এশিয়া মহাদেশের ‘সর্ববৃহৎ বটবৃক্ষ’
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৩২
ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার সুইতলা মল্লিকপুর গ্রাম। অনেকের কাছে গ্রামটি বেথুলি নামেও পরিচিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের দূরত্ব। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এশিয়া মহাদেশের ‘সর্ববৃহৎ বটবৃক্ষ’। ১৯৮৪ সালে সর্ববৃহৎ তকমা জুড়ে দিয়েছে বিবিসি জরিপ। এর আগে তাদের জরিপে কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি বট গাছ এই মর্যাদার আসিনে ছিল।
বন বিভাগের তথ্য মতে, এশিয়া মহাদেশের প্রাচীন ও অন্যতম বৃহত্তম বটবৃক্ষ প্রায় ৩১৫ বছর আগে স্থানীয় কুমারের কুয়ার দেওয়ালে জন্মেছিল। মূল গাছটি মারা গেলেও এটি ৪৫ এটি ভিন্ন ভিন্ন গাছে প্রায় ২ দশমিক ০৮ একর জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। যার উচ্চতা প্রায় আড়াইশ থেকে ৩শথ ফুট। এর ৩৪৫টি বায়বীয় মূল মাটিতে প্রবেশ করেছে এবং ৩৮টি মূল ঝুলন্ত অবস্থায় বিদ্যমান। ২০০৯ সাল বন বিভাগ বটবৃক্ষটির ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
থানা পরিষদের কাঁচা পাকা সাপের মত সড়ক বটগাছের কোলে এসে থেমেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ পাহাড়। গাছের শাখা প্রশাখা কোথাও মাটির সাথে মিশেছে। পুরো গাছটি এক দৃষ্টিতে আনা অসম্ভব। স্মারক এ বটবৃক্ষটি ঘিরে রয়েছে নানা উপকথাও। কেউ কেউ মনে করেন, গাছটির বয়স অন্তত ৫০০ বছর। বেথুলি গ্রাম বহু আগে কুমার সম্প্রদায়ের বসতির জন্য বিখ্যাত ছিল। সেই সময় কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা পাতকুয়া ব্যবহার করতো, সেন বংশীয় কুমার পরিবারের কোনো একজনের পাত কুয়োর উপর একদিন একটি গাছ জন্মে। এত বছর আগে এখানে যে গাছটি জন্মে, ডালপালায় আভাস দেয় সেটি একটি বটগাছ।
বটগাছ শুধু বটগাছই নয়। আঁকাবাঁকা বিভিন্ন আকৃত্তির ডালপালা, বসার জন্য জায়গা, গোল ঘর, পাখির কলতান, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা এর সৌন্দর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। চারপাশে বটগাছ, ছায়াঘেরা শীতল হাওয়া যে কারো মনে অন্যরকম প্রশান্তি জোগাবে। জার্নি করে যাওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ বসলেই প্রশান্তির ঘুম চলে আসবে। ডানেবামে সামনে পেছনে যেদিকে তাকাবেন শুধুই বটগাছ। গাছটির প্রাকৃতিক কারুকার্যে যে কেউ বিমোহিত হতে বাধ্য। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের ক্লিকে ক্লিকে তৈরি হয় অন্যরকম এক ফটো অ্যালবাম।
জায়গাটির ঠিক মাঝ বরাবর একটি কালী বেদিও রয়েছে। যেখানে সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রতি বছর পূজা-অর্চনা করে থাকেন। গাছটিকে ঘিরে বিভিন্ন মজার গল্প শোনা যায়। কথিত আছে, একবার গাছ কাটতে গিয়ে কুদরত উল্লাহ নামের একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। কুদরত উল্লাহর স্ত্রী গাছ ধরে কান্নাকাটি করে স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনেন। প্রচলিত এই কথার জের ধরে মনের আশা পূরণের জন্যে অনেকে গাছের শাখা জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
বিখ্যাত বটের মূল গাছটি মারা গেছে। এলাকায় বেলায়েত মিঞা সেখানে একটি বটের চারা রোপন করেছেন। চারাটি এখন তরুণ অন্য ঝুড়িগুলো তাকে জায়গা করে দিয়েছে। মূল গাছটির অনেক ঝুরি বেড়ে উঠেছে। ঝুরিগুলো শেকড় মেলেছে। তারাও সবুজ হয়েছে বেশ। দেখে মনে হবে শত শত বটবৃক্ষ। তবে অযন্ত আর অবহেলার কারণে কিছু ঝুরি পোকায় নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক ডালপালাও ভেঙ্গে পরেছে। ঝড়ে উপড়ে গেছে অনেক ঝুরির শেকড়। এরই মধ্যে বেশ কয়টি ঝুরির গাছ পৃথক হয়ে গেছে। ফলে গাছটি এখন আর এক নেই।
দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের দাবি, গাছটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। নাহলে একটা সময় এসে বিলীন হয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষ মনে করলে এটিকে বিনোদনকেন্দ্রে রূপান্তর করতে পারে। এতে যেমন করে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক জোগাবে তেমনি স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করলে পর্যটক আরো বাড়বে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
আজাহারুল ইসলাম এশিয়া মহাদেশের ‘সর্ববৃহৎ বটবৃক্ষ' পাঁচমিশেল ফিচার সর্ববৃহৎ বটবৃক্ষ