Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্ষকের ফাঁসি বনাম ধর্ষকের মানবাধিকার


২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১২:১৪

ভারতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির বিধান রেখে আইন পাশের জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্য সরকারগুলো এ সংন্ত্রান্ত বিল পাশ করেছে। শিশু ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির এই বিধান নিয়ে বিপরীতমুখীে আলোচনাও শুরু হয়েছে জোরেশোরে। বিশেষ করে তসলিমা নাসরিনের মতো নারীবাদি যখন ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে এবং ধর্ষকের মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তখন ধর্ষণের মহামারীতে বিপর্যস্ত সমাজ মানতে পারছে না স্বাভাবিক কারনেই। যদিও তসলিমা নাসরিন এমনটা বলেননি বলে জানিয়েছেন তার ফেসবুকে।

বিজ্ঞাপন

মানবাধিকারের ধারণা মৃত্যদণ্ড সমর্থন করে না। অপরাধীকে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দিতে চায়। এই চাওয়াটা মহৎ এবং অযৌক্তিকও নয়। কিন্তু তবুও কিছু কিছু মানুষ, যাদের কর্মকাণ্ড মানুষের মতো নয়, যাদের মানুষ ভাবতে আমাদের কুণ্ঠা হয়, তাদের মানবাধিকার নিয়ে ভাবতে আমাদের সাধারণ মন সায় দেয় না। অবশ্য মানুষের মত বলতেই বা কি বোঝায় সেটাও ঠিক পরিস্কার নয়। জীবজগতে মানুষের মতো বিকৃত, হিংস্র, কদর্য আর নিষ্ঠুর প্রাণি পাওয়া দুষ্কর।

বিজ্ঞাপন

আবার মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে, এমন আশা করাও বোকামী। পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের ভাঁজে ভাঁজে যে অন্যায় করার মানসিকতা ও সুযোগ এবং ব্যক্তির মননে যে ধর্ষকামীতার রোগ যুগ যুগ ধরে বাসা বেঁধে আছে, তার নিরাময় না হলে হাজার বিচারেও কোন লাভ হবে না। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও কম গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়। কম গুরুত্ত্বপূর্ণ নয় আইনের কঠোর বিধান ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

কোন জাতির মানস গঠণ, পরিবর্তন, পরিমার্জন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। শাস্তির ভয় যদি না থাকে, বিচারের নিশ্চয়তা যদি না থাকে, কঠিন দৃষ্টান্ত যদি স্থাপন করা না যায়, তবে যতদিনে এই সমাজ বদলাবে ততদিনে আমাদের শিশুরা উপর্যুপরি ধর্ষিত হতেই থাকবে। কন্যা সন্তান জন্মানোমাত্র আমরা অজানা শংকায় আতঙ্কিত হতেই থাকবো। আমাদের এর থেকে পরিত্রাণ দরকার।

আমরা তো যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতেও রাস্তায় নেমেছিলাম। তাদের বিনা বিচারে না মেরে সঠিক প্রক্রিয়ায় বিচার করে, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে, বিচারের অধিকার নিশ্চিত করে তবেই শাস্তি নিশ্চিত করেছিলাম। তবে ধর্ষকের বেলায় নয় কেন?

ধর্ষণের সঠিক তদন্ত হোক। ধর্ষককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হোক। একটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড হোক। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুরুষের মন ও মস্তিষ্কের রোগ সারানোর কাজ চলুক। পুরুষকেই তার এই সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। একমাত্র পুরুষ চাইলেই ধর্ষণের এই মহামারীর অবসান হবে, নইলে কখনো হবে না।

পুরুষের শুভ বোধের উদয় হোক।

 

সারাবাংলা/এসএস

 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর