স্বপ্নময় যাত্রায় নবীনদের ভাবনা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:০৯
সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নবীনদের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসগুলো। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও আগমন ঘটেছে নবীন শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাস জুড়ে দেখা যায় একঝাঁক প্রাণবন্ত চঞ্চল মুখ। অনেকেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে গর্বিত মনে করছেন নিজেকে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পদার্পণ করেছেন। নবীন শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে স্বপ্ন ছোঁয়ার অনুভূতি। প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে আসা কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে প্রবেশ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা নবযাত্রায় কি ভাবছেন তা তুলে ধরেছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া সুলতানা হিমি।
পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন
মাঈন উদ্দিন আহমেদ
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ
স্বপ্ন ঘেরা জীবনের পথচলা বেশ কঠিন। লক্ষ্য পূরণের জন্য চাই বিরামহীন লেগে থাকা। তবুও কারো কারো স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় স্রেফ ভাগ্যের নিষ্ঠুর যাঁতাকলের কারণে৷ চেষ্টা, পরিশ্রম, মেধা আর ভাগ্যের যখন আত্মিক বন্ধন ঘটে তখন একজন শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্ন উদ্ভাসিত হয়ে উঠে হাতের মুঠোয়৷ পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নিল স্বপ্ন। ‘এডমিশন টেস্ট’ নামক মহাযুদ্ধের পরে যখন সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়, তখন মনে হয় দীর্ঘ অমাবস্যার পরে আশ্চর্য এক পূর্ণিমার রাত।
আমার এডমিশন যাত্রা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। আমি আমার আগ্রহ ও সামর্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। নিজ মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করি না। আমার পরিবারও আমার আগ্রহকে প্রাধান্য দেয়। কোথাও চান্স হবে কী হবে না, এসব নিয়ে কখনও কোন বাড়তি চাপ ছিল না। নিজের আগ্রহ আর সামর্থ্য সম্পর্কে যখন স্পষ্ট ধারণা থাকে তখন মানসিক চাপ কমে যায়। যদিও আমার একাধিক জায়গায় চান্স হয়েছিল। কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই আমি আমার পছন্দ ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ভর্তি হই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমার পূর্ব পরিচিত জায়গা। আমার বড় দুই ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ক্যাম্পাসে প্রথম এসেছিলাম যখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। তারপর আরও কত আসা-যাওয়া। কিন্তু সেই যাতায়াতের কোন স্থায়ী পরিচয় ছিল না, ছিল না বিশেষ কোন অনুভূতি। ছাত্রত্বের অধিকার নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার প্রবেশ করে নিজেকে আবিষ্কার করি নতুন আঙ্গিকে। এই অনুভূতি শান্ত নদীর মতো নরম, ঝড়ের হাওয়ার মতো বেগবান আর হিজল ফুলের মতো সুন্দর।
ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের অন্যতম স্মরণীয় সময় কাটছে৷ নতুন পরিবেশ, নতুন অভিজ্ঞতা বিভিন্ন মননের মানুষ। এ যেন বাহারী ফুলের স্বর্গীয় বাগান। বিশেষ করে আমার ডিপার্টমেন্ট হলো সৃজনশীল শিক্ষার্থীদের আখড়া। সিনিয়ররা বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করছেন, ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম কত কী বানাচ্ছেন। ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ সহ নানা প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পাচ্ছে। যা আমার মতো নবীনদের জন্য স্বপ্ন ও সম্ভাবনার খোঁড়াক। সিনিয়ররা আমাদের প্রতি খুবই যত্নশীল এবং সহযোগিতা মনোভাব পূর্ণ। একেকজন শিক্ষক মমতায় ভরা উজ্জ্বল স্বপ্ন বাতি, যারা আমাদের পথ দেখাচ্ছেন কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। ইচ্ছে আছে তাঁদের মতো আমিও ফিল্ম বানাবো, দারুণ দারুণ কাজ করব এবং নিজের লেখনি দিয়ে ডিপার্টমেন্ট তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের অংশীদার হবো৷
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও বেছে নিয়েছি জবি
শামিলা তাবাসসুম সিঁথি
ইংরেজি ভাষা বিভাগ
স্বপ্নকে ঘিরেই মানুষের বেঁচে থাকা। স্বপ্ন ছাড়া জীবন ডানাবিহীন পাখি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর নতুন উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হয় এডমিশন জার্নি। সবাই যে উতরে যায় এমনটাও নয় অনেকেই ঝরে যায় গাইডলাইনের অভাবে। সেদিক থেকে আমি বোধহয় এগিয়ে। কঠোর অধ্যবসায় আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও আমি বেছে নিয়েছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ছোট থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্নের মতো আর তা যদি হয় জগন্নাথ তাহলে তো কথায় নেই। দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসের দিনও এগিয়ে এলো। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। সকালে তড়িঘড়ি উঠে পড়লাম অবশ্য মায়ের ডাকেই। সকালটা বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়েই শুরু হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সহপাঠী কেমন হবে সেটা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তো ছিলো। কলেজ জীবনে ছেড়ে আসা সব বন্ধুদের কথা মনে পড়ছিলো ভীষণ ভাবে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ঢুকেই মনের দুরু দুরু ভাবটা আর একটু বেড়ে গেলো। নতুন ক্যাম্পাস নতুন শহর নতুন পরিবেশে নিজেকে বেশ অসহায় লাগছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিন মায়ের হাত ধরে গিয়েছি। মাকে নতুন ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখেয়েছি। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ গান গাচ্ছে, কেউ পড়ছে কেউ বা গল্প করছে। দৃশ্যটা বেশ লেগেছিলো সেদিন। এরপরে কিছুটা পথ পেরোতেই দেখলাম স্কাউট সংঘের ছেলেমেয়েরা বসে আছে। পরিচয় দিয়ে নম্রতার সাথে জিজ্ঞাসা করাতেই তারা আমাকে দেখিয়ে দিলো ডিপার্টমেন্ট। বেশ নতুন উদ্বীপনা নিয়ে নতুন সহপাঠীদের সাথে পরিচয় হলো নতুন ম্যামের ক্লাস করলাম। প্রথমে অবশ্য ভয় করেছিলো কিন্তু পরে ভয়টা কেটে গেলো। সিনিয়ররা আমাদের প্রতি খুবই যত্মশীল এবং সহোযোগীতাপূর্ণ মনোভাবের।
ইচ্ছে আছে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেকে পররাষ্ট্র ক্যাডারে দেখা। তবে এটুকু বলতে পারি স্বপ্ন সারথী হিসেবে সে বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি তার মাধ্যমেই নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
পড়াশুনোর বাইরেও আলাদা জগৎ সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়
আহনাফ তাহমিদ শাফী
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় মানুষের জীবনের সেই অধ্যায় যেখান থেকে শুরু হয় নিজেকে পরিপূর্ণরূপে চেনা। কতো নির্ঘুম রাতের কথা মনে পড়ে যায় এই শব্দটি শুনলে। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কি শুধুই পরীক্ষা? আমার তা মনে হয় না। আমার কাছে এইটা এক যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে সংগ্রাম করে যারা সুযোগ পেয়েছে তারা সবাই যোদ্ধা। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ সেই জায়গা যেখান থেকে শুরু হয় এক নিজস্বতার, একাডেমিক পড়াশুনোর বাইরেও এক আলাদা জগৎ সৃষ্টি হয়, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে শেখায়। উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য যে বহুমাত্রিক প্লাটফর্ম প্রয়োজন তার প্রধান ভিত্তি হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২২ সালে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি, তখন থেকেই মনে মধ্যে উঁকি দিয়েছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আমি। এই পুরান-ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মাঝে একটি, খুব বড় না হলেও যে সম্মান এই বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে তা অবশ্যই গর্বের ব্যাপার। নবীন বরণ থেকে শুরু করে নিজের ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা সবকিছুই ভালো লাগার, ভালোবাসার। শান্তি, ঈমান, শৃঙ্খলা এই নীতিবাক্য ধারণ করে উচ্চশিক্ষার সেরা এই বিদ্যাপীঠ। আমি বারমুডা ট্রায়াংগেলে হারিয়ে যাইনি বরং নিজেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর মতো গভীর এবং মাউন্ট এভারেস্ট এর মতো সুবিশাল মনে হয় এখন।
নিজেকে নিয়ে মানুষের স্বপ্নের শেষ হয় না। কিন্তু শুধু সত্যিকারের মানুষ হতে গেলে অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম আর দক্ষতার প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় একটি মঞ্চ পাবার পড়েও সাফল্য ধরে রাখা নিজের কাছে। আমি স্বপ্ন দেখি এক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার। স্বপ্ন দেখি লাল সবুজের পতাকাটি উড়ছে গৌরবের সাথে একবিংশ শতাব্দীর সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে। যার মিলনক্ষেত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে, যেখানে সকলের থাকে নিজস্বতা তবুও সবার এক পরিচয়, শিক্ষার্থী। আমার পদযাত্রা শুরু হলো সত্যের পথে, দূর্নীতির বিরুদ্ধে ও অবহেলিত মানুষদের পক্ষে। যার সাহস আমাকে দিয়েছে আমার পরিচয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে। স্বপ্নময় এ নবযাত্রা সবে মাত্র শুরু কিন্তু এর চিহ্ন রয়ে যাবে সারাজীবন তা বলা বাহুল্য। কবি কাজী নজরুলের ভাষায়, ‘সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার জায়গা
মো. হাবিব উল্লাহ
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
একটি দেশ ও সমাজকে পরিচালিত করতে ও টিকিয়ে রাখতে বেশ কিছু শ্রেণী, পেশার মানুষকে অবদান রাখতে হয়। বুদ্ধি-বৃত্তিক শ্রেণীর অবদান সর্বাধিক। একটি জাতিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে পরিচালিত করে শিক্ষিত-সচেতন জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত ও সচেতন এ জনগোষ্ঠী তৈরিতে সবচেয়ে কার্যকর সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হলো বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি সমাজ বা জাতি কতটা উন্নত বা সচেতন তা নির্ভর করে ঐসকল দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ওপর। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ তথা বৈশ্বিক মানের এ জ্ঞানগৃহ আমাদেরকে বিশ্ব নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈশ্বিক নাগরিক হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ যুবক। তদুপরি এর বৃহদাংশ দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা যায় যে আমরা এখনো আমাদের এ শক্তিশালী অংশটিকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে পারিনি। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। যার জন্য নির্দিষ্ট প্লাটফর্মের প্রয়োজন। এক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা প্রদান করে ক্ষান্ত হয় না, বরং জাতির সবচেয়ে কার্যকর ও শক্তিশালী এ অংশটিকে অর্থাৎ যুব সমাজকে জনসম্পদ ও বিশ্ব নাগরিক তৈরিতে সহায়তা করে।
সফল ব্যক্তিদের কীর্তিগাঁথা সর্বদাই আমাদের পুলকিত করে, ভবিষ্যৎ চলার পথে সঠিক নির্দেশনা প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক সফল মানুষ আমাদেরকে সঠিক পথ প্রাপ্তিকে তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হই।
বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। তাদের বিচিত্র জীবন সংগ্রামের গল্প এবং সামগ্রিক অবস্থা আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলতে সহায়তা করে। দেশ ও জাতির তরে কিছু করতে প্রেরণা যোগায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তচিন্তার পরিবেশ আমাদেরকে দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবতে শেখায়। দেশমাতৃকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার প্রেরণা যোগায়। ২০২৩ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হওয়ার পর থেকে তাই, অবিরত স্বপ্ন দেখতে থাকি দেশমাতৃকার একান্ত বাধ্যগত সন্তান হয়ে থাকতে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের নিমিত্তে এটি আমার মতো শিক্ষার্থীর একান্তই মনের ভাবনা। তাই, পদযাত্রা শুরু করেছি স্বপ্নময় এ নবযাত্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সহজেই সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্ব হয়
শাওলী ইসলাম
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
ছোট পরিসরের জীবনের পরিধি মাপতে মাপতে কখন যে সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের দাঁড়প্রান্তে এসে পৌঁছেছি, ভেবে দেখার অবকাশও পাইনি যেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার সাথে সাথে সবার মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে ঘিরে। প্রত্যেকটা প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গন নিজেকে নতুন করে জানার অঙ্গন।
করোনাকালীন সময়ে কলেজ জীবনের কিছুই পেলাম না, ভার্চুয়াল ক্লাস আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চে বসে ক্লাস করার মধ্যকার পার্থক্য ওই সময়েই প্রথম বুঝতে পারলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর সাথে সাথেই যেন সশরীরে ক্লাস করার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ধরা দিল। বিশ্ববিদ্যালয় যে কেবল স্নাতক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না, সেটা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু না হলে হয়তো প্রত্যক্ষভাবে জানার সুযোগ হতো না। এটা নিজেকে জানার, অভিযোজিত হওয়ার, নিজে বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং তালমিলিয়ে চলার জায়গা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিন থেকেই বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে পরিচিত হই। খুব সহজেই সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে হয়, ক্লাস শেষে একসাথে বসে নানা গল্প, আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মুখরিত করে দেওয়া এমন আরও কয়েকশত সুখের স্মৃতি আছে, আরও হাজারও স্মৃতি তৈরি করা বাকি। অনেকটা পথ চলা বাকি। ভালো মানুষ হওয়ার এবং দেশের সেবা করার যে ব্রত নিয়ে শিক্ষাজীবনের সূচনা করেছিলাম, তা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে পূর্নতা পাক। চলার পথ সুগম হোক সকল সহপাঠী বন্ধুদের ও যাতে পরবর্তীতে সবাই সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারি, এটাই প্রত্যাশা।
‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটা নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ
তারজিনা আক্তার
রসায়ন বিভাগ
কলেজে পড়াকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখা বাস গুলোতে বড় ভাই ও আপুদের দেখে ভাবতাম ওই বাস গুলোতে বসে তারা ঠিক কেমন অনুভব করছেন? আর এখন নিজেই প্রতিনিয়ত সেই অনুভুতি গুলো লালন করছি। সব যানবাহন গুলোকে পেছনে ফেলে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা আমার বাসটি যখন নির্বিঘ্নে ছুটে চলে, তখন নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে হয়।
‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটা নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই শব্দকে ব্যক্ত করতে হাজারটা নতুন শব্দ লিখলেও যথেষ্ট হবেনা।তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন বুনে। কেউ সফল হয় আর কেউ হেরে যায়।
বড় ভাই-আপুদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিখেছি কিভাবে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। যা আমাকে সমাজের একজন যোগ্য নাগরিক হয়ে উঠতে সাহাজ্য করবে। শিক্ষকরা যখন ক্লাস নেন তাদেরকে মুগ্ধচোখে দেখি আর অনেক অনুপ্রাণিত হই। প্রতিনিয়ত তাদের কাছে শিখেছি কিভাবে নিজের ক্যারিয়ার সফলভাবে গড়ে তুলে যায়। তারা সবাই যথেষ্ট আন্তরিক। আমার ইচ্ছে মন দিয়ে পড়াশোনা করে তাদের সবার মতো উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করবো এবং একজন দক্ষ ক্যামিস্ট হয়ে একদিন আমার দেশ, আমার জাতি, আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমার পরিবারকে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করবো।
আমি চাই আমার মা-বাবার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করতে আর আমার সকল স্বপ্ন পূরনের গুরুত্বপূর্ণ পথ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যেটা আমাকে একটা নিজস্ব পরিচয় দিয়েছে।এটাই এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তাই বলতে ইচ্ছা করে, ‘স্বপ্নেঘেরা এই স্থানটিতে ঠাই পেয়েছি আমি। এই ক্যাম্পাস আমার কাছে সবকিছু থেকে দামি।’
সারাবাংলা/এজেডএস