মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাবনায় শোক দিবস
১৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:০০
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সাধিত হয়। এ হত্যাযজ্ঞ ছিলো বাঙালি জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এদেশের কিছু বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমেই হয়ত তার আদর্শ শেষ হয়ে যাবে। শোকের মাসে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সংগঠন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ’-এর সদস্যদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন সাংবাদিক শেখ শাহরিয়ার হোসেন।
‘বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যাক্তির নন, বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ’
—মো. খালেদুজ্জামান ফারছিম, চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ
‘বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধের সেই মহানায়ক’কে সপরিবারে হত্যা করলো স্বাধীন দেশের সুবিধাভোগী ষড়যন্ত্রকারীরা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জাতির পিতাকে আটকে রেখেছিল কিন্তু হত্যা করতে পারে নি। অথচ যে দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার, স্বাধীনতার জন্য তিনি আন্দোলন সংগ্রাম করে জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় কারাবরণ করেছিলেন, সেই দেশেই উনাকে নৃশংস হত্যার শিকার হতে হলো। ওরা ভেবেছিল জাতির পিতাকে হত্যা করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-কে হত্যা করতে পারবে। বাংলাদেশ যতোদিন আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ততোদিন টিকে থাকবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তরুণ প্রজন্ম, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-কে বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
‘একটি স্বপ্নের অকাল মৃত্যু’
—সৈয়দ সিয়াম আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ
ইতিহাসের জঘন্যতম এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাতে। এদিন গোটা বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছিলো সেনাবাহিনীর উচ্ছৃঙ্খল কিছু বিপথগামী সদস্য। সেদিন রাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে ঘাতকের নির্মম বুলেট বিদ্ধ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুক। সে দিন ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মোট ২৬ জন। ১৫ই আগস্ট বাংলার অন্ধকার আকাশে হিংস্র শকুনের থাবায় একটি স্বপ্নের অকাল মৃত্যু ঘটে। শহীদ হন বাংলার বীর সন্তান। ১৫ আগস্ট বাঙালির ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।
‘শুধু শোক নয়, শোকের মাস হোক নতুন উদ্যোমের’
—স্মিতা জান্নাত, প্রকল্প সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ
শোক তো শুধু চোখের পানি না, অন্তরের গভীরতম স্থান থেকে আসে এই ক্রন্দন। মুক্তিযুদ্ধ যেমন দেশের গর্ব তেমনি প্রতিটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্যই সেটা শোকের অপর নাম। আর জাতির পিতার মৃত্যু তো পুরো জাতির বুকে এক দগদগে ঘা। আগষ্ট মাস মানেই শোকের মাস, যে মাসে জাতি হারিয়েছে জাতির পিতাকে।
নয় মাস যুদ্ধ করে, লাখো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তা যেন এক নিমেষেই ভাটা পরে গেল জাতির পিতার মৃত্যুতে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এটা আরও বড় শোকাবহ ছিল। ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেলেও হারিয়ে ফেললাম আমাদের অঙ্গীকার। শোক আমাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য অনেক বেদনাদায়ক। তবুও জীবন চলছে এবং চলবে। আমাদেরকে জাতির কল্যাণে দেশের কল্যাণে নিজেদেরকে সচেষ্ট রাখতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে নতুন উদ্যোমে।
‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চির প্রবাহমান’
—গাজী নাকিউল্লাহ, অর্থ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ
যে বজ্রকণ্ঠ কোটি কোটি বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছিল, আন্দোলিত করেছিল, সেই মহামানবকে রাতের আন্ধকারে আঁততায়ীরা হত্যা করল নৃশংসভাবে সপরিবারে। পৃথিবীর আর কোন দেশের মানচিত্রের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি ইতিহাসের এমন নিকৃষ্ট কঠিন বোঝা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সকল দুরভিসন্ধির সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ও পাকিস্তানি চক্র এবং তাদের এদেশীয় দালালদের গোপন আতাতের কথা আজ দেশের মানুষের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যার উদ্যেশ্য ছিলো বাঙ্গালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাংলাদেশের নাম চিরতরে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া। কিন্তু তাদের সেই ধারনা বাস্তবরুপ লাভ করেনি। সূর্য অস্তমিত হলে তার উপর জোনাকীরা জ্বলে কিন্তু জোনাকীরা কখনোই সূর্যের বিকল্প হতে পারে না। বাঙ্গালীর মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব তার চেতনা অবিনশ্বর। মুজিব আদর্শের শানিত বাংলার আকাশ বাতাস জল সমতল। যতদিন মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের প্রজন্ম এই বাংলার মাটিতে থাকবে ততোদিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশ্বী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে।
‘এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়’
—সাকিব মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ।
উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় দিপ্তমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও যেন শোকে কাতর হয়ে পড়েছিলো। আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেড়া অশ্রুর প্লাবনে। সুবহে সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকেরা যখন ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরেছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত । ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের মুখে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকের আকস্মিকতায়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু এই জাতির জন্য এমন এক ক্ষতি যা কখনো পূরণ হবার নয়।
‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হোক’
—মোঃ নাইম খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ
আজকের এই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করা এই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চায়, বঙ্গবন্ধুর চাওয়া সোনার বাংলার মধ্য দিয়ে। মৃত্যুঞ্জয়ী এই নেতার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, মানুষের সেবা করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর-উন্নত অর্থনীতির সোনার বাংলা গঠন করা। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনা করা যায় না। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের মাঝে শেখ মুজিবের আদর্শকে চাপা দিয়ে রাখার সব আযোজন ব্যর্থ হোক।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় শোক দিবস পাঁচমিশেল ফিচার বঙ্গবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাবনায় শোক দিবস