে এখলাস থাকতে হবে, নিয়ত শুদ্ধ হতে হবে। সর্বোপরি কোরবানি আল্লাহর সন্তষ্টির উদ্দেশে হতে হবে। অথবা কোনো অংশই না খেয়ে পুরোটাই দান করে দিলে—এটাও জায়েজ।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) এর একটি আছার— ‘এটা আল্লাহ পাক হতে অনুগ্রহ; কোরবানির মাংস পুরোটা নিজেরা খাওয়া যাবে, দরিদ্রদের দান করা যাবে বা পুরোটা উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের বিতরণ করা যাবে। এছাড়া ইবন মাসঊদ (রা.) কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন বলে উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন ইমামগণও কোরবানির গোশতকে তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন।

কোরবানির মাংস আত্মীয় ও গরীবদের মাঝে বিতরণ না করাটা খুবই গর্হিত কাজ। এতে কৃপণতা প্রকাশ পায়। কারণ কোরবানির মাধ্যমে কোরবানিদাতা অহংকার থেকে নিরাপদ থাকেন এবং তার অন্তর পরিশুদ্ধ থাকে।

ইসলামি জ্ঞানে বুৎপত্তি অর্জন করা আলেমগণ বলেন, কোরবানির মাংস নিজে রেখে একা একা খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এতে নিজের অন্তরের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায়।

লেখক: শিক্ষক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

তরিকুর রহমান ধর্ম ও জীবন ফিচার মহানবী (স.) যেভাবে কোরবানির মাংস বণ্টন করতেন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর