Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একাত্তরে যার বাসা ছিল মুক্তিসেনার গোলা-বারুদের দূর্গ

রাতিন রহমান
৩০ আগস্ট ২০২২ ১৯:৩২

পাকিস্তান রাষ্ট্র হবার পর প্রথম আঘাতটা এসেছিল আমাদের ভাষার ওপর। ছোট্টবেলায় মায়ের মুখে শুনতে শুনতে যে মিষ্টিমধুর ভাষায় কথা বলতে শিখেছি আমরা, মাথামোটা পাকিস্তানিগুলো সেই বাংলা ভাষাকেই স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল, চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল উর্দু। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত অকাতরে রাজপথে ঢেলে রক্ষা করেছিল মায়ের ভাষার অধিকার, জন্মেছিল সেই বিখ্যাত চরণ, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ পরম যত্নে গভীর বিষাদমাখা সুরের বাঁধনে বেঁধেছিলেন যিনি কথাগুলোকে, সৃষ্টি হয়েছিল এক অমর সঙ্গীতের। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটায় খুব ভোরে উঠে প্রভাতফেরির সাথে হাঁটতে হাঁটতে শহীদমিনার যেতেন, ঠোঁটের হারমোনিকায় বাজতো সেই কালজয়ী সুর… তিনিই ছিলেন আলতাফ মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন
আলতাফ মাহমুদ

আলতাফ মাহমুদ

মগবাজারে ৩৭০ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় থাকতেন আলতাফ মাহমুদ। দুই নম্বর সেক্টর গঠিত হলে তার বাসাটা পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম তীর্থে, অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, তাদের থাকা-খাওয়া, তাদের মেলাঘরের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া, আলতাফ মাহমুদ সবই করতেন। খালেদ মোশাররফের নির্দেশে শাহাদাৎ চৌধুরী প্রায়ই আসতেন তার কাছে, স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্রের গান রেকর্ড করে তার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন আলতাফ। একদিন ক্র্যাক প্লাটুনের কয়েকজন এসে বললেন, ঢাকায় প্রচুর পরিমানে আর্মস আনতে হবে, রাখার জায়গা নাই। তার বাসায় রাখতে হবে। আলতাফ বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না, তার বাসা পরিনত হল এক অস্ত্র-গোলাবারুদের বিশাল এক দুর্গে। এভাবে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আতংক হয়ে ওঠা ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম প্যাট্রোনাইজার হয়ে উঠলেন তিনি, জানতেন মাথার উপর মৃত্যু ঝুলছে! কিন্তু তিনি ভয় পাননি, ভয় শব্দটা তার অভিধানে ছিল না।

বিজ্ঞাপন
আলতাফ মাহমুদ

আলতাফ মাহমুদ

৩০শে আগস্ট ভোরে যখন পাকিস্তানি সেনারা বাড়িতে ঢুকে গেল, চিৎকার করে বলতে লাগল, মিউজিক ডিরেক্টর কৌন হ্যায়, তখনো তিনি ভয় পাননি। নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে শির উঁচু করে বেরিয়ে এলেন বীর, ভোরের পবিত্র আলোয় তাকে যেন অপার্থিব লাগছিল, বুকটা টান টান করে জবাব দিলেন, আমিই আলতাফ মাহমুদ, কি চাও তোমরা?

— হাতিয়ার কিধার হ্যায়?

আলতাফ বুঝে গেলেন, ওরা সব জেনেই এসেছে। তার মাথায় একটাই ভাবনা ঘুরতে লাগলো, যেভাবেই হোক ক্র্যাক প্লাটুনের যোদ্ধারা (যারা তার বাসায় তখন ছিল), তার পরিবার-পরিজন সবাইকে বাঁচাতে হবে। বললেন, এসো আমার সাথে। পাকিগুলো তার হাতে কোদাল তুলে দিল, মাটি খুঁড়তে বললো। একটু দেরি হয়েছিল হয়তো, একজন রাইফেলের বাট দিয়ে সাথে সাথে মুখে মারলো, আরেকজন বেয়োনেট চার্জ করলো। একটা দাঁত ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল, কপালের চামড়া ফালাফালা হয়ে কেটে ঝুলতে লাগলো চোখের উপর। সবাইকেই মারতে মারতে গাড়িতে তুলেছিল, ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে চালিয়েছিল অকথ্য নির্যাতন। পৈশাচিকতার সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল ওরা, কিন্তু ক্র্যাক প্লাটুনের অন্য সবার মত আলতাফ মাহমুদের মুখ থেকেও একটা শব্দ বের করতে পারেনি। আলতাফ মাহমুদ আর ফিরে আসেননি, উন্নত মম শিরের সেই অসামান্য বীরের আর কখনো দেখা হয়নি তার ছোট্ট শাওনের মুখটা!

আলতাফ মাহমুদ

আলতাফ মাহমুদ

তথ্য কৃতজ্ঞতা:
১। ব্রেইভ অফ হার্ট: হাবিবুল আলম বীর প্রতীক
২। সুরের বরপুত্র আলতাফ মাহমুদ: দিনু বিল্লাহ

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আলতাফ মাহমুদ একাত্তরে যার বাসা ছিল মুক্তিসেনার গোলা-বারুদের দূর্গ ফিচার মুক্তিযুদ্ধ রাতিন রহমান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর